পেপার কীট এবং স্মার্ট ফোন দিয়ে দুধের নবীনতা শনাক্তকরণ: ভারতীয় বিজ্ঞানীদের নতুন আবিস্কার
কলমে : সুভাষ বিশ্বাস
ছোটোবেলা থেকেই আমরা মায়েদের কাছে, একটা কথা প্রায় সকলেই শুনে অভ্যস্থ; দুধ খেলে শক্তি বাড়ে। তাই, সদ্যজাত শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ সকলের কাছেই “দুধ” শক্তি বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় প্রোটিন জাতীয় সুষম খাদ্য। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি, দুধ যখন খাওয়া হয়, তখন সেটি কতটা নিরাপদ! হ্যাঁ, বিশেষঞ্জদের মতানুসারে, দুধ পানের সময়, সেই দুধের নিরাপত্তাবিধি খতিয়ে দেখা গ্রহণকারীর প্রাথমিক কর্তব্য। কারণ, দুধের মধ্যে থাকা উৎসেচক ও উদ্ভিজ্জাণু ক্ষতিশালী ক্রিয়া-প্রবণ। যদিও পাস্তুরাইজেশান, ফ্রিজিং এইসব পদ্ধতির মাধ্যমে দুধের পচন প্রতিরোধ করা হয়। পানীয় দুধটি ঠিক কতটা টাটকা, নাকি সেটা বাসী এসব খতিয়ে দেখা মোটেও সহজ পদ্ধতি নয়, দুগ্ধশালা বা কারখানায় যা অনেকখানি সময় ব্যয় বহুল পদ্ধতিতে স্পেকট্রোফটোমিটার দ্বারা করা হয়। এই সময় ব্যয় বহুল জটিল ক্রিয়ার সহজ সমাধান বার করলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউড্ অফ্ টেকনোলজির বিঞ্জানীরা। তাদের আবিস্কৃত একটি “পেপার কীট” যা থেকে নিমেষের মধ্যে খুব সহজেই বোঝা যাবে দুধের নবীনতা এবং প্রকাশ পাওয়া যাবে কত ভালো ভাবে সেটিকে পাস্তুরাইজেশান করা হয়েছে।
অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজ্ দুধের গুণ শনাক্তকারী একটি উৎসেচক, যা দুধের মধ্যেকার জীবাণুর জানান দেয়, যারা পাস্তুরাইজেশানে ফলে নিষ্ক্রিয়। গবেষকেরা সাধারণ ফ্লিটার পেপারকে শনাক্তকরণের উপযোগী করে তোলেন। প্রথমে, ফ্লিটার পেপারটিকে ছোটো চাকতিতে বিভক্ত করে নেওয়া হয়। তারপর সংপৃক্ত করা হয় রাসায়নিক প্রোব দ্বারা যা অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজের সাথে ক্রিয়াশীল। প্রোবগুলি অ্যান্টিবডি আকারে, অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজের সাথে যুক্ত হয় এবং সাদা রঙের ফ্লিটার পেপারের চাকতিকে রঙিনে পরিণত করে।
গবেষণা নেতৃত্বাধীন ড: প্রাঞ্জল চন্দ্র বলেন, ” প্রথমে পেপার চাকতিগুলি 4-কার্বস্কিবেঞ্জিন ডায়াজোনিয়াম দ্রবণে সিক্ত করা হয়। তারপর, ডায়াজোনিয়ামের COOH গ্রুপ রাসায়নিক ক্রিয়ায় অনাবৃত করা হয়। অনাবৃত COOH গ্রুপ গিয়ে যুক্ত হয় অ্যান্টি-অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজের NH2 গ্রুপের সাথে। এইভাবে অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজ পেপারে চালিত হয়। দুধের একটি ফোটা ঐ ছোট্টো পেপারের চাকতিতে ফেললে, দুধের মধ্যে থাকা অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজ প্রোবের সাথে বিক্রিয়া করে রঙ পরিবর্তন করে। এটাকেই স্মার্ট ফোনের ক্যামেরাবন্দি করা হয়, সেটির অনুরূপ মান পাওয়ার জন্য। এই মানটিকেই ফোনে সঞ্চিত থাকা অন্য মানগুলির সাথে তুলনা করা হয়। ফলে দুধের মধ্যে অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজের বর্তমান থাকার সাথে, তার পরিমাণটাও মাপা যায়। “
বিভিন্ন গ্রামের থেকে নমুনা নিয়ে এবং দুধের সাথে অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজ মিশিয়েও গবেষণারত দল পরীক্ষা করেন “পেপার কীট”-র পরীক্ষার জন্য। তাদের মতানুসারে প্রায় ৯৪% পরীক্ষায় অ্যালকালাইন ফসফ্যাটেজ্ পাওয়া গেছে যার ফলেই ঘটছে রঙ পরিবর্তন। এবং দুধের মধ্যে এর উপস্থিতি ও পরিমাণও নির্ধারণ করা হয় স্মার্ট ফোন দ্বারা। তাদের তৈরি কীটের সাথে যুক্ত থাকে প্রোব চাকতি; একটি দুই সেমি. পুরু সেলুলোজ অ্যাসিটেটের ঝিল্লির উপর। প্রোবটি আবার পুনরায় ঢাকা থাকে আর একটি সেলুলোজ অ্যাসিটেট ঝিল্লি দ্বারা। রঙ পরিবর্তনীয় বিক্রিয়াটি ঘটে যখন দুধটি ঢাকার মধ্যে উদ্বুদ্ধ করা হয় একটি ছোট ছিদ্র মধ্য দিয়ে, এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে পাওয়া যায় তার ফল। ১৫ মিনিটের মধ্যে কাঁচা দুধ ও পাস্তুরাইজেশন ঘটানো দুধ শনাক্ত হয়ে যায়। কীটটি শীঘ্রই দুগ্ধশালাতেও ব্যবহার হবে বলেই আশা রাখেন সবাই। যদিও এর অন্য ব্যবহারও সম্ভব। ল্যাবরেটরিতে এর বর্তমান দাম কীট প্রতি ৮০-১২০ টাকা, যদিও জনগনের স্বার্থে তার দাম কমবে বলেই আশা রাখছে গবেষকগণ। “