গর্ভাবস্থায় এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে, একটি মা ও শিশুর সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন
কলমে পারমানন্দ বর্মণ (ইংরাজি সংস্করণ) এবং মোনালিসা মোহন্ত (বাংলা অনুবাদে), নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক এর নিবেদন ফেব্রুয়ারী 27, 2019
গর্ভাবস্থায় এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে, একটি মা ও শিশুর সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু, ভারতবর্ষে প্রায় 7 কোটি 10 লক্ষ মহিলার মাতৃত্বকালীন অবস্থায় সঠিক পুষ্টি হয় না। এটি একটি বিরাট সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যার দিকে আমাদের এখনই দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।সাম্প্রতিক, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্স (মুম্বাই), ইউনিসেফ (ইন্ডিয়া), স্পর্শ সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি লার্নিং (মুম্বাই), অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (পাটনা,ভুবনেশ্বর ,রায়পুর), সিতারাম ভারতীয় ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ নিউ (দিল্লি, একজুত ও ঝাড়খণ্ড)- এর গবেষকরা, যৌথ উদ্যোগে পূর্ব ভারতের মায়েদের মাতৃত্বকালীন অবস্থার স্বাস্থ্যর উপর, একটি চিত্র উপস্থাপন করেন। সমীক্ষাটির সমস্ত খরচ বহন করেছে ইউনিসেফ ইন্ডিয়া্। এবং এই গবেষণার ফলাফল PLoS ONE নামক একটি পত্রিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউনিসেফ ভারত ও ভারত সরকারের সহযোগিতামূলক উদ্যোগে 2016 সালে ‘স্বাভিমান’ নামের একটি প্রকল্প শুরু হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল গর্ভধারণের পূর্বে, গর্ভকালীন অবস্থায় এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে নারীদের পুষ্টি সেবা প্রদান করা।
জীবিকা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন উন্নয়নের জন্য সরকার-সমর্থিত উদ্যোগে চলমান; ‘জাতীয় গ্রামীণ জীবনযাত্রার মিশন’-এর সাথে ‘স্বাভিমানের’ জোট বেঁধে এই কাজ শুরু করে। বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে; বিহার, ছত্তিশগড় ও ওড়িশার নির্বাচিত কিছু এলাকা থেকে দুই বছরের কম বয়সী শিশু আছে এমন 8755 জন মায়ের উপর নিরীক্ষণ চালায়।
লেখক বলছেন, “নারীর ক্ষমতায়ন, পুষ্টিমাত্রা, পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা এবং মাতৃস্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক গুলির উপর সমীক্ষা চালিয়ে; তার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে আমাদের রিপোর্ট এ।”
অধ্যয়নরত এলাকায় মাতৃস্বাস্থ্যের চিত্র খুবই খারাপ। লেখক জানিয়েছেন – “এই রাজ্যের 45% মায়েদের অনাহারী”। “ওড়িশার মায়েদের তো; এক তৃতীয়াংশেরও বেশি জনের সঠিক বয়সকাল এর অনেক আগেই বিয়ে হয়েছিল। আর প্রতি 10 জনের মধ্য 1জন মা কিশোরী!” তিনটি রাজ্যেই মায়েদের মধ্যে নূন্যতম শিক্ষার হার কম। সঠিক বয়সের আগেই বিয়ে এবং সন্তান ধারণের হার এত বেশি হওয়ার পিছনে, নুন্যতম শিক্ষার অভাবই দায়ী বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা আরও জানায় যে এই সকল রাজ্যে পারিবারিক পরিকল্পনার ভীষণ রকম অভাব। তারা আরও বলেন- ‘যদি এই সমস্ত এলাকাগুলিতে একজন মা গর্ভস্থ হওয়ার পর, তার নাম নথিভুক্ত করা, তার ওজনের সঠিক পরিমাপ করার ব্যবস্থা করা হয়। কিম্বা এই সমস্ত জায়গা গুলিতে সঠিক পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃত্বকালীন অবস্থায় কি ধরনের পুষ্টি দরকার,এই সময় সঠিক শৌচব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর ব্যবস্থাকরা হয় তাহলে এই ধরনের সমস্যা গুলি অনেক ক্ষেত্রেই কম হবে।’
চারজন মায়ের মধ্যে কমপক্ষে একজন মা আত্মসহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যা। যদি এই ধরনের সমাজ সেবা মূলক গোষ্ঠীগুলি তাদেরকে আর্থিক উন্নয়ন, বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যকলাপ এর সঙ্গে যুক্ত করেছিল; কিন্তু তাদের মাতৃত্বকালীন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে অসফল-ই রয়ে গেছিল।সমস্ত রাজ্যগুলির জুড়ে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প গুলির কাজ আরো বাড়ানো দরকার।
তাদের গবেষণায ‘স্বভিমানের’ মতো একটি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা সমর্থন করে। কারন এরা জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের করার পাশাপাশি, পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করে।
লেখকদের উপসংহারে বলা হয়েছে,যে সমস্ত মহিলারা পুষ্টিগত দিক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, সেই সমস্ত মহিলাদের সঠিক পুষ্টিকর আহারের যোগান দেওয়া, উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করাটা অত্যন্ত জরুরি।তাদেরকে পারিবার পরিকল্পনা পরিষেবায় প্রবেশ করানো,বিভিন্ন খাদ্য সরবরাহ করা, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর ঘাটতি এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধী ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।