শিশুদেহের কিছু সাধারণ অ্যালার্জি
নিউক্রাড হেল্থ ডেস্ক-এর প্রতিবেদন, অনুবাদে- মোনালিসা মহান্ত
আপনার বাচ্চারা কী যখনই ধুলো, গন্ধ, ফুলেরপরাগ, মাইটস, বা কোন নির্দিষ্ট খাবারের মতো আরও কিছু জিনিসের সংস্পর্শে এলেই অ্যালার্জিতে ভোগে? আচ্ছা, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জি একটি সাধারণ ঘটনা। আমেরিকার অ্যাজমা ও অ্যালার্জি ফাউন্ডেশনের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায়, 30 শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং 40 শতাংশ শিশু তাদের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখায়। অ্যালার্জির কারনে, আমেরিকার স্কুলে প্রায় 2 মিলিয়ন ছাএ-ছাত্রীর অনুপস্থিতির থাকে। এখানে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জিগুলির কারণ এবং বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অ্যালার্জি কি?
অ্যালার্জি এমন একটি শর্ত যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা তন্ত্র (ইম্যুনিটি সিস্টেম) শরীরের বাহ্যিক পদার্থের উপস্থিতির বিরুদ্ধে (সম্ভবত ক্ষতিকারক) অস্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। এই বহিরাগত পদার্থ ‘অ্যালার্জেন’ হিসাবে পরিচিত।সাধারণ কিছু অ্যালার্জৈন হল ধুলো, পরাগ, খাদ্য ও ঔষধ ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এইসব অ্যালার্জেন গুলি কোনো ক্ষতি করে না , তাদের দেহও কোনো প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
অ্যালার্জির সময়, কিভাবে আমাদের ইম্যিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া করে ?
যখনই বাইরের কোনো বস্তু বা অ্যালার্জেন মানুষের দেহে প্রবেশ করে, তখন ইমিউন সিস্টেমটি অবিলম্বে সেটিকে চিহ্নিত করে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ইম্যিউন সিস্টেম বহিরাগত কণাগুলি ধ্বংস করার জন্য অ্যান্টিবডি বা ইমিউনোগ্লোবুলিন E (IgE) উৎপন্ন করে। এবং কণাগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এছাড়াও, ইমিউনোগ্লোবুলিন মানুষের রক্তে, ‘হিস্টামিন’ নামক এক প্রকার পদার্থ মুক্ত করে অ্যালার্জির লক্ষণ তৈরি করে। অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া চলাকালীন যে সাধারণত চোখ, গলা, নাক, ত্বক এবং ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক এক ধরনের অ্যালার্জেন বারবার একই ধরনের প্রভাব ফেলে।
শিশুদের মধ্যে যে সমস্ত অ্যালার্জি সাধারণ দেখা যায়?
শিশুদের মূলত কিছু নির্দিষ্ট জিনিসে অ্যালার্জি দেখা যায়।
যেমন- ধুলো, ছোট ছোট কীট, ফুলের পরাগ,মোল্ড, পোষা প্রাণী, এবং একটি নির্দিষ্ট ধরনের খাবার। নিম্নে কিছু অ্যালার্জেন-এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল:-
ডাস্ট-মাইট:-
শিশুসহ প্রায় ২0 মিলিয়ন আমেরিকান ডাস্ট-মাইটের কারণে অ্যালার্জিতে ভোগেন। ডাস্ট-মাইট হল এক প্রকার অনুবীক্ষনীক কীট, যারা মানুষের শরীরের থেকে মৃত কোষে অবস্থান করে। সাধারণ লক্ষণগুলি- চোখে চুলকানি এবং লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে অনবরত জল পড়া ; বন্ধ নাক, এবং অনবরত হাঁচি ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, জুলাই এবং আগস্ট মাসের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সহজেই বেশি ছড়িয়ে পড়ে; ফলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এই সময় ডাস্ট-মাইট অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে যায়। এর থেকে মুক্তির জন্য কার্যকর উপায়গুলি হল্ – প্লাস্টিকের মোড়ক দিয়ে বালিশ এবং কুশন টাইট করে মুড়ে রাখা, 130°F গরম জলছ গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং বিছানা পরিষ্কার করা এবং একটি HEPA ফিল্টার (হাই এফিসিয়েন্সি পারটিক্যুলেট এয়ার) যুক্ত ভ্যাকুম ক্লিনার দিয়ে কার্পেট এবং গদিগুলি পরিস্কার করা।
ফুলের পরাগরেণু থেকে অ্যালার্জি:-
ডাস্ট-মাইট অ্যালার্জির পরে, শিশুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরাগ থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার বিভাগ ২014 সালে একটি ‘জাতীয় স্বাস্থ্য সাক্ষাৎকার’ জরিপ পরিচালনা করেছিল, যাতে দেখা যায় যে সেই সময়ের মধ্যে 8 শতাংশ শিশু পরাগ অ্যালার্জি থেকে জ্বরের শিকার হয়েছিল। ফুলের পুরুষ প্রজনন অঙ্গ হল এই পুংরেনু। ফুলে প্রচুর পরিমাণে পরাগরেণু তৈরী হয়, এবং প্রায়শই পরাগযোগের জন্য বায়ুর সাথে ছড়িয়ে পড়ে।
এই অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণগুলি- চোখ থেকে জল পড়া, বন্ধ নাক, এবং হাঁচি।
যদিও কিছু শিশু সারা বছর এই অ্যালার্জিতে ভুগতে থাকে, অন্যরা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আক্রান্ত হয়। যেমন যে সব ব্যক্তি কেবলমাত্র বার্চ গাছের পরাগরেণুতেই সংবেদনশীল, তারা সাধারণত বসন্ত কালে (বার্চ গাছগুলির প্রজননকালে) বেশি আক্রান্ত হন।
বার্চ পরাগ ছাড়াও ওক পরাগ, ঘাস পরাগ এবং রাগওয়েড পরাগরেণু ও একই লক্ষণগুলি দেখায়।
খাবারের থেকে অ্যালার্জি:-
এসব ছাড়াও শিশুরা বিভিন্ন খাদ্যে এলার্জি প্রবণ হয়। এবং আনুমানিক 8 শতাংশ বাচ্চাদের প্রতিদিনের খাদ্যদ্রব্যগুলিতে, যেমন- গরুর দুধ, ডিম, চিনাবাদাম, মাছ এবং শেলফিশ, গাছ বাদাম, গম থেকে তৈরী বিভিন্ন খাদ্য এবং সোয়াবিনেও অ্যালার্জির উপসর্গ দেখায়। বাচ্চাদের খাদ্য অ্যালার্জির প্রায় ২ থেকে 3 শতাংশই গরুর দুধ বা কৌটজাত দুধের থেকে হয়। তবে, সাধারণত কৈশরকালে এই অ্যালার্জি বেশি বেশি দেখা দেয়। দুধে উপস্থিতি ‘কেসিন’ নামক প্রোটিন, অ্যালার্জির প্রধান কারণ।
খাদ্য অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণ গুলি হল- বমি, পেটব্যথা, একটানা কাশি, জিহ্বা উপর ফুসকুড়ি জাতীয় র্যাশ, শ্বাস কষ্ট, এবং পালস রেট কমে যাওয়া ইত্যাদি।
উপরে বর্ণিত অ্যালার্জিগুলি, শিশুর দেহে হওয়া সাধারণ কিছু অ্যালার্জি ।
অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞরা ‘অ্যালার্জিস্ট’ হিসাবে পরিচিত হন। তারা সাধারণত অ্যলার্জি নির্ণয়ের জন্য ত্বক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে আপনার ফিজিসিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করুন।