মার্চ 29, 2024

গঙ্গা নদীর জলের মতোই, নদীর তলদেশে সঞ্চিত পলিও ক্রমশই দূষিত হয়ে পড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র

Reading Time: 2 minutes

লিখেছেন- ডঃ পি. সুরত, অনুবাদক- মোনালিসা মহান্ত, নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক

গঙ্গাতে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে মানুষের বর্জ্য এবং অন্যান্য নানান বিষাক্ত বর্জ্য গিয়ে মিশে নদীকে দূষিত করে তোলে, সাথেই জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ও হ্রাস করে। দ্রবীভূত অক্সিজেন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার যা কোন নদী বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং পুনরুৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করে। একটি নদীর মধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেন পরিমাণ- বায়ুমন্ডলীয় অক্সিজেন সরবরাহ,সালোক-সংশ্লেষ প্রক্রিয়া, এবং অক্সিজেন-গ্রহণকারী বিপাকীয় এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রতি লিটারে 2 মিলিগ্রামের নিচে নেমে গেলে, এটি মাছ ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। গবেষকরা নদীর তলদেশের পলিতে সেডিমেন্ট অক্সিজেন ডিমান্ড (SOD) পরিমাপ করেন, এর থেকেই বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড ও কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ডের পরিমাপ ও পাওয়া যায়।

বারাণসী ও কানপুরের মধ্যে নদীর অংশে গবেষণা করা হয়; এর পাশাপাশি নদীর সাথে যুক্ত দুটি প্রধান ড্রেনেও ( কানপুরের ওয়াজিদপুর এবং বারানসিতে আসি) পরীক্ষা চালানো হয়। গবেষণাটি পরপর তিন বছরে, গ্রীষ্মের মাসগুলোতে (২016 থেকে ২018 সাল) চালানো হয়েছিলো। গবেষকরা কানপুর ও বারাণসীর মধ্য প্রবাহিত একটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে (518 কিমি) বেছে নিয়েছিলেন, এটিই নদীটির সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল বলে বিবেচিত। এছাড়াও, তাঁরা কানপুর ও ওয়াজিদ পুরের দুটি ড্রেনের প্রান্তবর্তী অঞ্চলের দিকেও সমীক্ষা করেন। ওয়াজিদ পুরের ড্রেনটি,‌প্রতিদিন 54 মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) শিল্প বর্জ্য এবং আসি নামের ড্রেনটি প্রতিদিন 66 মিলিয়ন লিটার, স্যুয়েজ বর্জ্য নদীতে বয়ে নিয়ে যায়। নদীর তলদেশে সঞ্চিত পলিতে জৈব কার্বন, পুষ্টি, এবং ভারী ধাতু সহ অনেক জল দূষণকারী পদার্থ ক্রমশই জমা হতে থাকে।

বারাণাস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলের সদস্য জিতেন্দ্র পান্ডে ব্যাখ্যা করেছেন, “জলাধারের পললভূমিতে যে বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলি চলে, তাতেই জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের বেশিরভাগ খরচ হয়ে যায়।” কানপুরের ‘জাজমৌ’ এলাকার জলে এবং পললভূমিতে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সর্বনিম্ন‌ ছিল। এই অঞ্চলটিই গঙ্গার সবচেয়ে দূষিত এলাকা। যেখানে প্রতিদিন 202 মিলিয়ন শিল্প বর্জ্য সরাসরি নদীতে এসে মেশে। ‌দুইটি ড্রেনের ক্ষেত্রে, জেল দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ছিল। এই দুটি ক্ষেত্রেই, (জাজমৌ অঞ্চলে ও দুটি ড্রেনের মুখে) সেডিমেন্ট অক্সিজেন ডিমান্ড (SOD) সর্বোচ্চ ছিল । এর থেকেই বোঝা যায়, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন পরিমাণের ক্ষেত্রে, সেডিমেন্ট অক্সিজেন ডিমান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, নদীর তলদেশে সেডিমেন্ট অক্সিজেন ডিমান্ড, রাসায়নিকের সাথে যুক্ত ছিল অক্সিজেনের চাহিদাও ( কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) নির্দেশ করে।

সমীক্ষাটি দীপ জয়সওয়াল এবং জিতেন্দ্র পান্ডের (ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, বারাণসী।) অধীনে করা হয়। পান্ডেজি বলেছেন- “অ্যামোনিয়া, আয়রন এবং ম্যাগানিজের মতো, উচ্চ অক্সিজেন-চাহিদাযুক্ত রাসায়নিক ও জৈব-কার্বন, বিভিন্ন উৎস থেকে নদীতে এসে পড়ে। এ পর্যন্ত, বেশিরভাগ সংস্থাই ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করার সময়, মূলত বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ডের (জৈব পদার্থের কারণে) উপরেই বেশি জোর দিতেন। কিন্তু, আমাদের ফলাফল থেকে জানা যায় যে গঙ্গাকে পুনর্জীবিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে, নদীর বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ডের পাশাপাশি কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ডের উপরেও মনোযোগ দিতে হবে। তবেই নদীর বাস্তুসংস্থানগত আয়ত্তকরন ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।” গবেষণাটি ইকোটক্সিকোলজি এবং এনভায়রনমেন্টাল সেফটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।