April 20, 2024

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে: গবেষণার নতুন তথ্য

Reading Time: 3 minutes

শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি, নিউক্র্যাড হেলথ এর প্রতিবেদন, ২২ অক্টোবর , ২০২০

অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিনের নাম অনেকেই শুনেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধের চিকিৎসায় অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যবহার চলে আসছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গবেষণায় অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধক্ষমতার কথাও প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ এই ড্রাগ একাধারে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিভাইরাল হিসাবে কাজ করে। বিশেষ করে, ইবোলা, জিকাভাইরাস, রাইনোভাইরাস, এন্টেরোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের প্রচলন আছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের শারীরিক প্রদাহ (Inflammation) কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এই দুই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যে অ্যাজিথ্রোমাইসিন সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র অ্যাজিথ্রোমাইসিন নয়, নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমদিকে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের সাথে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও ব্যবহার করা হচ্ছিলো। সেইখানেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। চিকিৎসকরা দেখেছেন, একসাথে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের সাথে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও ব্যবহার করায়, করোনা রোগীদের দেখা দিচ্ছে হৃদরোগের সমস্যা। যে কারণে, আমেরিকায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার করোনা চিকিৎসায় বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। আরো চিন্তার বিষয় হলো, শুধু হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নয়, বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত আরো অনেক সাধারণ ওষুধের সাথে অ্যাজিথ্রোমাইসিন রোগীকে দেওয়া হলেও অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন, বুক ধড়ফড় এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হতে পারে! বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু, কেনই বা ঘটছে এমন ঘটনা? এর পিছনে কি কি বৈজ্ঞানিক সত্য লুকিয়ে আছে? জেনে নেওয়া যাক সেই বিষয়গুলি।

নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে আসছে নিউক্র্যাড হেলথ হাব – বাংলায় এক নতুন স্টার্ট আপ ,
এক বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে।নিউক্র্যাড হেলথ হাব এর এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ প্রোগ্রাম এ কোনো পুঁজি না লাগিয়ে অংশ গ্রহণ করতে অথবা জানতে হোয়াট’স আপ করুন +19175663401

অ্যাজিথ্রোমাইসিন এবং কিউটি ইন্টারভ্যাল প্রলংগেশান” (Q-T Interval Prolongation):

আমাদের হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলির পর্যায়ক্রমিক সংকোচন, প্রসারনের ফলে সারা শরীরে রক্ত সংবাহিত হয়। এর জন্যে হৃদপেশীতে তৈরী হওয়া বৈদ্যুতিক সংকেত প্রধান ভূমিকা নেয়। এই সংকেত তৈরী হওয়ার ফলে হৃদপেশী ক্রমাগত স্পন্দিত হতে থাকে। চিকিৎসকরা হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক সংকেতগুলিকে ইকো কার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি করে দেখে নিতে পারেন।

সাধারণ ভাবে, ইসিজিতে মোট পাঁচটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ধরা পড়ে, যেমন-P, Q, R, S, এবং T। Q তরঙ্গ থেকে T পর্যন্ত বৈদ্যুতিক সংকেত হৃদপিণ্ডের নিচের দুটি প্রকোষ্ঠের (নিলয়) সংকোচন ও প্রসারণের জন্যে দায়ী। এই সময়ে নিলয়দুটি সংকুচিত হয়ে রক্তবাহে রক্ত ছড়িয়ে দেয় এবং পুনরায় প্রসারিত হয়ে প্রকোষ্ঠে রক্ত ভর্তি করে। এই Q তরঙ্গ থেকে T পর্যন্ত সময়কে বলে Q-T ইন্টারভ্যাল। অনেক কারণে, Q তরঙ্গ থেকে T পর্যন্ত সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে, এতে ইসিজির T তরঙ্গের প্রকৃতি পাল্টে যায়। এই অস্বাভাবিক দীর্ঘ Q-T ইন্টারভ্যালকে বলে Q-T ইন্টারভ্যাল প্রলংগেশান। এই ঘটনায় অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন, বুক ধড়ফড় ও হৃদপিণ্ডের নানা জটিলতা তৈরী হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছু ড্রাগের প্রভাবে, Q-T ইন্টারভ্যাল প্রলংগেশান দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের নাম অনেক বিজ্ঞানী বলে থাকেন, কিন্তু তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। অবশ্য, ২০১২ সালে, হৃদপিণ্ডের উপর এই অ্যান্টিবায়োটিকের কিছু বিরূপ প্রভাব দেখে FDA অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহারে সতর্কবার্তা জারি করে।

ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনোয়িস শিকাগোর গবেষক ডঃ হরিদর্শন প্যাটেলের গবেষণা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের প্রভাব সম্পর্কে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করে। ডঃ প্যাটেল দেখেছেন, শুধুমাত্র অ্যাজিথ্রোমাইসিন একাই Q-T ইন্টারভ্যাল প্রলংগেশানের জন্যে দায়ী নয়, যখন অ্যাজিথ্রোমাইসিন অন্যান্য ড্রাগের সাথে কম্বিনেশনে ব্যবহৃত হয় (যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ACE ইনহিবিটর, বিটা ব্লকার, ক্লোরোকুইন, হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ ইত্যাদি) তখন সেটি সুস্পষ্ট Q-T ইন্টারভ্যাল প্রলংগেশান দেখায়। সেই ক্ষেত্রে রোগীর হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৪০%। গবেষদের এই আবিষ্কার “দ্য জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিওশান (JAMA)” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

বস্তুতঃ বৈজ্ঞানিকদের এই গবেষণা, কোভিড-১৯ ছাড়াও বিভিন্ন রোগে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ব্যবহার কতোটা নিরাপদ ও ঝুঁকিবিহীন তা নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বিশেষ ভাবে ম্যালেরিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক ও স্নায়বিক অসুখে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের প্ৰয়োগ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করা উচিত বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন [email protected]

 তথ্য সুত্রঃ

  1. Patel H, Calip GS, DiDomenico RJ, Schumock GT, Suda KJ, Lee TA. Comparison of Cardiac Events Associated With Azithromycin vs Amoxicillin. JAMA Netw Open. 2020 Sep 1;3(9):e2016864. doi: 10.1001/jamanetworkopen.2020.16864. PMID: 32930780.
  2. Hancox JC, Hasnain M, Vieweg WV, Crouse EL, Baranchuk A. Azithromycin, cardiovascular risks, QTc interval prolongation, torsade de pointes, and regulatory issues: A narrative review based on the study of case reports. Ther Adv Infect Dis. 2013;1(5):155-165. doi:10.1177/2049936113501816
  3. Gautret P, Lagier JC, Parola P, et al. Hydroxychloroquine and azithromycin as a treatment of COVID-19: results of an open-label non-randomized clinical trial. Int J Antimicrob Agents. 2020;56(1):105949. doi:10.1016/j.ijantimicag.2020.105949
  4. Parra-Lara LG, Martínez-Arboleda JJ, Rosso F. Azithromycin and SARS-CoV-2 infection: Where we are now and where we are going. J Glob Antimicrob Resist. 2020;22:680-684. doi:10.1016/j.jgar.2020.06.016
  5. Sultana J, Cutroneo PM, Crisafulli S, Puglisi G, Caramori G, Trifirò G. Azithromycin in COVID-19 Patients: Pharmacological Mechanism, Clinical Evidence and Prescribing Guidelines. Drug Saf. 2020;43(8):691-698. doi:10.1007/s40264-020-00976-7
You may subscribe our YouTube channel