শতকরা ৯০ শতাংশ কার্য্যকরী হতে চলেছে Pfizer-BioNTech কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন -ফেজ ৩ ট্রায়াল ইন্টেরিম রিপোর্ট
শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি, নিউক্র্যাড হেলথ এর প্রতিবেদন, নভেম্বর ১৭ , ২০২০
এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, যেখানে কোভিড-১৯ প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে আর তাকে প্রতিহত করার মতো কার্য্যকরী ভ্যাকসিন এখনো মানুষের কাছে এসে পৌঁছয় নি। বিশ্বের সমস্ত মানুষ অধীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছেন কখন যথাযোগ্য ভ্যাকসিন ব্যবহার ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই মারণ রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি মিলবে। সাম্প্রতিক গবেষণার এক তথ্য অনুযায়ী আশা করা যাচ্ছে এই অপেক্ষার বেশী দেরি নেই। বিখ্যাত বায়ো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি Pfizer ও BioNTech যৌথ ভাবে গবেষণা করে বার করেছে বিশেষ এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন (BNT162b2) যার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক।
কোম্পানি দুটি এই ভ্যাকসিন বিশ্বের ছটি দেশে (আমেরিকা, জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, সাউথ আফ্রিকা, টার্কি) মোট ৪৩,৫০০ মানুষের উপর পরীক্ষা করেছে। গবেষণা অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ নেবার তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। আশ্চর্যের কথা, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ নেবার পর মানুষের শরীরে ৯০% নভেল করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে! তবে এখনো কিছু ডেটা বিশ্লেষণ বাকি, যা সম্পূর্ণ হলে ভ্যাকসিনটির সার্বিক কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। কোম্পানি দুটি আশাবাদী, নভেম্বরের শেষে বিশ্লেষনের কাজ শেষ হলেই সবাইকে জরুরি পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন নেওয়ার কাজ শুরু হবে। এই কর্মসূচীতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় যুক্ত মানুষ ও বৃদ্ধদের সর্বাগ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে কারণ তাঁদের নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী।
কি পদ্ধতিতে কাজ করে এই এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন?
চিরাচরিত ভ্যাকসিন তৈরীর পদ্ধতির থেকে এমআরএনএ ভ্যাকসিন টেকনোলজি বেশ কিছুটা আলাদা। সাধারণত, তাপ বা রাসায়নিক প্রয়োগে জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এরপরে সেই সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় জীবাণু বা তার অংশ অথবা সেই জীবাণু থেকে কোন অ্যান্টিজেনকে বার করে তাকে ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে, নভেল করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন তৈরী হয় যে নির্দিষ্ট এমআরএনএ দিয়ে তার সিকোয়েন্স প্রথমে শনাক্ত করে ল্যাবরেটরিতে তাকে কৃত্রিম ভাবে তৈরী করা হয়। একে এমআরএনএর “ইন ভিট্রো ডেভেলপমেন্ট” বলে। এই সিন্থেটিক এমআরএনএকে লিপিড ন্যানোপার্টিক্যালস এর সাথে যুক্ত করে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন হিসাবে প্রবেশ করানো হয়। এরপরে, শরীরের কোষের মধ্যে এমআরএনএ টি ট্রান্সলেশনের সাহায্যে তৈরী করে ভাইরাল স্পাইক প্রোটিন, যার বিরুদ্ধে শরীরে তৈরী হয় স্বাভাবিক ইমিউনিটি। পরবর্তী সময়ে, নভেল করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে শরীর এলে শরীরের সক্রিয় ইমিউনিটি ভাইরাস সংক্রমণকে প্রতিহত করে।
BNT162b2 এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিনের কিছু জরুরী তথ্য:
১. থিওরি অনুযায়ী, কোন ভ্যাকসিনেশান বাঃ টীকাকরণ পদ্ধতি ১০০% নিরাপদ নয়, কিছুটা হলেও, শরীরে প্রবিষ্ট নিষ্ক্রিয় জীবাণুর পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু BNT162b2 এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সেই ঘটনা ঘটে না। শরীরের মধ্যে এটি কেবল ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরী করে (যার সংক্রামক কোন ভূমিকা নেই) ফলে এটি নিরাপদ।
২. এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ লাগে। কিন্তু, বর্তমানে সেই পরিমানে সরবরাহ হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু কোম্পানির তরফ থেকে বলা হয়েছে ২০২১ সালের শেষে ১.৩ বিলিয়ন ডোজ তৈরী করা সম্ভব হবে।
৩. এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্যে -৮০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের রেফ্রিজারেশন সিস্টেম লাগে, তার যথেষ্ট পরিকাঠামো স্বাস্থ্য পরিষেবায় অবিলম্বে নিয়ে আসা উচিত।
আশা করা যায়, এই নতুন BNT162b2 এমআরএনএ ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।
কেন ইউ টিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করবেন ? আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতা আপনাকে বিপদের সময় পথ দেখাবে – বিশ্বরূপ ঘোষ, গবেষক বিজ্ঞানী ।
তথ্যসূত্রঃ
- https://www.pfizer.com/science/coronavirus
- Pardi N, Hogan MJ, Porter FW, Weissman D. mRNA vaccines – a new era in vaccinology. Nat Rev Drug Discov. 2018;17(4):261-279. doi:10.1038/nrd.2017.243
- Schlake T, Thess A, Fotin-Mleczek M, Kallen KJ. Developing mRNA-vaccine technologies. RNA Biol. 2012;9(11):1319-1330. doi:10.4161/rna.22269