অন্ত্রের ক্ষত নিরাময়ে বেরি এব্ং ডালিম
লিখেছেন – পরামানন্দ বর্মন; অক্ষর দানে- মোনালিসা মহান্ত
শুধুমাত্র পুষ্টির উৎস হিসাবে কাজ করাতেই ফলের গুণাবলি আর আটকে রইল না। এবার থেকে অন্ত্রের প্রদাহ জনিত রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করবে ফল সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এলো।
ইনস্টিটিউট অফ স্টেম বায়োলজি অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন (বাঙ্গালুরু); সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার প্লাটফর্মস (বেঙ্গালুরু); ইউনিভার্সিটি অফ লুইসভিল (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র); টোলীয় কলেজ অফ মেডিসিন এন্ড লাইফ সাইন্স (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র); ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির (কানাডা) একঝাঁক গবেষক এমনটাই জানিয়েছেন।
বেরি এবং ডালিম মতো ফল অন্ত্রে গিয়ে ভাঙ্গার সময় এমন কিছু যৌগ নিঃসরণ করে যেগুলি বহু প্রদাহজনক আন্ত্রিক রোগের নিরাময়ক। এই খবর বিশ্বব্যাপী লক্ষ্ লক্ষ্ আন্ত্রিক প্রদাহ জনিত রোগীর কাছে সুখবর বয়ে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই গবেষণার বরাদ্দ অর্থ বহন করেছে ভারতবর্ষের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অফ হেলথ। এই গবেষণাটির ফলাফল ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ক্রোন ডিজিজ ,আলসার কোলাইটিস এই ধরনের অন্ত্রের প্রদাহ জনিত রোগ গুলি সাধারণত ত্রুটিযুক্ত অনাক্রমতার ফলাফল। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পাচন তন্ত্রের নালীতে তীব্র জ্বালা বা প্রদাহ দেখা যায়। এই ধরনের রোগ গুলির চিকিৎসার সুযোগ ও খুবই সীমিত। আমাদের অন্ত্রের চারিদিকে একটি পাতলা কোশাবরণী থাকে, যা অন্ত্রকে দেহের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে রাখে। কোন কারণে এই আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ গুলি আমাদের দেহের সাথে মিশতে শুরু করে দেয়। এখান থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রদাহ জনিত সমস্যা গুলি সৃষ্টি হয়।
কিভাবে নষ্ট হয় অন্ত্রের আবরণী? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ‘টাইট জংশন প্রোটিন’ নামে কিছু প্রোটিন আস্তরণ গঠনকারী কোষগুলিকে একে অপরের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকতে সহায়তা করে। কিন্তু অন্ত্রের প্রদাহে ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ‘টাইট জাংশন প্রোটিন’ গুলির পরিমাণ কমে যেতে থাকে। আর তার ফলেই অন্ত্রের আবরণীকে সৃষ্টি হয় ক্ষতের।
তবে হ্যাঁ শুধুমাত্র ভেরি বা ডালিম খাওয়াটাই কখনো এই ধরনের প্রদাহ জনিত রোগ নির্মূল করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। আমরা কেবল এই ফলগুলি খেয়ে আমাদের অন্ত্রে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলিকে কিছুটা সহায়তা করতে পারি, কারণ এই ফলে ‘অ্যলেগিক অ্যসিড’ উপস্থিত থাকে, যার থেকে অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া গুলি ‘ইউরোলিথিন’ নামক যৌগ তৈরি করে। বিভিন্নভাবে প্রকার ‘ইউরোলিথিন’ এরমধ্যে ‘ইউরোলিথিন A’ নামক যৌগটির প্রদাহ নিবারক, বয়স নিরোধক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত বিভিন্ন গুণাবলী আছে। গবেষকদের গবেষণার বিষয়বস্তুই ছিল এই ‘ইউরোলিথিনি A’ নামক যৌগটি।
এছাড়াও তারা গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে UAS03 নামক একটি যৌগ সংশ্লেষ করেছেন। তাদের দাবি এটিও ‘ইউরোলিথিনি A’ মত গুণসম্পন্ন। তারা এটাও প্রমাণ করে দিয়েছেন এই দুই যৌগের উপস্থিতির ‘টাইট জংশন প্রোটিন’ গুলির উপস্থিতিতে বাড়িয়ে তোলে। অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা; আর এইজন্য অন্ত্রে সংশ্লেষিত ‘ইউরোলিথিনি’ এর মাত্রাও সকলের ক্ষেত্রে আলাদা। গবেষকদের পরামর্শ অন্ত্রের প্রদাহে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাইরে থেকেও ‘ইউরোলিথিনি’ গ্রহণের মাধ্যমেই সমস্যার অনেকটাই সুরাহা করতে পারবেন এবার থেকে। গবেষণাগারের ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা এমনটাই প্রমাণ করেছেন। এছাড়াও অন্যান্য লিভার সংক্রান্ত সমস্যা, মদ্যপানের কারণে লিভারের ক্ষত, স্নায়বিক বিকলতা, কোলন ক্যান্সার এই সমস্ত ক্ষেত্রেও তাদের গবেষণার ফলাফল আলোর দিশারী হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।