এপ্রিল 20, 2024

মূল থেকে ফল সালমোন‍্যেলার প্রাদুর্ভাবে ভুগছে উদ্ভিদজগত – স‍্যালড্‌ গ্রহণে ফুড-পয়জানিং এর সম্ভাবনা

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র্যাড হেলথ এর প্রতিবেদন অক্ষরদান : সুভাষ বিশ্বাস

খাদ‍্য ছাড়া জীবন অচল, খাদ‍্য হিসাবে মাছ-মাংসকে গ্রহণ করলেও, আমাদের এই খাদ‍্যোভাসের মূল উৎস‌ই কিন্তু উদ্ভিদ। এমনকি মাছ-মাংস খাওয়ার সময়‌ও আমরা পেঁয়াজ-টোম‍্যাটো-শশাকে স‍্যালড হিসাবে গ্রহণ করি। কিন্তু এই স‍্যালড্‌ গ্রহণেই বেশিমাত্রায় হচ্ছে “ফুড-পয়জানিং”, আর এক্ষেত্রে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত ই.কোলাই এবং সালমোল‍্যেনা ব‍্যাকটেরিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সালমোন‍্যেলার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, শাক-সব্‌জির স্থানান্তরিত করণের‌ সময়; যদিও রোগজীবাণুর সংক্রমণ কৃষিক্ষেত্রেই ঘটে বেশি। কিন্তু উদ্ভিদদেহের মধ‍্যে ব‍্যাকটেরিয়ার এই সংক্রমণ পদ্ধতি এতদিন ছিল অজানা, খুঁজতে খুঁজতে রহস‍্যভেদ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউড অফ্ সায়েন্স এবং ইউনিভারসিটি অফ্ এগরিকালচার সায়েন্সস্-এর।

এরা সরাসরি মূল-ফল-পাতাতেই সক্রিয় হয়, উৎসেচক তৈরি এবং তা দিয়ে কোশপ্রাচীর বিনষ্ট করে‌। অন‍্যান‍্য ব‍্যাকটেরিয়ারা সারা মূলে ছড়ালে‌ও সালমোন‍্যেলা ব‍্যাকটেরিয়া গুচ্ছবদ্ধ হয় শাখামূল নির্গত হ‌ওয়ার স্থানেই। প্রাথমিক মূল ভেদ করে শাখা মূল মাটিতে ছড়িয়ে পড়ার সময় একটি ছোটো ফাঁক সৃষ্টি হয়। এই ফাঁকের মধ‍্য দিয়ে‌ই সালমোন‍্যেলা ব‍্যাকটেরিয়া উদ্ভিদদেহে প্রবেশ করে।

রহস‍্যভেদী পরীক্ষায় দেখা গেল, এক‌ই পরিবেশগত শর্তের মধ‍্যে যে সকল উদ্ভিদের শাখামূল বেশি তারা অনেকবেশি সালমোন‍্যেলা জীবাণু আশ্রয় দেয় কিন্তু যে সব উদ্ভিদের শাখামূল কম তাদের ক্ষেত্রে সালমোন‍্যেলার প্রাদুর্ভাব বেশি। এক‌ইভাবে, উদ্ভিদ যখন কৃত্রিম শর্ত ধরে শাখামূল তৈরি করে, তখন সে ক্ষেত্রে সালমোন‍্যেলার প্রাদুর্ভাব এবং কেন্দ্রীভূতকরণ কম। রহস‍্যভেদী পরীক্ষায় আর‌ও দেখা যায় যে, বিভিন্ন ধরনের ব‍্যাকটেরিয়ার উপনিবেশ স্থাপন হয় টম‍্যেটো গাছের মূলে, যদিও যেসব টম‍্যেটো ফল, গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ‍্যে সালমোন‍্যেলার প্রাদুর্ভাব‌ই বেশি অর্থ‍্যাৎ মূল থেকে ফল পর্যন্ত এরা গমনে‌ও সক্ষম।

সেল্‌বায়োলজি এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ‍্যাপক এবং প্রবীন লেখিকা দীপশিখা চক্রবর্ত্তী বলেন, “এটা খানিকটা মানবদেহের মধ‍্যে ব‍্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মতো‌ই।” পি এইচ ডি. ছাত্র কাপুদ্বীপ কর্মকার বলেন, “পরিবেশের মধ‍্যে‌ই আর‌ও অনেক উৎস থেকেই সালমোন‍্যেলা মাটিতে প্রবেশ করে। যেমন, প্রাণী মল দ্বারা তৈরি জৈবসার বা সেচের জল। বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা পরীক্ষিত যে সেচের জল, দূষিত হয় মূলত ড্রেনের জল দ্বারা, এবং যখন সেই জল কৃষিকাজে ব‍্যবহৃত হয় তখন সেটি‌ই সালমোন‍্যেলার সংক্রমণের জন‍্য হয়ে ওঠে অনুপ্রবেশের চাবিকাঠি।” মাটির মধ‍্যে লবণের ভাগ বেড়ে গেলে, উদ্ভিদ থেকে আর‌ও বেশি শাখামূল নির্গত হয় যা সালমোন‍্যেলার সংক্রমণের জন‍্য খোলা দরজা স্বরূপ।

গবেষণা চলছে এখন‌ও, গবেষকবৃন্দের এখনকার পরিকল্পনা এটা দেখা যে, ভোজ‍্য আর কোন শাক-সবজির মধ‍্যে সালমোন‍্যেলা অনুপ্রবেশ ঘটায় এবং কোন কৌশলে মাটির দূষণ রোধ সম্ভব। কারণ, ড: চক্রবর্ত্তী মতে, “মাটি যদি দূষিত হয়, তাহলে সেই মাটিকে পরিশুদ্ধকরণ বা জৈবসার প্রয়োগ করে সংক্রামক ব‍্যাকটেরিয়া মুক্ত করা সম্ভব।” সালমোন‍্যেলা একটি ক্রমবর্ধমান কুখ‍্যাত, এবং বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন রোগসৃষ্টিকারী শক্তি। পাখি থেকে শুরু করে সরীসৃপ, পোল্‌ট্রী এবং পশুসম্পত্তি সব ক্ষেত্রে‌ই এর প্রাদুর্ভাব, তাই মৃত‍্যুর হার‌ও ক্রমবর্ধমান কারণ সালমোন‍্যেলা রক্ত এবং মস্তিষ্কের বেড়াজাল ভাঙতে সক্ষম।