ডিসেম্বর 24, 2024

জেস্টেশনাল সারোগেসির সাহায্যে 61 বছর বয়সে নাতনিকে গর্ভেধারণ করে জন্মদিলেন এক দাদী!

baby-child-newborn-arms-47219
Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন, কলমে-শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত

25শে মার্চ, 2019 তারিখে, চিকিৎসা জগৎ এ একটি বিরল এবং অত‍্যাশ্চর্য দিন। 61 বছর বয়সে একজন দাদী তার পুত্র ও স্বামীর কথা ভেবে; পুত্রের সন্তানের জন্য গর্ভধারণ করলেন।
সিসিল রেইনেক ইলেডজ তার নিজের নাতনী উমা লুইকে নেব্রাস্কা মেডিক্যাল সেন্টারে জন্ম দিলেন।
এই বয়স্ক মহিলাটি তার ছেলে ম্যাথিউ ইলেজ (32) এবং তার ছেলের স্বামী ইলিয়ট ডঘের্টি (29) জন্য তাদের আগত সন্তান নিজের গর্ভে ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেন। বাচ্চাটি প্রাথমিকভাবে আইভিএফের মাধ্যমে তার বাবার (ম্যাথিউ ইলেজ) শুক্রাণু এবং মাসিমার (লি ইরিবে, 26), ইলিয়ট ডঘের্টির বোন, ডিম্বাণুর মিলনে নতুন প্রান দিয়েছে।
উমা লুইয়ের জন্মকালীন ওজন প্রায় 5 পাউন্ড, 13 আউন্স! যা প্রত্যেকেই অবাক করে দিয়েছে। এমনকি তার দাদী সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবেই উমার জন্ম দিয়েছেন, সিজার করানোর প্রয়োজন পড়েনি।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন যে, জন্মের পর গর্ভাধারিনী মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। এই আশ্চর্য ঘটনাটি একটি নানী এবং মাসির নিঃস্বার্থ ভালবাসার বিরলতম প্রকাশ।

সিসিল রেইনেক ইলেডজ কীভাবে তার নাতনি উমার জন্য ‘জেস্টেশনাল সারোগেট মাদার’ হলেন?
যখন ম্যাথিউ ইলেজ এবং তার সঙ্গীনি ইলিয়ট ডঘের্টি আইভিএফ এবং সারোগেট মায়ের সাহায্যে সন্তান ধারণ করার কথা ভাবছিলেন, তখন ইলেজের মা সিসিলে তার সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

প্রথমেই এটি একটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ভাবনা বলে মনে হয়েছিল, যেহেতু তিনি প্রায় 61 বছর বয়সী এক মহিলা এবং দশ বছর আগেই তার মেনোপজটি হয়ে গেছিল। চিকিৎসকেরা সিসিলের হার্টের অবস্থা বিশ্লেষণ করেন, কোলেস্টেরল প্রোফাইল, এবং রক্তচাপ ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখেন তার সমস্ত রিপোর্ট একদম স্বাভাবিক। তবে চিকিৎসকেরা তাকে 9 মাস কফি ছাড়ার পরামর্শ দেন। 9 মাস পর ডাক্তাররা পুনরায় সব রিপোর্ট করে দেখেন তার শরীর চমৎকার অবস্থায় এসেছে, এরপরি চিকিৎসকেরা তাকে সারোগেসি করার অনুমতি দেন।
এর পর, সিসিলের দেহে হরমোনাল চিকিৎসা করা হয়। তারপর ইয়েল এর শুক্রাণু, লিয়ার গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে, প্রথম প্রয়াসেই লিয়খ গর্ভবতী হন, সিসিলের দেহে সেই ভ্রূন সফলতার সাথে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং নেব্রাস্কা মেডিক্যাল সেন্টারে ২5 মার্চ, ২019 তিনি স্বাস্থ্যকর এক শিশুর জন্মদান করেন।

এই বিরল ঘটনাটি প্রমাণ করে যে ইচ্ছা থাকলে, সেখানে কিছু না কিছু উপায় হয়ে যায়। আর চিকিৎসা বিজ্ঞান আপনার মুখে হাসি আনতে অনেক বিস্ময়কর কাজ করতে পারে।

সারোগেসি সম্পর্কে আরও জানতে নিবন্ধটি পড়তে থাকুন।

সারোগেসি কি?
সারোগেসি পদ্ধতি হল একটি সাহায্যকারী প্রজনন পদ্ধতি। যেক্ষেত্রে গর্ভধারণের ‌সমস‍্যার কারনে ‌কোনো‌ দম্পতি সন্তান ধারণ করতে পারে না, সেক্ষেত্রে সারোগেসি একটি নিশ্চিত উপকারী প্রক্রিয়া।
এক্ষেত্রে, সমস্যায় আক্রান্ত দম্পতি অন‍্য মহিলার সাহায্য গ্রহণ করে এবং সন্তানের জন্ম দেয়।
সাধারণত, কোনো দম্পতি যখন পরিবার ক্রমবর্ধমান করার জন্য সারগেট মাদার ব্যবহার করেন, তখন বুঝতে হবে দম্পতির মধ্যে অংশীদারদের কোনো একজনের সমস্যা আছে; হয় সঙ্গীনিটির ইউটেরাসে সমস্যা আছে, বা যে কেও একজন বন্ধ‍্যা, বা কারো জেনেটিক সমস্যা আছে। আবার সমকামী দম্পতিরা জেনেটিক‍্যালি লিঙ্কড সন্তানের জন্ম দিতে চাইলেও সারোগেট মায়ের সাহায্যে দিতে পারেন।

সারোগেসির প্রকারভেদ:- সারোগেসি দুই ধরনের।

  • প্রচলিত বা চিরাচরিত নিয়মে সারোগেসি।
  • জেস্টেশনাল সারোগেসি।

প্রচলিত পদ্ধতিতে সারোগেট মায়েরই ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়; ও পিতার শুক্রাণু বা দাতার শুক্রাণু দ্বারা কৃত্রিমভাবে সারোগেট মায়ের দেহে সন্তান তৈরি করা হয়।এই ক্ষেত্রে, সারোগেট মাদারই শিশুটির বায়োলজিক্যাল মাদার।

আজকাল, বিশেষজ্ঞরা একটি উন্নত মানের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। যা ব‍্যবহার করে দম্পতিরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই উন্নত টেকনিকের মাধ্যমে জেনেটিকভাবে সংযুক্ত শিশুর জন্ম দিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা বাবা-মায়ের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলনের জন্য প্রাথমিকভাবে IVF প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তারপর ভ্রূনটিকে সুরক্ষিত ভাবে সারোগেট মা এর গর্ভে প্রতিস্থাপন করেন।
এই ক্ষেত্রে শিশুরটিকে যে মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয় তিনি শিশুটির কেবলমাত্র ‘জন্মদাত্রী, অর্থাৎ সারোগেট মায়ের সঙ্গে শিশুর জেনেটিক কোনো সম্পর্ক নেই। এবং যার ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়েছে তিনি শিশুটির ‘বায়োলজিক্যাল মাদার’।

জেস্টেশেনাল সারোগেসি এর সুবিধা:-
ঐতিহ্যগত সারোগেসির তুলনায়, জেস্টেশনাল সারোগেসির অনেক সুবিধা রয়েছে। এখানে বন্ধ‍্যা বাবা বা মাও কিন্তু তাদের সন্তানের সাথে জেনেটিক‍্যালি সংযুক্ত থাকতে পারেন। আইনত ও এই পদ্ধতি খুব একটা জটিল নয়। জেস্টেশেনাল সারোগেসি পদ্ধতিত ব্যবহার করে একজন মা তার ডিম্বাণুকে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষন করতে পারেন। তবে, মনে রাখবেন যে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল পদ্ধতি, তাই এই প্রক্রিয়া চলাকালীন যথেষ্ট ধৈর্য্য প্রয়োজন।

আমরা বলতে পারি এই জেস্টেশনাল সারোগেসি চিকিৎসা জগতের অভাবনীয় সাফল্য সূচক। অনেক দম্পতি ও পরিবারকে আশার আলো দেখাবে এই পদ্ধতি।