এপ্রিল 26, 2024

জিন-থেরাপি পদ্ধতি ও HIV ভাইরাস ব্যবহার করে দশজনকে মারাত্মক ‘বাবল বয় ডিজিজ’ নিরাময় করে, অসাধ‍্য সাধন করলেন চিকিৎসকেরা

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

মেমফিসের, সেন্ট জুড চিলড্রেন রিসার্চ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সান ফ্রান্সিসকোর UCSF বেনিওফ শিশু হাসপাতালের ডাক্তাররা জিন থেরাপির ব্যবহার করে মারাত্মক ‘বাবল বয় ডিজিজের’ বা সিভিয়ার কম্বাইন্ড ইমিউনোডিফিশিয়েন্সি (SCID) এর নিরাময় করতে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা চিকিৎসার জন্য HIV (হিউম্যান ইমিউন ভাইরাস) চিকিৎসা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন।

বাবল বয় ডিজিজ হল একপ্রকার বিরল এক্স-লিঙ্ক জেনেটিক ডিসঅর্ডার। এক্ষেত্রে শিশুদের তাদের ইন্টারলেকুইন -2 রিসেপ্টর গামা সাবু ইউনিটের ,IL2RG জিনে পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটে। যদিও বিভিন্ন ধরনের SCID আছে, তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত এক্স-ক্রোমোজোমের থেকেই এই সমস্যা দেখা যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুব একটা বেশি না, কারন তাদের দেহে আরেকটি এক্স-ক্রোমোজোম দেখা যায়। তবে, তারা এই রোগের ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে।

‘বাবল বয় ডিজিজ’ কী?’

এটি একটি এমন গুরুতর অবস্থা যেখানে শিশুদের দেহের ইমিউন সিস্টেমটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে
তাদের খুব সহজেই ঠান্ডা লেগে যায় , নানান সংক্রমণের শিকার হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা যায় যে, 50000 জন্মগ্রহণকারী শিশুর মধ্য 1 জন শিশু এই রোগে আক্রান্ত। 2003 সালেও বিজ্ঞানীরা একবার প্রচেষ্টার এই রোগের চিকিৎসা করতে চেষ্টা করেছিলেন। তবে, তারা বুঝতে পেরেছিল যে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে এই চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য ক্যান্সার সৃষ্টি হচ্ছিল, তাই এই প্রক্রিয়া তার বন্ধ করে দেন।

কেন SCID ‘বাবল বয় ডিজিজ’ নামে পরিচিত?

1970 সালে একটি বিস্ময়কর ঘটনার পর থেকে SCID ; ‘বাবল বয় ডিজিজ’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। টেক্সসানের একটি ছেলে ডেভিড ভেট্টার এই অবস্থার সাথে একটি রোগ প্রতিরোধক প্লাস্টিকের বুদ্বুদের মধ্যে বড়ো হয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন যাতে রোগ ও জীবাণুগুলি তার শরীরের কোনো সিস্টেমকে আক্রান্ত করতে না পারে। এভাবে তিনি 12 বছর বাঁচতে সক্ষম হন। সাথে সাথেই জেনেটিক্যালি-লিঙ্ক যুক্ত ভাইবোনের দেহের থেকে অস্থি-মজ্জা থেকে সফল স্টেম-সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন করাই এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা ছিল। যাইহোক, এগ প্রতিস্থাপন সার্জারির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল।
ডেভিড ভেট্টার ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে গিয়ে মারা যান। তাছাড়া, এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে, রোগীর দেহে প্রায়ই ইমিউনোগ্লোবুলিন প্রয়োগ করতে হয়। ডেভিড ভেট্টারের জীবন নিয়ে একটি বিখ্যাত সিনেমা হয়েছে, 1976 সালের জন ট্রাভোল্টা চলচ্চিত্র নাম “দ্য বয় ইন দ্য প্লাস্টিক বাবল্”।

কিভাবে বিজ্ঞানীরা SCID এর ধাঁধা সমাধান করেন ?

সেন্ট জুড চিলড্রেন রিসার্চ হাসপাতালের চিকিৎসকরা UCSF বেনিওফ চিলড্রেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও‌ গবেষকদের সাথে একসাথে SCID-এর চিকিৎসার জন্য জিন থেরাপি মডেলে কাজ করে।
তারা গবেষনার জন্য প্রয়োজনীয় অধ্যয়ন করার জন‍্য দুই থেকে চৌদ্দ মাস বয়সী শিশুদের একটি ছোট গ্রুপের উপর নিরীক্ষণ করতে থাকেন। এখানে ডাক্তার সফলভাবে ত্রুটিপূর্ণ জিনটি সরিয়ে, সঠিক কপিটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দেন। শুরুতে, চিকিৎসকরা বাচ্চাদের অস্থি-মজ্জা থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করেছিলেন। তারপরে, তারা একটি HIV ভাইরাস ব্যবহার করেন, যেটি বাহক হিসেবে কাজ করেছে এবং শিশুদের স্টেম সেলগুলিতে জিনগুলির সঠিক কপি পুনঃপ্রতিষ্ঠান করে দেন। এই সুস্থ ইমিউন কোষগুলি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং অবশেষে SCID থেকে মুক্তি দেয়।

কিভাবে ডাক্তাররা পূর্ববর্তী চিকিত্সা পদ্ধতিতে যে সব সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠেছিল?

2003 সালে চিকিৎসার সময় ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী জিনের দুর্ঘটনাজনিত যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল,তা প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানীরা এইবার ভাইরাসে ‘ইনসুলারেটর’ তৈরি করেছিলেন। যা ভাইরাসের দ্বারা দেহে DNA সন্নিবেশ করার সময় আশেপাশের কোষ দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধা দেয়। ছাড়াও চিকিৎসকেরা কিন্তু এক মিনিটের জন্য একটি কেমোথেরাপি প্রক্রিয়াও ব্যবহার করে করেন এতে কি হয় যদি কোনো রকম তৈরি হয়ে থাকে সেটি শ্রেষ্ট অর্থাৎ তার কোন রকম প্রসারণ বন্ধ হয়ে যায়।
এইভাবেই, উভয় মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা জটিলতা ছাড়াই মারাত্মক ‘বাবল বয় ডিজিজ’ রোগের থেকে দশটি শিশুকে পূর্ণরূপে কোন প্রকার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সারিয়ে তুলেছেন। তাদের কাজ ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’ প্রকাশিত হয়েছে।

আশা করা যাচ্ছে এই দুই প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকেরা যে যুগান্তকারী পথ খুলে দিয়েছেন, তাতেকরে আগামীদিনে বহু অভিভাবকদের আশায় বুক বাঁধতে সাহায্য ক‍্যবে। তবে হ্যাঁ একটা সমস্যা হলো চিকিৎসকেরা কিন্তু শুধুমাত্র শিশুদের উপর এই পরীক্ষা করেনছিলেন, একবার রোগ নিরাময় হয়ে যাওয়ার পর কিন্তু আর তাদের ওপর কোনো পরীক্ষা চালানো হয়নি, তাই এই বিষয়ে আরও অনেক গবেষণার দরকার আছে।