ডিসেম্বর 24, 2024

টিবিতে কাজ করছে না আর কোন ওষুধই, কী করে মোকাবিলা করবেন এর সাথে?

addiction-71538_1280
Reading Time: 3 minutes

লিখেছেন পরমানন্দ বর্মন, অনুবাদে-মোনালিসা মহান্ত, নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক, মার্চ 10, 2019

বিশ্বব্যাপী মোট টিবি আক্রান্তদের এক চতুর্থাংশ জনই ভারতের! তাই, টিউবারকিউলোসিস রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা ভারতের কাছে দিনে দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিটি আরও জটিল হয়ে উঠছে, কারন টিবির ব্যাকটেরিয়া (মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস) দিনে দিনে বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ঔষধের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধী ব‍্যবস্থা তৈরী করে নিয়েছে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত টিবি কে বলা হয় ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট টিবি’। 2017 সাল পর্যন্ত ভারতে, রেকর্ড সংখ্যক মানুষ (147,000জন) মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট টিবিতে আক্রান্ত। যদিও সরকার থেকেও নতুন করে নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; যেমন, সংশোধিত জাতীয় টিবি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী। কিন্তু টিবি নিয়ন্ত্রণে এই কর্মসূচীর অগ্রগতি বা ফলাফল কোনোটাই খুব একটা সন্তোষজনক নয়। ড্রাগ-প্রতিরোধী টিবি আক্রান্ত ব্যক্তিদের কতটা কষ্ট ও সম‍্যসার মুখোমুখি হতে হয়, তার বোঝার চেষ্টাই এই রোগের মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে।

তাই সম্প্রতি সম্প্রতি মুম্বাইয়ের একটি মেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর গবেষকরা টিবি আক্রান্ত রোগীদের ওপর সমীক্ষা চালান। তাঁরা একটি আক্রান্ত রোগী, তার চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে কি কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় তা বোঝার চেষ্টা করেন। তারা মুম্বাইয়ের 15 টি পৌরসভার ওয়ার্ড থেকে মাল্টি ড্রাগ প্রতিরোধী টিবি আক্রান্ত 46জন রোগীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। গবেষণাটি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল এবং এর ফলাফল PLoS ONE জার্নাল এ প্রকাশিত হয়েছিল।

গবেষকরা দেখেছেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর চিকিৎসা করার সময়ে, তা জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীনেই হোক বা ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে ; রোগ সাধারণ টিবি থেকে মাল্টি ড্রাগ প্রতিরোধী টিবি তে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকে রোগীরই এই গল্প টা আলাদা আলাদা। সবথেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হল যে বেশিরভাগ রোগীই কিন্তু এই রোগের সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু, বেশিরভাগ রোগীই যখন টিবির বিভিন্ন ধরনের লক্ষণগুলো দেখেছেন, তাও সেটিকে আমল দেননি আর ডাক্তারের কাছেও যান নি! পরে যখন অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে, তখন তারা চিকিৎসকের কাছে গেছেন। এমনকি যে এই রোগে আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারাও!

গবেষকরা দেখেছেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিভি আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাছাকাছি কোন ক্লিনিকে বা পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন পরিচিত এরকম কোন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই ধরনের চিকিৎসকেরা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট টিবির মত জটিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যথেষ্ট পারদর্শী নন বা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত নন; আর তাতেই চিকিৎসার আরো অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। অবশেষে, এই রোগীরা যথাযথ যত্ন ও চিকিৎসার জন্য; এ ধরনের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক ব্যবস্থাপনা যুক্ত চিকিৎসালয়ে উপস্থিত হয়েছেন।

গবেষকরা আরও বলেছিলেন “যে সময় ও ধৈর্য্য, ​​কর্মক্ষেত্রে চাপ, বেসরকারি খাতে চিকিৎসখর খরচ এবং ডাক্তারদের কাছ থেকে সঠিক নির্দেশনার অভাবের কারণে; বেশিরভাগ রোগীকেই আবার চিকিৎসার জন্য অন‍্য স্থানে বা অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়েছে। যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতিকে আরও বিলম্বিত করছে। ওষুধের সাম্প্রতিক বিকাশ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায়, একই পরীক্ষা কেন বার বার করা হচ্ছে তা রোগীরা বোধগম্য করতে পারেন না; এতে অনেকই চিকিৎসা চলাকালীন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

গবেষণায় এও দেখা গেছে যে যদিও সরকারি হাসপাতালে ড্রাগ রেজিস্টেন্ট টিবির চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, তবুও বেশিরভাগ রোগীই এগ চিকিৎসা পদ্ধতির উপর ঠিক আস্থা রাখতে পারেন না।
এর মূল কারণ তারা রোগীকে বা রোগীর বাড়ির লোককে ড্রাগ রেজিস্টেন্ট টিবি কী; বা এর চিকিৎসা করা কতটা জরুরি এবং জটিল; বা চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে একটি রোগীকে কি কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে; বা যে সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করা হবে তার কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে সেসব সম্পর্কে কোন তথ্যই দেন না।

বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে; “সংশোধিত জাতীয় টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের মতো প্রোগ্রামগুলি এমন ভাবে বাস্তবায়িত করা উচিত যাতে রোগী ও তার তার বাড়ির লোকজন সঠিক ভাবে রোগটি গুরুত্ব বুঝতে পারে, চিকিৎসা পদ্ধতি, বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির খরচ ইত‍্যাদি। সর্বোপরি, কোনো প্রাইভেট চিকিৎসকের কাছে বা বাড়ির কাছাকাছি কোন ক্লিনিকে চিকিৎসা করানোর বদলে, সরকারি প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো টা কতটা সুবিধাজনক সে সম্পর্কেও মানুষ যাতে ওয়াকিবহাল হয়ে ওঠে।”

তারা বলেন, “আমাদের এমন স্বাস্থ্যসেবা দরকার; যেখানে জনসাধারণ ও বেসরকারি খাতগুলি একে অপরের সমর্থনে ও পরিপূরক হিসেবে সমান অংশীদার হয়ে কাজ করে।”
2015 সালের মধ্যে সরকার, ভারত থেকে টিবি নির্মূল করার যে লক্ষ্য রেখেছে, তা অর্জনে এই গবেষণার ফলাফলগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই গবেষণার সুপারিশগুলি কেবল মুম্বাই শহরে বা মহারাষ্ট্রের রাজ্যে নয়, সমগ্র জাতির মধ্যে টিবি নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করবে”।