ডিসেম্বর 24, 2024
SONY DSC

SONY DSC

Reading Time: 3 minutes

নিউক্রাড হেল্থ ডেস্ক-এর প্রতিবেদন, কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদে- মোনালিসা মহান্ত

যদি আমি জিজ্ঞাসা করি আপনাদের মধ্যে কতজনের শিশু কখনো না কখনো বসন্তে আক্রান্ত হয়ে স্কুল যেতে পারে নি? তাহলে আপনাদের বেশিরভাগই উত্তর হবে হ্যাঁ। কখনো না কখনো আপনার সন্তান বসন্তে আক্রান্ত হয়ে স্কুলে যেতে পারে নি।

পক্স বা জলবসন্ত কি?

জলবসন্ত হলো একটি ভীষণ রকম সংক্রামক রোগ। যা প্রধানত বসন্তকালে শিশুদের মধ্যে ছডড়িয়ে পড়ে। তবে শুধুমাত্র শিশুই নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও এই সংক্রমণ দেখা যায়।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়ে পক্স বা জলবসন্ত সবথেকে বেশি ছড়ায়।
ভারত ও পৃথিবীর অন্যান্য নানা দেশের শিশুরা ও জলবসন্তে আক্রান্ত হয়ে 10 থেকে 21 দিন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে।
এই লেখাটিতে জলবসন্তের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

কোন জীবাণুর সংক্রমণে জলবসন্ত ছড়িয়ে পড়ে?

পক্স বা জলবসন্ত জন্য দায়ী জীবাণুটি আসলে এক জাতীয় ভাইরাস। যার নাম হল ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাস(VZV)। এই কারণেই জলবসন্ত ‘ভেরিসেলা’ নামেও পরিচিত। বসন্তে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে প্রচুর জল ভরা গুটি দেখা যায়। হাচি-কাশি,থুতু এবং গুটি-গুলির তরলের মাধ্যমে একজন সংক্রমিত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে জল বসন্ত ছড়িয়ে পড়ে। একজন ব্যক্তির দেহে, গুটি দেখা দেবার পর থেকে যতদিন না শুকিয়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিটি ব‍্যাপকভাবে রোগ ছড়াতে পারে।

বসন্তের লক্ষণগুলির 7 থেকে ২1 দিনের জন্য দৃশ্যমান। সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে আলোচনা করা হয়েছে।

  • জ্বর
  • মাথা ব্যাথা
  • ক্ষুদামন্দা
  • অবসন্নতা ইত্যাদি।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য:-
জ্বরের এক বা দুই দিন পরে, ব্যক্তির ত্বকের উপর লাল বা গোলাপী তরল ভরাট র‍্যাল দেখা যায়। যদিও সারা শরীর জুড়েই তরল পূর্ণ থলি থাকে, কিন্তু সব থলি একি পর্যায়ে থাকে না। গুটি বের হয়ে থেকে ফেটে যাওয়া অবধি – তিনটি পর্যায় হয়।

প্যাপুলি: এই পর্যায়ে গোলাপী বা লাল গুটিগুলি শরীরের উপর বেশ কয়েক দিনের জন্য দেখা যায়।

তরল পূর্ণ থলি: এক দিন পরে গুটিগুলি জলভরা ফোস্কার মত আকার ধারণ করে। কয়েক দিনের পর এগুলো ফেটে গিয়ে, ভিতরের তরল বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকে।

খোলস: প্রাদুর্ভাব শুকিয়ে যাওয়ার পরে, তারা শুকিয়ে খোলস তৈরী করে। যা নিরাময় করার জন্য বেশ কয়েক দিন সময় নেয়। এই পর্যায়ে, খুবই চুলকানি দেখা যায়।

কাদের বসন্তে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি?
যাদের আগে কখনো বসন্ত হয়নি।
যাদের বয়স 12 বছরের কম।
যারা ভেরিসেলা ভ্যাক্সিন নেয়নি।
বা অন্য কোনো রোগের কারণে যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে আছে।
সেই সমস্ত ব্যক্তির জলবসন্ত আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে জলবসন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তর দুইবার ও বসন্ত দেখা যায়।

কীভাবে চিকিৎসকেরা চিকেনপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করেন?
চিকিৎসকরা শারীরিক পরীক্ষা করে এবং র‍্যাশগুলি পর্যবেক্ষণ করেই সাধারণত নির্ণয় করেন। কিছু ক্ষেত্রে, তারা পরীক্ষাগার পরীক্ষা করতে দিতে পারেন।

চিকেনপক্সের চিকিৎসা:-

যেহেতু চিকেন পক্স একটি ভাইরাল রোগ, তাই এটি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কিছুদিন পর থেকে লক্ষণগুলি হালকা হয়ে যাতে থাকে। ডাক্তাররা সাধারণত শিশুদের 21 দিনের জন্য স্কুলে বা ডে-কেয়ার থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেয়। এবং চুলকানির উপশম করতে অ্যান্টিহিস্টামাইন ঔষধ লাগাতে দেন।
কিছু বিরল ক্ষেত্রে, জটিলতা দেখা দেয় এবং সেক্ষেত্রে অনেক সময় ডাক্তাররা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ খাবার পরামর্শ দেন।

চিকেনপক্স প্রতিরোধী টিকা:-

চিকেনপক্স সংক্রমণ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় টিকা (Varivax) নেওয়া। এটি রোগের বিরুদ্ধে 94% প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। ভারতের মতো অনেক দেশেই ভেরিসেলা ভ্যাকসিন নেওয়া বাচ্চাদের টিকাকরন কর্মসূচীর অংশ। বাচ্চাদের এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ হয়; প্রথমটি 12 থেকে 15 মাস বয়সের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টি 4-6 বছর বয়সের মধ্যে দেওয়া হয়।

যে সব শিশুর টিকা নেয়নি ,সাত বছরের উপরের এমন শিশুদের চিকেনপক্স প্রতিরোধের উপায়?

বয়স্ক শিশুদের 28 দিন অন্তর দুটি ডোজ নিতে পারে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলতার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি এমন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও কার্যকর। যারা রোগটি ভোগ করেনি, কিন্তু সংক্রমণ এড়াতে চায় তারা varicella ভ্যাকসিন নিতে পারেন । যাইহোক, গর্ভবতী মহিলা, এইচআইভি সংক্রমণের কারণে যাদের ইমিউনিটি দুর্বল, বা যাদের ইম‍্যিউন সাপ্প্রেসিভ ট্রিটমেন্ট চলছে তাদের এই ভ‍্যাকসিন‌ নেওয়া অনুচিত। এছাড়াও জিলাটিন বা নিওমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের অ্যালার্জি হয় তারাও এই ভ‍্যাকসিন‌ নেবেন না।

টিকা নিন এবং কেও যদি পক্সের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় তার থেকে দূরে থাকুন। সুস্থ থাকুন।