“ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং উইক” : ১-৭ আগষ্ট।
ডাঃ স্বাতী প্রামাণিক, সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, বিধাননগর
ভূমিকা করছি না, সরাসরি বিষয়ে আসি…
আমরা যারা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি জানি এবারকার, মানে 2020 সালের থিম হল “Support breastfeeding for healthier planet”.
এই থিমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে WHO এবং UNICEF প্রতিটি দেশের সরকারকে, কয়েকটা বিষয়ে, যেমন- মায়েরা যাতে সঠিক নিয়মে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন তার কাউন্সেলিং বা সুপরামর্শের যথাযথ প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দিতে বলছেন ।
কাউন্সেলিং কথাটার ব্যাপ্তি অনেক খানি, নির্ভর করে ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপরেও। তবু আমাদের চেষ্টা থাকে প্রয়োজনীয় মেসেজ বা বক্তব্য যেন সমান ভাবে সবার মধ্যে পৌঁছয়, এই প্রেক্ষিতে আমাদের একটা প্রচেষ্টা ছবি আর সহজ কথার বাঁধনে, প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের নিরাপদ মাতৃত্বের সাহস যোগাতে একটা চটি বই “আমি মা হতে চলেছি “।
গর্ভবতী মায়েরা যখন আমাদের কাছে আসেন চেক আপের জন্য তার রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম, তার টীকাকরণ এবং পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় পরামর্শ মা-র কাছে সহজ কথায় পৌঁছে দেওয়া হয় এই বইটার মাধ্যমে।
ভারতবর্ষের মত দেশে বুকের দুধ খাওয়ানোর রেয়াজ আমাদের সংস্কৃতির সমৃদ্ধিকেই চিহ্নিত করে। তবু, এখনও মাত্র ৪০ শতাংশ মা, শিশু জন্মানোর এক ঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করেন। আর ৫৫ শতাংশ শিশু এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং পায়। তাই সঠিক কিছু নিয়ম, নিয়ম মাফিক মা কে বলা আবশ্যিক।
সাধারণভাবে, এ. এন. এম দিদিরা এন্টিনেটাল চেক আপের সময় গর্ভবতী মাকে ব্রেস্টফিডিং এর উপযোগীতা এবং উপকারিতা সমন্ধে জানান দেন।
ব্রেস্টফিডিং নিয়ে বলতে গেলে, যে কথাগুলো না বললেই নয় —
১। শিশুকে জন্মের পর পরই বুকের দুধ খাওয়ান।
২। জন্মের পর প্রথম বুকের দুধ ( কোলস্ট্রাম) শিশুর পক্ষে একান্ত দরকারী।
৩। শিশুর জন্মের পর প্রথম ছ-মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ দিন, যাতে শিশুকে ডায়রিয়া ও সর্দিকাশি থেকে মুক্ত রাখা যায় ।
৪। শিশুর চাহিদা মত দিনে ও রাতে স্তন্যপান করান।
হাসপাতালে থাকাকালীন ইন্ডোর সিস্টাররা মা-কে হাতেকলমে শেখান ব্রেস্টফিডিং পজিশন।
যে কথাটা দিয়ে শুরু করেছিলাম… কাউন্সেলিং… মাকে ও তার পরিবারকে শিক্ষিত করতে হবে ব্রেস্টফিডিং নিয়ে , একশটি নবজাতকের মধ্যে যে ষাটটি শিশুর সত্বর স্তন্যপান শুরু হলনা, মাকে বোঝাতে হবে স্বাস্থ্যের নিরিখে তারা বাকি চল্লিশ জনের থেকে পিছিয়ে রইল…. আর ১০০ জনের মধ্যে যে ৪৫ জন প্রথম ছ-মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং পেলনা, তাদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশ , রোগ ব্যাধি যোঝার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। এইখানেই কাউন্সেলিং এর জয়… প্রতিটা মা কে মানসিক ভাবে তৈরী করতে হবে যাতে সত্বর বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করেন।মায়ের বুকের সে অমৃত এগিয়ে নিয়ে যাবে প্রতিটি শিশুকে, সুস্থ হবে নতুন প্রজন্ম, সবল হবে পৃথিবী…