অনিদ্রা – কারণ, প্রকার ও এর থেকে মুক্তির উপায়
নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক এর একটি প্রয়াস, কলমে- শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদে-
বিজন সেনগুপ্ত মার্চ 1, 2019
নিদ্রাহীনতা হল এমন একটি অবস্থা, যাতে ঘুম না হওয়ার কারণে প্রতিদিন পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন।
নিদ্রাহীনতার প্রধান কু-প্রভাবগুলি হল:-
- মানসিক অবসাদ
- ক্লান্তি, কাজে অনীহা
- হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া
- দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়
- ওজন বৃদ্ধি
- উচ্চ রক্তচাপ
- হৃদরোগের সম্ভাবনা
- মধুমেহ হবার সম্ভাবনা ইত্যাদি।
আপনি কি ঘুম না হওয়ায় প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছেন? বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমানোর শত চেষ্টা করেও কিছুতেই ঘুমাতে পারছেন না? ভয় পাবেন না, এটি একটি অতি সাধারণ সমস্যা। এই পৃথিবীর নানান প্রান্তের হাজারো মানুষ আপনারই মতো একই সম্যসার সাথে প্রতিদিন লড়াই করে চলেছেন।
একদিন কম ঘুম বা ঘুম না হলে, পরদিন কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়,সেই অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের প্রায় কমবেশি রয়েছে। কিন্তু এই ঘটনাই যখন প্রতিদিন কারো সাথে হয়, তখনই শুরু হয় সমস্যা। দেখা দেয় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক জটিলতা।
এখানে নিদ্রাহীনতার কারণ, প্রকার ও এর থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নিদ্রাহীনতা হলো এমন একটি অবস্থা যখন নিত্যদিন ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটে অথবা ঘুম না আসার কারণে সারা রাত জেগে মানুষকে কষ্ট পেতে হয়।দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ নিদ্রাহীনতায় ভোগে থাকে তাহলে সে ক্লান্ত এবং উদ্যমহীন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় কাজ করার ক্ষমতায় সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেন। ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেকক্ষেত্রেই, এই ধরনের মানুষ গুলোর জীবনের মূলস্রোত থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, অনেক সময় মূল স্রোতে ফিরে আসাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
পৃথিবীর নানা প্রান্তের লক্ষ্লক্ষ্ মানুষ প্রতিনিয়ত কষ্ট পেয়েই চলেছেন।
বর্তমান দিনে নিদ্রাহীনতায় এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যে আমেরিকার অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন 2018 সালের 12 ই মার্চ দিনটি ‘নিদ্রাহীনতা সচেতনতা দিবস’ রুপে ঘোষণা করেছেন। আমেরিকার প্রায় শতকরা 30 থেকে 35 শতাংশ পূর্ন বয়স্ক মানুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে নিদ্রাহীনতার কবলে পড়েছেন। প্রায় শতকরা 15 থেকে কুড়ি শতাংশ মানুষ এই নিদ্রাহীনতার অভিজ্ঞতা একটানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে অনুভব করেন।
নিদ্রাহীনতার প্রকারভেদ:-
ঘুমের ব্যাঘাত এর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে নিদ্রাহীনতা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- প্রাথমিক নিদ্রাহীনতা এবং উচ্চ নিদ্রাহীনতা।
প্রাথমিক নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাঝেমধ্যেই রাতে ঘুম না হওয়ার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হযন এবং এক্ষেত্রে তেমন কোন শারীরিক পরিবর্তন বা সমস্যা দেখা যায় না।
কিন্তু উচ্চ-নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্যসা দীর্ঘদিনের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাঁপানি , হতাশা, গলা জ্বালা, ক্যান্সার, নেশা দ্রব্য ব্যবহার করা, ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় জন্য দেখা যায়।
নিদ্রাহীনতার দীর্ঘতা অনুসারে আবার ডাক্তারেরা একে ২ভাগে ভাগ করেছেন- সাময়িক এবং ক্রমাগত।
সাময়িক বা কম সময় ধরে নিদ্রাহীনতা হলে এটি তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না এটি মূলত কয়টি রাত বা কয়েক সপ্তাহ খুব বেশি হলে তিনমাস দেখা যায়, তার বেশি নয়। কিন্তু ক্রমাগত নিদ্রাহীনতার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এটি বেশ কয়েক মাস ধরে চলতেই থাকে এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা বা জটিলতার প্রকোপ দেখা যায়।
নিদ্রাহীনতার লক্ষণ গুলি কি কি?
- ঘুম আসতে কষ্ট হওয়া বা জেগে থাকা।
- প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ভেঙে যাওয়া।
- দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব।
- বিভিন্ন ধরনের মানসিক পরিবর্তন।
- ক্লান্তি এবং অবসন্নতা,মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া।
- হতাশায় ভুগতে থাকা ইত্যাদি।
নিদ্রাহীনতার কারণগুলি হল:-
- সাময়িকী নিদ্রাহীনতার পিছনে যে সমস্ত কারণগুলি দেখা যায় সেগুলো হলো,
- অতিরিক্ত চাপ যুক্ত জীবন।
- চাকরি চলে যাওয়া।
- খুব প্রিয় জনের মৃত্যু।
- সম্পর্ক বিচ্ছেদ।
- শারীরিক বা মানসিক আঘাত ।
- বা কোন খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া।
- চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া।
- শয়নকক্ষে অতিরিক্ত আলো, কোলাহল।
- বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
- অফিস সময়ের ঘন ঘন পরিবর্তন (দিন/রাত)।
- এছাড়াও হতাশা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শারীরিক যন্ত্রণা, মহিলাদের মেনোপজ ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ডাক্তারেরা দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলেছেন একটা অংশ ছাড়া প্রাকৃতিক উপায় এবং ঔষধ এর উপর ভিত্তি করা। আমেরিকান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস উল্লেখ করেছেন ‘বিশ্বস্ত আচরণগত চিকিৎসা’ বড়োদের ক্ষেত্রে ক্রমাগত নিদ্রাহীনতা থেকে মুক্তির জন্য কার্যকরী। এছাড়া সাধারণ কিছু নিয়ম- একটি আরামদায়ক বিছানায় ঘুম,শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, গভীর ঘুম হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।
শোবার সময় রুমে আলো বন্ধ করে,কিম্বা হাল্কা আলো ব্যবহার করা কম আলো মেল্টোনিন নামক হরমোন তৈরি করে গভীর ঘুম আনতে সহায়তা করে। শোবার সময় হাল্কাভাবে গান চালানো বা একটি গল্পের বই পড়ার চেষ্টাও তাড়াতাড়ি ঘুম আনতে পারে। প্রতিদিন প্রাণায়াম এবং যোগাভ্যাস, শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার পাশাপাশি, ভালো ঘুমে সাহায্য করে। বেডরুমের স(ঘুমের আগে) টিভি, মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট গুলির ব্যবহার কম করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্