নভেম্বর 23, 2024

‘ড্রাগের নেশা সর্বনাশা’- এখনই সচেতন হন!

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র্যাড হেলথ এর নিজস্ব প্রতিবেদন, লিখেছেন- শুভ্রা সরকার, সম্পাদনায়- ডঃ শুভ সরকার, অনুবাদে- মোনালিসা মহান্ত মার্চ 7, 2019

ভারতে মাদকাসক্তি সংক্রান্ত সমস্যাটি ক্রমশই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। পাঞ্জাবের মতো কিছু রাজ্যে প্রকোপ ভয়াবহ, প্রায় 75 শতাংশ তরুণ এই ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তি অতি দ্রুততার সাথে, সমাজের জন্য বিপজ্জনক থাবা ছড়িয়ে দিচ্ছে। দিল্লি, মুম্বাই এবং হায়দ্রাবাদের মতো বড় বড় শহরের পরিস্থিতিও ক্রমশঃ খারাপের দিকে।
এইসব বড়ো শহরে তরুণ প্রজন্মদের মাদক ব্যবহারের সূচকও ক্রমবর্ধমান। সন্তানের থেকে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা, মানসিক চাপ এবং কৈশোর কালে সঠিক গাইডেন্সের অভাব- তরুণদেরকে মাদকদ্রব্যের দিকে ঠেলে দেয়। যদিও স্থানীয় সরকার, ডিডিকশন ফোরাম এবং সামাজিক সংস্কার কেন্দ্রগুলি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, তবুও তারা এখনও পর্যন্ত অনুকূল ফলাফল অর্জন করতে পারে নি।
বর্তমানে এই পরিস্থিতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে, এনজিও গুলির উচিত্ তরুণ প্রজন্মকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসা।তরুণ প্রজন্মকে যদি এই মাদকের কুফল গুলি সম্পর্কে সচেতন করা যায় এবং সঠিকভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ চেনানো যায়, তবেই এই সমস্যা কিছুটা লাঘব করা সম্ভব।
ভারতে মাদকাসক্তির সমস্যা এবং এই অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য অনুসরণ করা যেতে পারে এমন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কে আরও জানতে পড়া চালিয়ে যান।

ড্রাগ কি?

ড্রাগ হল একপ্রকার রাসায়নিক যৌগ।
মুখে খাওয়ার দ্বারা বা ইনজেকশনগুলির মাধ্যমে সরাসরি গ্রহণ করা হয়। যার ফলে তৎক্ষণাৎ শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়।
এই যৌগের প্রকৃতি এবং আসক্তি সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্যগুলির উপর ভিত্তি করে, এর বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। কিছু ড্রাগ আছে যেগুলি ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবং এই ঔষধগুলি একজন প্রশিক্ষিত ডাক্তার যদি লিখে দেন তবেই দোকান থেকে তা পাওয়া যায়। অনেকক্ষেত্রেই নিয়মিত-চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এগুলি ব্যবহার করা হয়। ওপিওড ব্যথা, টাইমুল্যান্টস, এন্টিডিপ্রেসেন্টস এবং মুড-স্ট্যাবিলাইজার এর ঔষধগুলি এই বিভাগের অধীন পড়ে। যদিও এগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহন করলে বিপজ্জনক পরিণতি হতে পারে।
আরেক প্রকার গ্রুপ রয়েছে যেগুলো বেশি আসক্তি তৈরী করে এবং মানব দেহে অতিরিক্ত প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে। তারা অবৈধ ওষুধ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ এবং হেরোইন, কোকেইন, মেথডোন, স্নানের লবণ, এক্সস্টাসি, এবং মারিজুয়ানা মত যৌগর অন্তর্ভুক্ত।

ড্রাগ আসক্তি ও ড্রাগ অপব্যবহার মধ্যে পার্থক্য:-

ড্রাগ অপব্যবহার হল এমন একটি প্রবণতা, যেখানে এক ব‍্যক্তি আইনিভাবে ব‍্যবহার যোগ‍্য (বেয়াইনি) ওষুধগুলোর অপব্যবহার করেন। এই ব্যক্তিরা সুস্থ বোধ করতে বা চাপ কমানোর জন্য, ঔষধগুলির নির্দিষ্ট পরিমাণ ডোজের তুলনায় বেশি খেয়ে নেন। কিছু ক্ষেত্রে, মানুষ এই ওষুধগুলি গ্রহণের জন্য অন্যের প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করেন।
যাইহোক, যদি এই ব্যক্তিরদের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিহ্নিত করা যায় এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সঠিক চিকিৎসা করানো হয়, তবে সময়ের সাথে সাথে ডোজ কমানোর মাধ্যমে অবশেষে এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসটির থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এইভাবে প্রায়শই অনিয়মিত ড্রাগ নিতে থাকলে, এটি ক্রমশ আসক্তিতে পরিনত হয়। এমত অবস্থায় ব্যক্তিরা নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এমনকি এর দূরে থাকার কঠিন হয়ে ওঠে এবং প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক, মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সাথেই আর্থিকভাবেও ভেঙে পড়তে থাকে।

মস্তিষ্কের উপর ড্রাগের প্রভাব :-

মানুষের মস্তিষ্ক এমন ভাবে গঠিত, যে যদি তার কোন কিছু ভাল লাগে বা পছন্দ হয়, তবে সেই কাজটিই সে বার বার করতে চায়। মাদকদ্রব্যের মস্তিষ্কে এই পুনরাবৃত্তির প্রবৃত্তিটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ‘ডোপামাইন’ নামে একটি যৌগের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।
এই ডোপামাইন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শরীরে এমন পরিমাণ এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যে মাদক ব্যবহারকারী ব্যক্তিটি মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো জানা সত্বেও বারবার ব্যবহার করতে থাকে। ক্ষনিকের এই সুখের নেশায় মানুষ এতটাই বুঁদ হয়ে পড়ে, যে কখন সে মাদকদ্রব্যের মরনফাঁদে আষ্টেপৃষ্ঠে পড়েছে বুঝতে পারে না। অনেকক্ষেত্রেই যার জাল কেটে বেরিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, রাজ্য সরকারের দ্বারা গৃহীত কিছু উদ্যোগ:-

যুবকদের মধ্যে মাদকাসক্তের প্রভাব যে ভাবে ক্রমবর্ধমান, বিষয়টি ভারত সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মিতভাবে মাদকপদার্থের অপব্যবহারের শিকার হওয়া অল্পবয়সী প্রজন্মকে রক্ষা করতে, এবং এর জাল থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে সরকার কিছু প্রকল্প এবং নীতিমালা গ্রহণ করেছে। নীচে স্থানীয় সরকার দ্বারা গ্রহণ করা এই ধরনের কয়েকটি উদ্যোগগুলি তুলে ধরা হল-

  • হরিয়ানা সরকার রাষ্ট্রের আসক্তিগত পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য কেন্দ্রীয় সেক্টর স্কিমের একটি প্রকল্প শুরু করে। মদ এবং মাদক অপব্যবহারের প্রতিরোধী কেন্দ্রীয় প্রকল্প।
  • এখানে এসএসও এবং স্থানীয় সংস্থাগুলি আসক্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
  • প্রশিক্ষণ ও কর্মের মাধ্যমে শৈশব সুরক্ষিত রাখে এমন একটি এনজিও হল “চেতনা”। দিল্লি ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে যাতে শিশুরা মাদকাসক্তির ফাঁদে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ই এই উদ্যোগ।
  • তিরহর কারাগারের ভিতরে ‘চরিত্র নিরমান সেবাদ্বার’ ট্রাস্ট, জেলে কয়েদীদের মধ্যে মাদকাসক্তি নিরাময় এবং সামাজিক সংস্কার পরিষেবা দিয়ে থাকে। তারা একটি চমত্কার সত্য নিয়ে এসেছিল যে প্রায় ২0 শতাংশ কারাবন্দীই তামাক, মদ,স্ম‍্যাক বা গাঁজার মত কোন না কোন নেশায় আসক্ত। তাই কারাগারগুলোতে আরও পরামর্শদাতা নিয়োগের জন্য প্রয়োজন আছে।