মে 2, 2024

বিহারে প্রচলিত কুষ্ঠ রোগের ভুল নির্ণয়, গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চমকপ্রদ তথ্য

Reading Time: 2 minutes

কলমে- পরমানন্দ বর্মন, অনুবাদে-মোনালিসা মহান্ত

সাম্প্রতিক এক, আন্তর্জাতিক দলের একদল গবেষক, কুষ্ঠ রোগ নির্ণয়ের জন্য বিহারে সরকারী সহযোগিতামূলক কর্মসূচির কিছু অপ্রীতিকর বাস্তবতা প্রকাশ করেছে। এবং রোগের সঠিক নির্ণয়ের জন্য এই ধরনের পদ্ধতির দক্ষতা কতটা তা অনুমান করেছে।
ড্যামিয়ান ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া ট্রাস্ট, (ড্যামিয়ান ফাউন্ডেশন, বেলজিয়াম) জাওয়াহারলাল ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট-গ‍্র‍্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, (পন্ডিচেরি), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেনস্ট টিউবারকুলেসিস এবং লাঙ্গস ডিজিজের(ফ্রান্স) এবং শ্রী মানকুলা ভিনয়াগার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের(পন্ডিচেরি) বিভিন্ন গবেষকরা এর সাথে যুক্ত ছিলেন। গবেষণার ফলাফল PLOS পত্রিকায়, “নেগলেক্টেড ট্রপিকাল ডিজিজ” শীর্ষক সহ প্রকাশিত হয়।

কুষ্ঠরোগ, ত্বক এবং ত্বকের উপরিভাগের স্নায়ুগুলিকে প্রভাবিত করে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ, যা মাইকোব্যাক্টিয়াম লেপ্রি, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয় । বিশ্বব্যাপী করা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর নতুন কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীর প্রায় 60% ই ভারতের। এই রোগের বিস্তার সম্পর্কে নজর রাখতে ‘ন‍্যশনাল লেপ্রসি ইরেডিকেলন প্রোগ্রামটি’ (NLEP) ২016 সালে সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেশি এমন জায়গা গুলিতে, কুষ্ঠ রোগের সনাক্তকরণের জন্য একটি বার্ষিক প্রকল্প চালু করেছিল। যাইহোক, এই ধাপে একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ছিল – এইসব জায়গার থেকে সেই সব ব‍্যক্তিদের খুঁজে বের করা, যারা কুষ্ঠ আক্রান্ত না হয়েও ভ্রান্তভাবে কুষ্ঠ চিকিৎসার শিকার।

বর্তমান গবেষণায়, গবেষকরা বিহারের চারটি জেলার থেকে 8 টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (PHCs) এই ধরনের বহু কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ পেয়েছিলেন। ভারতবর্ষের মোট কুষ্ঠ আক্রান্তদের 15-20%ই বিহারের।
গবেষকরা দেখেছেন যে যদিও চিকিৎসার ফলে দুই বছরের মধ্যে আটটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা 62% কমে যায়, কিন্তু আক্রান্তকারী দের সনাক্তকরণ সঠিক ছিল না। 2016 সালে নির্ণয় করা প্রায় 30% ভুল মানুষকে সনাক্তকরণ করা হয় ।

ভুল ডায়গনিসিসের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা সম্পর্কে লেখক বলেন- “ভুল ইতিবাচক নির্ণায়ের ফলে অপ্রয়োজনীয় ঔষধ খাওয়া ছাড়াও; সামাজিক কলঙ্ক, বিচ্ছিন্নতা, ক্ষতিগ্রস্ত এবং বৈষম্য সৃষ্টি করে যা রোগীদের এবং তাদের পরিবারের মধ্যে যথেষ্ট মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে”।

গবেষকরা 2018 সালে “সুবিবেচক তদন্ত প্রক্রিয়া” নামের একটি পদ্ধতি চালু করেন। তাঁদের সাথে PHCs থেকে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদেরকেও যুক্ত করা হয়। “সুবিবেচক তদন্ত প্রক্রিয়া” হল একটি এমন প্রক্রিয়া যা, প্রকল্পটির লক্ষ্য সমস্যা সনাক্তকরণ, আত্মরক্ষার ভাবনা এবং তথ্য অস্বীকার করার বদলে; প্রকল্পের শক্তি আবিষ্কার করে, প্রদত্ত প্রেক্ষাপটে যা ভালো কাজ করে সেগুলি নির্মাণের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম করে। এটি কর্মীদের উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিটি কর্মীদের জন্য প্রেরণা হিসাবে কাজ করে এবং নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলির স্থায়িত্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

তদন্ত শুরু হওয়ার পর, গবেষকরা দেখেন যে ভুল রোগ নির্ণয়ের হার 2018 সালে প্রতি চার জনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে কম হয়(23.6%)। যা 2016 সালের, তিনটির মধ্যে একটির (28.4%) তুলনায় অনেক কম। পেয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ‘যদিও এই উন্নতিটি হল পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য নয়, তবুও পদ্ধতির সম্ভাব্য সুবিধার ইঙ্গিত দেয়’ । “এই তদন্ত প্রক্রিয়া ভুল ইতিবাচক রোগ নির্ণয়ের সংখ্যা হ্রাস প্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এবং কর্মীদের পুনরায় প্রশিক্ষণ, সঠিক সহায়ক তত্ত্বাবধান এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই ভুলের সংখ্যা কমানো সম্ভব”, তিনি যুক্তি দেন।

এই ফলাফল ভীষণভাবে ‘লেপ্রসি কেস ডিটেকশন ক্যাম্পেন’ এর মত প্রকল্পগুলির ত্রুটি খুজে বের করে তার মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তা কে সমর্থন করে।

গবেষকরা বলেছেন – “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সীমিত সংখ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ড্যামিয়ান ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত বৈধতা তদন্ত, একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াকলাপগত সমস্যা সনাক্ত করতে সাহায্য করেছে, এবং তাই এটি অন্য সব জেলায় এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যে সম্পন্ন করা দরকার”।