দারিদ্র্যতা কিভাবে শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের বিকাশে প্রভাব ফেলে – কি বলছে গবেষণা
তথ্যসূত্র-University of East Anglia; অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
বিজ্ঞানীরা গ্রামীণ ভারতে চার মাস থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন।
তাঁরা দেখেছেন যে নিম্নআয় যুক্ত পরিবারের সন্তানরা, যেখানে মায়েদের শিক্ষার হার খুব কম, সেই সব পরিবারের শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দূর্বল প্রকৃতির ছিল এবং বড়ো বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি ছিল।
UEA স্কুল অফ্ সাইকোলজির গবেষক ও অধ্যাপক জন স্পেন্সার বলেন: “প্রতি বছর, কম এবং মধ্যম আয়ের দেশেগুলিতে, 250 মিলিয়ন শিশুর সম্ভাব্য উন্নয়ন হয় না”। এই জন্য সমগ্র বিশ্বজুড়ে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে ও আচরনগত বিকাশে দারিদ্রতার প্রভাব বোঝার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে।
পূর্ববর্তী গবেষনায় দেখা গেছে যে দারিদ্র্য এবং প্রারম্ভিক বিপর্যয় বিভিন্ন মস্তিষ্কের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। কিন্তু দারিদ্রতা কীভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে তা নিয়ে খুব কমই কাজ হয়েছে।
“আমরা গবেষণায় দেখতে চাই দারিদ্রতা একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে ঠিক কী বাধা সৃষ্টি করে। এটাই আমাদের গবেষণার প্রথম ধাপ। এটা যদি খুঁজে বের করতে পারি তবে আমরা প্রথমেই কোন খারাপ প্রভাব ফেলা রোধ করতে পারি।” – বলেছেন গবেষকরা।
দলটিতে, স্টারলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও যুক্ত ছিল, তাঁরা উত্তর-প্রদেশে তাদের সমীক্ষা চালান। উঃ প্রদেশ হল ভারতে সবচেয়ে জনঘনত্ব যুক্ত অঞ্চল। তাঁরা একটি পোর্টেবল ‘ফাংশনাল নিয়ার ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপি’ (fNIRS) ডিভাইস ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের চার মাস থেকে চার বছর বয়সী 42 টি শিশুর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করেন।
তারা শিশুদের ‘ভিসুয়্যাল ওয়ার্কিং মেমরি’ -এর উপরেও সমীক্ষা চালান। তারা দৃশ্যমান কোনো তথ্য কতটা সংরক্ষণ করতে পারছে বা পরিবর্তনগুলি কতটা সনাক্ত করতে সক্ষম; তা পরিমাপ করতে এই সমীক্ষা চালান।
প্রফেসর স্পেন্সার বলেছেন-“আমরা প্রতিদিন প্রায় 10000 চাক্ষুষ মেমরি ব্যবহার করি। শিশুদের শৈশবেই এই দক্ষতার বিকাশ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে কৈশোরে এই বিকাশ সম্পূর্ণ হয়।
আমরা জানি যে এটি প্রজ্ঞার বিকাশের এটি একটি চমৎকার মার্কার,”।
লক্ষনৌ এ কমিউনিটি এম্পায়ারমেন্ট ল্যাবের সাথে অংশীদারিত্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অধ্যয়ন করা হয়। উত্তর-প্রদেশে শিবগড়ের চারপাশের অঞ্চলের শিশুদের নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।
তারা রঙিন স্কয়ারগুলির ব্লিংকিং প্রদর্শনের একটি চাক্ষুষ পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষার লক্ষ্য ছিল শিশুদের রঙিন স্কয়ারগুলি দেখে খুব ভাল মনে রাখতে হবে যে ডিসপ্লের একটি অংশের রঙ সব সময় পরিবর্তন হচ্ছিল যখন আরেকটি দিক এবং একই ছিল। অভিভাবকীয় শিক্ষা, আয়, বর্ণ, ধর্ম, পরিবারের সংখ্যা শিশু এবং অর্থনৈতিক অবস্থা এগুলিও কারন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
ফলাফলগুলি মধ্য আমেরিকায় শিশুদের করা সমীক্ষা সাথে তুলনা করা হয়েছিল। গবেষণামূলক দলটি পাওয়া গেছে যে কম আয়যুক্ত, স্বল্পশিক্ষিত পরিবারের শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দূর্বল প্রকৃতির ছিল। মস্তিষ্কের বামদিকে ফ্রন্টাল কর্টেক্সেও গঠনগত পার্থক্য ছিল, মস্তিষ্কের এই অংশটি বিভ্রান্তি দমন ও স্মৃতিশক্তির সাথে জড়িত।
গবেষণায়ও এও দেখানো হয়েছে যে, পোর্টেবল নিউরো-ইমেজিং প্রযুক্তিগুলি কীভাবে উন্নয়নশীল বিশ্বের গ্রামীণ অংশগুলিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
দারিদ্রতা ছোট্ট ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে আদতেই সমাজের ক্ষতি করতে পারে। “স্থানীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পরিবারের সাথে অংশীদারিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে আসার মাধ্যমে আমরা আশা করছি যে আমরা ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের এই চক্রটি ভেঙ্গে ফেলতে পারব।