ডিসেম্বর 24, 2024

দ্বিতীয়বার আবারও এক HIV আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছেন… চিকিৎসা জগৎ-এ ইতিহাসে এ নিয়ে দুই বার এইরকম বিরল ঘটনা ঘটলো:-

1200px-AIDS_and_HIV_prevalence_2009.svg
Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন । কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদে-মোনালিসা মহান্ত মার্চ 16, 2019

2019 সালের মার্চ HIV চিকিৎসার সাহায্যে দ্বিতীয়বার আর এক রোগীকে সম্পূর্ণরূপে রোগ মুক্ত হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বব্যাপী থাবা বসানো HIV রোগ প্রতিরোধে এক বিশাল সাফল্য। ‘লন্ডন রোগীর’ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পর বিজ্ঞানীরা প্রায় দীর্ঘ 1২ বছর পরে আবার এই মাইলফলক অর্জনে সফল হলেন।
গবেষকরা বিখ্যাত জার্নাল ‘নেচার’-এ এই বিরল কৃতিত্ব প্রকাশ করেছেন। এবং রেট্রোভাইরাসের উপর হওয়া একটি সম্মেলনে তাদের এই সাফল্যের সম্পর্কে খুঁটিনাটি সমস্ত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এবং স্যাটেলাইট ভাইরাসগুলি এডস্ আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সুযোগপূর্ব কী ধরনের সংক্রমণ করে সে বিষয়েও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। যদিও বিজ্ঞানীরা একে দীর্ঘমেয়াদী উপশম পদ্ধতি হিসাবে তুলে ধরেছেন, তবুও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘এইচআইভি সংক্রমণের প্রতিকার’ বলেই অভিহিত করছেন।

কিভাবে লন্ডন রোগীর এইচআইভি সংক্রমণ নিরাময় সম্ভব হয়েছিল?
একটি নির্দিষ্ট দাতার কাছ থেকে অস্থিমজ্জা নিয়ে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। অস্থি মজ্জা থেকে জাত কোষ এর জিনের পরিবর্তনের ফলে এইচআইভি সংক্রমণের অগ্রগতির থেমে যায়।
যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাইলফলক অর্জনে সহায়তা করেছিল। এর পর প্রায় আঠারো মাস অ্যান্টিরট্রোভেরাল থেরাপি চালানোর পরে ‘লন্ডন রোগীর’ মধ্যে এইচআইভি নির্মূল হয়েছে বলে জানানো হয়।

HIV কী?
হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসটি হলো এমন মারাত্মক ভাইরাস যা কোনো ব‍্যক্তিকে একবার আক্রমণ করলে যদি তার সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে সে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমশ অক‍্যুয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম(AIDS) এর দিকে ঠেলে দেয়।
এটি অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুদের থেকে অনেকটাই আলাদা, একবার যদি দেহে প্রবেশ করে তাহলে এর থেকে নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব! এইজন্যই চিকিৎসকেরা যদি দেখেন যে রোগীর দেহে HIV পজেটিভ তখন তারা জানিয়ে দেন এটি সারা জীবনধরে ভোগ করতে হবে।
HIV মাতৃদুগ্ধ বীর্য,যোনিরস, বা রক্তের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

মানবদেহে HIV ভাইরাস প্রবেশ করার পর কী ঘটে?
এই ভাইরাস মানুষের অনাক্রমতা তন্ত্রকে সরাসরি আক্রমণ করে এবং cd4 এবং T কোষগুলিকে মূল লক্ষ্য বস্তু করে, কারণ এই কোষগুলোই মানব দেহের বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি যথাযথ চিকিৎসার না করে, তবে যত দিন যায় ততই আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে cd4 বা T- লিম্ফোসাইট কোষের সংখ্যা কমে যেতে থাকে, এর ফলে রোগীর অনাক্রমতা তন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ অন্যান্য রোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
আর এই দুর্বল অনাক্রমতা তন্ত্রের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সুযোগবাদী জীবাণুগুলি (অপরচুনিষ্টিক অর্গ্যানিজম) ক্রমশ আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে আক্রমণ করতে থাকে, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি HIV শেষ পর্যায়ে, এইডসে আক্রান্ত হন।
বর্তমানে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ, ২০১৭সালে বিশ্বব্যাপি প্রায় 36.9 মিলিয়ন মানুষ HIV আক্রান্ত হয়েছে। AIDS পর্যায়ে পৌঁছানোর পর আক্রান্তের আয়ু মাত্র তিন বছরের আশেপাশে।

HIV সংক্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ে গুলি কি কি?

প্রথম পর্যায় ) HIV দ্বারা সংক্রমণ:-
প্রথম পর্যায়ে ভাইরাস সংস্পর্শে আসার পর 2 থেকে 4 সপ্তাহের মধ্যে দেহে সংক্রমণ ঘটে। রোগীর দেহে সাধারণ ফ্লু-এর লক্ষণগুলি দেখায় যা যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের রোগীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। এই স্তর অ‍্যাকিউট এইচআইভি ইনফেকশন হিসাবে পরিচিত। এই সময় রোগীর রক্তে প্রচুর পরিমাণ HIV জীবানু পাওয়া যায়। কিন্তু রোগীরা এই পর্যায়ে প্রায়ই HIV সংক্রমণ সম্পর্কে জানতে পারেন না।

দ্বিতীয় পর্যায়) পর্যায় ২: ক্লিনিকাল ল্যাটেন্সি (HIV ভাইরাসের নিষ্ক্রিয়তা )
এইচআইভি সংক্রমণের এই দ্বিতীয় পর্যায় ক্লিনিক্যাল ল্যাটেন্সি নাম পরিচিত। এই পর্যায়ে, রোগীর শরীরের মধ্যে ভাইরাসটি সক্রিয়ভাবে অবস্থায় থাকে ; কিন্তু রোগীর দেহের মধ্যে খুব ধীরে ধীরে বংশবিস্তার করে। এই সময় রোগীর দেহে কোন রকম উপসর্গ প্রকাশিত হয় না।
যদি এই সময়েই রোগ ধরা পড়ে যায়। আর আক্রান্ত ব্যক্তি এইচআইভি সংক্রমণ রোধের জন্য এই পর্যায়ে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (অ‍্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি বা ওষুধ) গ্রহণ করে, কয়েক দশক ধরে রোগীর রোগ দমন করা যেতে পারে।

তৃতীয় পর্যায়) অ‍্যাকুয়ার্ড ইম‍্যিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম (এইডস) :-
এই রোগের তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ে রোগী এইডসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগীদের ইমিউন সিস্টেমটি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, এবং তারা খুব সহজেই কোনও ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস ‌দ্বারা সংক্রামিত হয়ে যায়।
cd4 কোষের সংখ্যা এই পর্যায়ে কমে প্রতি ঘনক মিলিমিটারে‌ মাত্র 200 তে এসে দাঁড়ায় , যেখান সুস্থ মানুষদের দেহে cd4 কোষের সংখ্যা প্রায় 500-1,500 / ঘন মিলিমিটার।

HIV সংক্রমণ নির্নায়ক পরীক্ষা:-
ডাক্তাররা HIV সংক্রমণের সনাক্তকরণের জন্য অনেক পরীক্ষার নির্দেশ দেন। অ্যান্টিবডি- অ্যান্টিজেন টেস্ট, ওর‍্যা-কুইক HIV টেস্ট, এবং নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্ট ইত‍্যাদি। এগুলো HIV সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি।

অবশেষে, আমরা বলতে পারি, HIV প্রতিকার, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বিশাল সাফল্য। বিশ্বের সব রোগীরা মারাত্মক রোগ নিরাময় জন্য ‘বোন ম‍্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন’ আরও বিস্তৃত প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে।