মে 2, 2024

ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস প্রোগ্রাম গর্ভাবতী মা, সদ‍্যপ্রসূতি, ও 6 বছর বয়সী শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে

Reading Time: 2 minutes

কলমে-পরমানন্দ বর্মন। অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন

শিশুর বিকাশের জন্য সব থেকে জরুরি হলো পুষ্টিকর খাবার দাবার। কিন্তু ভারতবর্ষের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতিটি শিশুর পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দেওয়াটা এক বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত বর্ষ সহ পৃথিবীর নানা প্রান্তের এমন অনেক দেশ আছে যেখানে বেশিরভাগ শিশুই সঠিক পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় অপুষ্টিতে ভোগে থাকে এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ, দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং অকালমৃত্যুর হার অনেক বেশি। শিশু, গর্ভাবতী মায়ের ক্ষেত্রে ম‍্যালনিউট্রিশন‌ বা অপুষ্টির প্রভাব সবথেকে বেশি। ভারতে এই সমস্যার সমাধান করতে সরকার “ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস” (ICDS) প্রোগ্রাম চালু করেছে। ICDS এর মূল কাজ গর্ভাবতী মা, সদ‍্যপ্রসূতি, ও 6 বছর বয়সী শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করা।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষকদের দ্বারা একটি গবেষণায়, এই প্রোগ্রামটির উদ্দেশ্য, উপকারিতা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়কারী একটি সমীক্ষা চালান।

ICDS বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত পুষ্টি প্রোগ্রামগুলির মধ্যে একটি। যা গৃহ-পরিপূরক খাদ্য, গরম রান্না করা খাবার, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সম্পর্কিত শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা, টিকা, বৃদ্ধি পরিমাপ এবং প্রাক-বিদ‍্যালয় শিশু সুরক্ষা পরিষেবা সরবরাহ করে। 1975 সালে এই কর্মসূচি চালু হয়েছিল, ২006 সালের পরে উল্লেখযোগ্যভাবে এর পরিসেবা সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে, প্রায় 82 মিলিয়ন তরুণ শিশু এবং 19 মিলিয়ন গর্ভবতী মহিলা ও সদ‍্যজাতে মায়েদের তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিসেবা প্রদান করে।
গবেষকরা 2005-2006 এবং ২015-2016 সালে পরিচালিত দুটি জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য (যা সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তথ্য) বিশ্লেষণ করেন। তারপর তাঁরা বিভিন্ন শিক্ষা, বর্ণ, এবং আঞ্চলিক পটভূমিতে আইসিডিএসের প্রভাব পরিমাপ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে ঐ দশকের মধ্যে ICDS প্রোগ্রাম ও তার সেবাগুলি খুব ভালভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। 2006 সালে, বেশিরভাগ রাজ্যে 25% গর্ভবতী ও দুধ খাওয়ানোর মায়েদের সম্পূরক খাদ্যের সরবরাহ করেছিল ICDS। তবে, পরবর্তী দশকে, সম্পূরক খাদ্যের সুবিধা প্রদান কর্মসূচীর কার্যক্রম তিনগুণ বৃদ্ধি (2006 সালে 9.6% এবং 2006 সালে 37.9%) হয়েছিল। মধ্য ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে শৈশবে পরিপূরক খাদ্য প্রদানের হার অর্ধেকেরও বেশি বৃদ্ধি হয়।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত শিক্ষার হার বেড়ে 3.2% থেকে ২1.0% এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা 4.5% থেকে বেড়ে 28% এ (প্রায় সাতগুণ) দাঁড়িয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রতিষেধক সেবা কর্মসূচি দ্বিগুণ (10.4% থেকে 24.2%) হয়। এ ছাড়া, কোনো স্কুলে না পড়া মায়ের অনুপাত প্রায় 46.3% থেকে 27.0% ( অর্ধেকের হ্রাস) হয়েছে। স্বাস্থ্যবীমা সহ ব্যক্তি সংখ্যা 2006 সালে 3.7% ছিল তার থেকে 2016 সালে বেড়ে 24.3% হয়েছে। গবেষকরা এই ও দেখেছিলেন যে এই কর্মসূচির সুবিধা সকল শ্রেণীর মানুষই কিন্তু সমান ভাবে গ্রহন করেছে এখানে কোন জাতি কত বর্ণ বৈষম্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাস্থ্য সুবিধা ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরনে ICDS যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা সকলেই সমান ভাবে গ্রহন করেছে।

তবে গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, যে এত কিছু সুবিধার মধ্যেও ICDS প্রকল্পের একটি সমস্যা ছিল। যেমন অনেক রাজ্যেই দরিদ্র অঞ্চল গুলিতে, যাদর এই প্রকল্পের সব থেকে বেশি প্রয়োজন, তারা অনেকেই কিন্তু এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেননি। এর কারণ কিন্তু অনেক রকম ছিল, যেমন অনেক জায়গায় ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে বা দূরত্বের কারণে সেখানে হয়তো পৌঁছানো যায়নি। আবার অনেক জায়গায় বর্ণগত বা ধর্মগত সমস্যার কারণেও অনেক পরিবারকেই এই সমস্ত সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায়নি। এই সমস্ত অসুবিধা দূর করার ক্ষেত্রে সরকারের অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এই ধরনের সমস্যা মূলত বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে; যেখানে শিশু অপুষ্টির হার সবথেকে বেশি সেই অঞ্চলগুলোতেই দেখা যায়! সরকার যদি এই সমস্ত সমস্যা নির্মূল করার চেষ্টা করেন তাহলে এই প্রকল্প সর্বোত্তমভাবে সফল হবে।

গবেষকরা ICDS প্রকল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পেয়েছেন এবং তাঁরা আশা করেন যে তাদের অনুসন্ধানগুলি অন্যান্য দেশের অনুরূপ পরিষেবাগুলি প্রসারিত করায় সাহায্য করবে।