নভেম্বর 23, 2024

Breathing poison? Air pollution is a leading cause of death in India, reports study

Reading Time: 2 minutes

[কলমে- সুন্দররাজ পদ্মনাভন। অনুবাদে- মোনালিসা মহান্ত।] নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা

বর্তমান সময়ে এই বিশ্বের একটি সবথেকে বড় সমস্যা হল দূষণ। মূলত এই বিশ্বের নিম্ন ও নিম্ন আয় সম্পন্ন দেশগুলিতে বায়ুদূষণের প্রভাব সব থেকে বেশি। সুন্দর এই পৃথিবীর বুকে ক্রমশ অদৃশ্য মৃত্যুর থাবা বসাচ্ছে দূষিত বাতাস।

বিশ্বের 15 টি সবথেকে দূষিত শহর গুলির মধ্যে 14 টি রয়েছে ভারতবর্ষে! এই মৃত্যুর থাবা থেকে মুক্তি পেতে, বিভিন্ন দেশগুলিতে বর্তমানে বায়ুদূষণের কতটা প্রভাব ফেলেছে তার সঠিক অনুসন্ধান করার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিছু দিন আগে ‘ল্যাসেন্ট প্লানেটরী হেলথ’ নামক একটি পত্রিকায়, গবেষণামূলক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, দূষিত বায়ুর কারণে মৃত্যুর, রোগ, আয়ুক্ষয় এর হার একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই গবেষণাটি ভারতের ‘রাজ্য স্তরের রোগ বর্জন প্রকল্প’ এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ, ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন, হেলথ ম্যাট্রিক্স এন্ড ইনস্টিটিউট অধীনে যৌথ ভাবে পরিচালিত হয়েছিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং সারা দেশব্যাপী 100 টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হয়ে এই রিপোর্টি প্রকাশ করেছেন। এই প্রকল্পের সমস্ত খরচ বহন করেছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ, ভারত সরকারের স্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগ, ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

গবেষকরা প্রতিটি রাজ্যর উপর বায়ুদূষনের প্রকোপ দুই ভাবে পরীক্ষা করে ছিলেন- এক) গবেষকরা আশেপাশের দূষিত বস্তুকণা গুলো দ্বারা বাইরে যে বায়ু দূষণ সেটা পরিমাপ করেছিলেন ২) আর আরেক হলো গৃহে ব্যবহারকারী জিনিসপত্র থেকে যে বায়ু দূষণ তা পরিমাপ করেছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই গবেষকরা PM2.5 নামে একটি অতি ক্ষুদ্র কণার পরিপ্রেক্ষিতে পরিমাপ করেছেন। PM2.5 কনাটি এতটাই ক্ষুদ্র, যে এর ব্যাস মানুষের চুলের ব্যাসের 3%!

‘ন্যাশনাল অ‍্যম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট‍্যন্ডার্ড ইন ইন্ডিয়া’ বায়ুর যে নির্ধারক ঠিককি করে দিয়েছেন, গবেষকদের মতে ভারতীয় জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের বেশি ভারতীয় এই সীমানা অতিক্রম করে যাওয়া, বসবাসের অনুপযুক্ত বায়ু পরিমণ্ডলে বসবাস করে! 2017 সালের রিপোর্ট এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন 2017 সালে বায়ু দূষণের ফলে ভারতে প্রতি 8 জনের মধ্যে 1 করে মৃত্যুর শিকার হয়েছিল যার ফলে সমগ্র ভারতে 1.24 মিলিয়ন নিরীহ ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছিলেন।

1.24 মিলিয়ন মানুষের মধ্যে, 0.67 মিলিয়ন মানুষ বাড়ির বাইরের পরিবেশগত দূষণের ফলে এবং 0.48 মিলিয়ন মানুষ বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস থেকে দূষণের ফলে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
ভারতবর্ষের বেশিরভাগ জায়গাতেই ; প্রায় 56% ভারতীয় এখনো কাঠ,গোবর,কৃষি অবশিষ্টাংশ,কয়লা ইত্যাদি জিনিস কে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন, যা গৃহস্থালি দূষণের প্রধান কারণ। গবেষণায় উঠে এসেছে যে বায়ু দূষণের শিকার এর অর্ধেকেরও বেশি জন 70 বছরের কম বয়সী। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী মোট দূষণের 18% পলিউশন ভারতবর্ষেই! এবং বিশ্বব্যাপী অকালমৃত্যুর 26% ই ভারতীয়দের মধ্যে। এই সবের পিছনে মূল দায় বায়ুদূষণের।

ফুসফুসের রোগই বায়ু দূষণ সম্পর্কিত প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে বায়ু দূষণের কারণে, 38% রোগ কিন্তু হৃদযন্ত্র এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত।
গবেষকদের কথায়- “এছাড়াও ভারতবর্ষে বায়ু দূষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য প্রকোপ হলো ধূমপান সংক্রান্ত রোগ গুলিতে এর অবদান, যেমন স্ট্রোক, করণীয় ধমনীর রোগ, দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধক ফুসফুসের রোগ, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি।”

বায়ু দূষণ মানুষের আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন – ‘যে তারা অনুমান করেছে ভারতে বায়ু দূষণের মাত্রা যদি নির্ধারিত সীমার চেয়ে কম হতো তাহলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিও কমত; আর 2017 সালে ভারতবাসীর গড় আয়ু প্রায় 1.7 বছর বেশি হত। রাজস্থান, উওর প্রদেশে, হরিয়ানার মত রাজ্য গুলির ক্ষেত্রে তা বেড়ে দাঁড়াত প্রায় 2 বছরে।’

বায়ু দূষণের প্রভাব এবং মাত্রা বিভিন্ন রাজ্যের বিশেষ পরিবর্তিত হয়। উত্তর প্রদেশ, বিহার, দিল্লি এবং হরিয়ানার বাতাসে বায়ু দূষণকারী কনার পরিমাণ সব থেকে বেশি। এবং এক্ষেত্রে রয়েছে প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে রাজধানী দিল্লি! গবেষকরা আশা রাখছেন তাদের দেওয়া এই তথ্যগুলি প্রতিটি রাজ্যের বায়ু দূষণ প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তোলায় যথেষ্ট সহায়তা করবে।
‌সমস্যায় নির্দিষ্ট সমাধানের পথ খুঁজে বের করে যত তাড়াতাড়ি ভারতবর্ষ বায়ু দূষণের মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে ততই মঙ্গল বলে মনে করছেন লেখক। বায়ুদূষণ ঘটিত কমাবার এই একটি মাত্র পথই খোলা আছে আমাদের সামনে।