এপ্রিল 29, 2024

‘উপকারি’ ব্যাকটেরিয়া-আপনার সারাজীবনের বন্ধু

Reading Time: 2 minutes

কলমে ও অনুবাদে সৌরা (পিএইচডি), নিউক্র্যাড হেলথ এর বাংলা প্রতিবেদন

বেশিরভাগ মানুষ সাধারণভাবে এটাই জানে যে ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর, মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং তাদের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো। আসলে কথাটি আংশিক সত্যি কারণ আপনার অন্ত্রের মধ্যেই এই জীবাণু প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যারা ‘উপকারি’! হ্যাঁ, আমাদের পাচনতন্ত্রের (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্ট) মধ্যেই অসংখ্য আণুবীক্ষণিক জীব বসতি গেড়ে আছে যারা একত্রে ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ নামে এক ক্ষুদ্র-বাস্তুতন্ত্র (মাইক্রো-ইকোসিস্টেম) রচনা করে। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া পাচনে সাহায্য করে এমনকি আমাদের সুখানুভুতি এবং অন্যান্য মানসিক ক্রিয়াকলাপেও এদের অবদান আছে! এই ক্ষুদ্র-বাস্তুতন্ত্রের আদি বাসিন্দা হল বিফিডোব্যাক্টেরিয়াম শ্রেণীর ব্যাকটেরিয়া যা মাতৃদুগ্ধে উপস্থিত থাকে। আমরা যত বেড়ে উঠি, আমাদের খাদ্যের মাধ্যমে এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে আমাদের অন্ত্রে রকমারি ব্যাকটেরিয়ার সম্ভার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এপর্যন্ত, বিজ্ঞানীরা সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তির কোষ্ঠ (বিষ্ঠা) হতে প্রায় ৪০০ রকমেরও বেশি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করেছেন, যার মধ্যে বেশির ভাগই অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া যা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে বৃদ্ধি পায়। আমাদের পাচন তন্ত্রের উপরের অংশে, অর্থাৎ পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের সমন্বিত অংশ, যে আন্ত্রিক ক্ষরণ হয় তাতে প্রতি মিলিলিটারে প্রায় দশ হাজার আণুবীক্ষণিক জীব থাকে। আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া কোথায় থাকে জানেন কী? আমাদের মুখগহ্বরে! অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া আমাদের জিহ্বার পিছনে বসবাস করে এবং প্রত্যেকবার খাবারের সঙ্গে অন্ত্রে প্রবেশ করে। এমনকি বৃহদন্ত্রের মধ্যেও এই জীবাণুগুলি বহুল পরিমাণে থাকে-এক গ্রাম মনুষ্যকোষ্ঠের মধ্যে এর পরিমাণ প্রায় ১০০০০ কোটি! অন্ত্রের জীবাণুগুলি আমাদের অন্ত্রের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকার ফলে রোগপ্রদানকারি ব্যাকটেরিয়া সহজে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। বহিরাগত জীবাণুর সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে এই আভ্যন্তরীণ জীবাণুকুল প্রধান অন্তরায় হিসাবে কাজ করে।

অন্ত্রের এই জীবাণুগুলির ভারসাম্য নষ্ট হলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হল ব্যাকটেরিয়াল ডায়েরিয়া। আমাদের যকৃত দ্বারা উত্পাদিত পিত্তরসে জীবাণুনাশক ক্ষমতা আছে এবং এই রস এইসমস্ত জীবাণু নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরের মধ্যের এই ‘উপকারি’ জীবাণুতন্ত্র ব্যাকটেরিওসিন নামক জীবাণুনাশক এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ক্ষরণ করে, যেগুলি এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে ও শরীরের মধ্যে বহিরাগত রোগপ্রদানকারি ব্যাকটেরিয়ার সঞ্চারণ প্রতিরোধ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে যে অন্ত্রের এই ‘উপকারি’ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা এবং প্রজাতির রকমভেদ স্থূলতা এবং হৃৎপিন্ড ও রক্তসংবাহনপ্রণালীজনিত (কার্ডিওভাসক্যুলার) রোগগুলির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।