জেনে নিন আপনার শিশুর “টিকাদান কর্মসূচির” খুঁটিনাটি।
নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক এর একটি প্রয়াস, কলমে- শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদে- মোনালিসা মহান্ত, ফেব্রুয়ারী 26, 2019
আপনারা নিশ্চয় খেয়াল করেন নবজাতককে ছাড়ার সময় হাসপাতাল থেকে বা হেলথ্ সেন্টার থেকে একটি টীকাকরণ কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই অবাক হয়ে ভাবেন এত ছোট্ট একটি শিশুকে টীকা দেবার কী প্রয়োজন। অনেক সাধারণ মানুষের মনেই টিকাকরণের সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন আছে। আবার অনেকেরই সময় সময় টিকাকরণ করানোটা কতটা জরুরি, সেই বিষয়ে সঠিক ধারণাই নেই।
আমরা কমবেশি সবাই জানি, মায়ের বুকের দুধে থাকা অন্টিবডি অনেক ক্ষতিকারক সংক্রমণের হাত থেকে সদ্যজাতককে রক্ষা করে। কিন্তু শিশুর 1বছর বয়সের পর থেকে এই সুরক্ষা বলয় ক্রমশঃ দূর্বল হয়ে পড়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সদ্যোজাত এর মায়ের স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য, কিম্বা ব্যস্ত সময় সূচির কারণে অনেক মা-ই তার শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ দিতে পারেন না। এইধরনের শিশুর দেহে রোগ জীবাণু সহজেই আক্রমন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিলে জানতে পারবেন ভ্যাকসিন একটি শিশুর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এটি আসলে শিশুর দেহে প্রয়োজনীয় দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে তোলে।
এই লেখাটিতে আজ, টীকা কি? টীকাকরনের গুরুত্ব, জন্ম থেকে 5 বছর বয়স পর্যন্ত টীকাকরন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
টীকা কি?
আমাদের চারিদিকে অসংখ্য রোগ-জীবাণুর সর্বদা ছড়িয়ে আছে। তাই মানব শরীরকে নিয়মিত একাধিক রোগ জীবাণুর সংস্পর্শে আসতেই হয়। আমাদের দেহের অনাক্র্যম তন্ত্র, আমাদেরকে এই সমস্ত রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। আসলে হয় কি, অনাক্র্যম ব্যবস্থা এই সমস্ত রোগ জীবাণুকে অচেনা পদার্থ (অ্যন্টিজেন) হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এই সমস্ত ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নির্দিষ্ট অ্যন্টিবডি তৈরী করে। এভাবেই আমাদের দেহ রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পায়।
টিকা বা প্রতিষেধক হল এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ বা মিশ্রণ যা অ্যান্টিবডি তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে, দেহে কোন একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা (বা অনাক্রম্যতা) জন্মাতে সাহায্য করে। কোন নির্দিষ্ট রোগের টিকা হল কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট রোগটিরই বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বর্ধনকারী ক্রিয়া সম্পন্ন জৈব উপাদান। এতে সাধারণত মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু অথবা তার বিষ থেকে তৈরী হওয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু-সদৃশ উপাদান থাকে। যখনই টিকার উপাদান দেহের ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের দেহের অনাক্রমতা তন্ত্র – এটিকে বাইরের বস্তু হিসাবে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধে অন্টিবডি তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে যদি শরীরে ঐ জীবাণুরা আবার আক্রমণ করে,তখন অনাক্র্যমন তন্ত্র তার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
টিকাকরন কি নিরাপদ?
যখন আপনি জেনে গেছেন যে আদতে টিকাকরণের সময় খুব কম পরিমাণে হলেও রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুই নবজাতকের দেহের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়! তাহলে নিশ্চয়ই আপনি ভাবছেন,এর নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ক্ষতিকর দিক আছে। বা আদেও টীকাকরন নিরাপদ কীনা! তাহলে আপনি জেনে খুশিই হবেন যে টিকাকরণ একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ প্রক্রিয়া। টিকাকরণ কর্মসূচি এর ফলেই ভারতবর্ষের মত উন্নয়নশীল দেশগুলি বিভিন্ন ধরনের রোগ – যেমন গুটি বসন্ত, পোলিও, টিউবারকুলোসিস, টিটেনাস এর মত মারন রোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
টিকাকরণের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, তবে অনেক সময় ছোট ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুব হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন জ্বর, দেহের যে অংশে টিকা দেয়া হয়েছে চামড়ার নিচে সেই অংশে গুটি সৃষ্টি হওয়া,বা সেই জায়গা ফুলে যাওয়া, ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। তবে এই সমস্ত উপসর্গ কয়েক দিনের মধ্যেই, নিজে নিজে কমে যায়।
টিকা করনের সময়:
টিকাকরণের উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আগ্রহ হবে একটা শিশুকে কখন কখন টিকা দেওয়া প্রয়োজন। টিকাকরন একটি সময় তালিকা তুলে ধরা হলো। এটি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসির) তরফ থেকে দেওয়া।
কোন সময় টিকাদান বন্ধ রাখা জরুরি?
এমন কোনো বিশেষ অবস্থা বা সময় আছে কি যখন কোনো শিশুর টিকাদান বন্ধ রাখার প্রয়োজন হয়?
হ্যাঁ, শিশুবিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যদি কোনো শিশুর কেমোথেরাপির মত চিকিৎসা চলে , তাহলে সেই শিশুর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন বা টিকা করন বন্ধ রাখা হয়। এই সময় টিকাকরণ করলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো দূর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সতর্কতা:
শিশুদিকে যে সমস্ত টিকা গুলি দেয়া হয় সেগুলির কড়া গুণমান যাচাই করার পর, তবেই সেগুলিকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যদি টিকাকরণ এর পর কোন শিশুর জ্বর,ফুসকুড়ি,টীকানেবার যায়গা ফুলে যাওয়া বা যন্ত্রণা হয়; সেক্ষেত্রে সাধারণ জ্বর বা যন্ত্রনা কমার ওষুধ খাওয়াতে পারেন। বেশি কিছু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তবে হ্যাঁ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যদি কোন শিশু সংক্রামক জ্বরে ভোগে তবে সেই সময় টিকাকরণ না করানোই ভালো।
আজ আমাদের এই সমস্ত বিষয়ে সচেতনতা খুবই দরকার, কারণ শিশু স্বাস্থ্য আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক। এই লেখাটি আপনার অনেক প্রশ্নের সমাধান করতে পারে। আরো বিশদে জানার জন্য আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে বা টিকাদান কেন্দ্রের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।