“খরগোশ জিনের থেকেই হবে দূষণমুক্তি” নজরগড়া আবিষ্কার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের
কলমে : সুভাষ বিশ্বাস
এমনকি নেই এই গোটা ভূখন্ডে যা প্রতিমুহুর্তে আমাদেরকে নিয়ে চলছে মৃত্যুর মহাশূন্যে! বাইরের জীবাণু থেকে শুরু করে ঘটে যাওয়া নানান অবাঞ্চিত অকাঙ্খিত ক্ষতিকর ঘটনার মধ্যে দিয়ে আসা ঘরের মধ্যেকার বাতাস; সর্বত্র, প্রতি নূন্যতম ব্যবধানে প্রতিটি নিশ্বাসে একটু একটু করে ক্ষয় হচ্ছে আমাদের শরীর। বাড়ির ও বাড়ির আশেপাশের জিনিস যেমন ক্লোরিনজল, গেসোলিন, ফুটন্ত জল বা গাড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে নির্গত হয় ক্লোরোফর্ম ও বেঞ্জিন, যা ঘরের বাতাসকে দূষিত করে এবং সৃষ্টি করতে পারে মারণ রোগ ক্যান্সার। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই দূষণ-মুক্তির পথের সন্ধান পেলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিঞ্জানীরা। খরগোশের জিনের সংশ্লেষিত প্রোটিনের দ্বারা, এমনই ক্ষতিকর জৈব যৌগের হাত থেকে ঘরের মধ্যেকার বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখার অভাবনীয় পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
খরগোশ দেহের মধ্যেকার জিন, সাইটোক্রোম P450 2E1 (সংক্ষেপে 2E1) প্রোটিন সংশ্লেষে সম্ভব; যা প্যাথোজ আইভি নামক উদ্ভিদদেহে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাইটোক্রোম P450 2E1 প্রোটিনটি বেঞ্জিনকে ফেনলে এবং ক্লোরোফর্মকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ক্লোরাইড আয়নে পরিবর্তিত করে। ফেনল্ উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরের গঠনে এবং ক্লোরাইড আয়ন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে অপরিহার্য উপাদান। এইভাবে, একটি জিন ইন্করপোরেশন- এর ফলে পরিবর্তিত উদ্ভিদ এবং একটি সাধারণ উদ্ভিদ টেস্ট-টিউবে নিয়ে, বেঞ্জিন ও ক্লোরোফর্ম চালনা করে দৈনিক টেস্ট টিউবের মধ্যেকার পরিবর্তন হিসাবে গবেষকরা লক্ষ্য করলেন, পরিবর্তিত উদ্ভিদের টেস্ট টিউবের মধ্যে বেঞ্জিনের পরিমাণ অষ্টমদিনে কমেছে ৭৫ শতাংশ। আবার, ক্লোরোফর্ম মিশ্রিত টেস্টটিউবের মধ্যে অভূর্তপূর্ণ পরিবর্তন চোখে পড়ল বিঞ্জানীদের, তৃতীয়দিন অবধি টেস্ট টিউবে ক্লোরোফর্ম কমেছে ৮২ শতাংশ। কিন্তু অপরদিকে সাধারণ উদ্ভিদটির পরীক্ষালব্ধ ফল শূন্য।
কিন্তু উদৃষ্ট এই প্রোটিনটি মানুষের দেহ একমাত্র যকৃতেই পাওয়া যায়। যা অ্যালকোহল সংস্পর্শের ফলে ক্রিয়ারত হয়। তাই, ইউ ডাব্লিউ সিভিল এবং পরিবেশগত যন্ত্রবিঞ্জান বিভাগের গবেষণাধ্যাপক ড: স্টুয়ার্ট স্ট্র্যান্ড এটিকে “গ্রীন লিভার”-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে পরিচিত দেন। মনুষ্যদেহে যকৃতে থাকলেও, এটি সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহেই বর্তমান; খরগোশ তাদের অন্যতম।
অপরদিকে একমাত্র প্যাথোজ আইভি ব্যবহারের কারণ স্বরূপ, গবেষক এবং প্রধান লেখক লঙ্ জ্যাঙে্র উক্তি-অনুসারে, “এই উদ্ভিদটি সহজলোভ্য এবং ফুল না হওয়ার কারণে ইহা ঘরের মধ্যে সহজেই ব্যবহারযোগ্য।” সর্বত্র বাতাস বহমান, এমন এলাকায় এই উদ্ভিদের ক্রিয়া আরও জোড়ালো বলেই মনে করছেন বিঞ্জানীরা। যদিও, পরীক্ষাগারের বাইরে এর ক্রিয়া কতটা তা এখনও দেখা বাকি। অবশ্য এই একই পদ্ধতির ব্যবহারে আসবাবপত্র ও রান্নার থেকে নির্গত ফর্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকর জৈবের নিষ্কাশন করা যায় কিনা তা পরীক্ষাগতভাবে খতিয়ে দেখছেন বিঞ্জানীরা।