মে 3, 2024

বেশিরভাগ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী শহুরে মানুষের মধ্যে দেখা গেল ভিটামিন অভাব

Reading Time: 2 minutes

কলমে- মনিকা কুন্ডু শ্রীবাস্তব; অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেল গ্রামাঞ্চলের, বা শহরে সুন্দরস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষ গুলো বেশির ভাগ জনই ভিটামিনের অভাবে ভুগছেন।

হায়দ্রাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের (NIN) বিজ্ঞানীরা 270 জনের (147 জন পুরুষ এবং 123 জন নারী) দেহে ভিটামানের মাত্রা পরীক্ষা করেন একটি গবেষণায় পরিচালিত করেন। রক্তে ভিটামিনের (ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, ফোলেট এবং D) এবং হোমোসিস্টেনের মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়।

মানুষের দেহে ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গুলির সঠিক মাত্রা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন কারণ এই সমস্ত ভিটামিন ,মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গুলিই কোষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, মলিকিউলার কার্যকলাপ সঠিক ভাবে চালাতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, অর্ধেক মানুষের দেহেই ভিটামিন B2 এর অভাবে ছিল, এবং 46% মানুষের ভিটামিন B6 এর অভাব ছিল। এই ফলাফলগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ভিটামিন B2 অভাবের গুরুতর ফলাফল তুলে ধরে। ভিটামিন B1, B2 এবং B6 টি স অভাবের বিষয়টিতে সে গুরুত্ব দেয়া হয় না এর কারণ সম্ভবত এখন কোন ভিটামিনের অভাবে কি মারাত্মক ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন না।

ভিটামিন B2 বা রাইবোফ্ল‍্যাভিনের অভাবের জন্য স্নায়ু-সম্পর্কিত রোগ, অ্যানিমিয়া এবং হার্ট রোগ দেখা যায়। ভিটামিন B6 এর অভাবের ফলে মস্তিষ্কের সমস্যা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ক্যান্সার, মাইগ্রেন, হৃদরোগ, বিষণ্নতার মতো সমস্যা গুলি যুক্ত। ভিটামিন B1 বা থায়ামিনের অভাবের ফলে ডিমেনশিয়া, অ‍্যালঝাইমার্স, ক্যান্সার এবং বিপাকীয় রোগ ইত্যাদি দেখা যায়। ভিটামিনের অভাব জনিত সমস্যার গুলি উপেক্ষা করলে পরবর্তী সময়ে মারাত্মক ধরনের সমস্যা তৈরী হতে পারে, বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।

এই গবেষণাটি নিউট্রিশন নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতির হার তুলে ধরা হয়েছিল। সেগুলো হলো- B12 (46%), ফোলেট (29%), D (29%), B1 (12%), A(11%)। ভিটামিন্স B1 এবং B2 এর অভাব ফোলেট তৈরীতে বাধা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিটামিন D এর ও অভাব দেখা গেছে। ফাংশন অভাবের ফলে, এটি অবশ্যই হতে পারে। এটি ডায়াবেটিসের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। কিন্তু যাইহোক অন্যান্য ভিটামিন অভাবের তুলনায়, ভিটামিনর A এর অভাব তুলনামূলকভাবে খুব কম ছিল, যা সম্ভবত পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন মাত্রার কারণে হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে এই মানুষগুলি যে সমস্ত খাবার খান, সেগুলি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলি খুব কম পরিমাণের উপস্থিত থাকে।এটি আসলে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবের ফলাফল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ‍্যতালিকায় ভিটামিন B12 (96%) এবং ফোলেট (91%) এর অভাব দেখা গেছে। ভিটামিন B2(71%) এর অভাব ভাবির কারণের জন্য এই গাধার ছাল এর উপরের খোসা ছাড়িয়ে বাদ দিয়ে দিই তাকেই দায়ী করা হয় কারণ এই অংশে সব থেকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন উপস্থিত থাকে।

এইসব ভিটামিনের অভাবে মানুষের দেহে অ্যামিনো অ্যাসিড, হোমোসিস্টেইনের অভাব তৈরী করতে পারে, যা বিভিন্ন রক্ত সম্পর্কিত সমস্যাগুলির জন্য দায়ী এবং স্ট্রোক (মস্তিষ্ক এবং হার্ট), হাড়ক্ষয় এবং ডিমেনশিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। অধ্যয়নে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকেরও বেশী (52%) এর ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলোর দেখা গেছিল।

ভারতীয় খাদ্যের প্রধান উপাদান খাদ্যশস্য ভিত্তিক। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন ফল, সবুজ টাটকা শাকসবজি, দুগ্ধজাতীয় খাবার কম খাওয়া এই সম‍্যসার জন্য দায়ী। যদিও দেখা গেছে ‌মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা ছয় ধরনের ভিটামিনের বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে, তবুও তা তাদের রক্তের মাত্রাগুলিতে প্রতিফলিত হয় নি। যদিও, ভিটামিনের যথাযথ গ্রহণ করার পরও অনেক ক্ষেত্রে তা শরীরের কোষগুলির জন্য উপলব্ধ হতে পারে না। এর কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন- জিনগত সমস্যা, বয়স, দুর্বল শোষন ক্ষমতা ইত্যাদি।

ডাঃ জি ভানুপ্রাকাশ রেড্ডি মনে করেন, “এই গবেষণাটি ভিটামিনের অভাব জনিত সমস্যার সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে তথ্য প্রদান করে, চিকিৎসাবিদ, গবেষকদের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহায্য করবে।” ডঃ রেড্ডি এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, “কোন একক খাদ্য বা খাদ্যগোষ্ঠী সব মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস এর প্রয়োজনীয়তাগুলি মেটাতে পারে না এবং তাই আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সঠিক খাবার রাখতে হবে। যেমন বিভিন্ন ধরনের ফল, টাটকা সবুজ শাকসবজি, দুগ্ধ, বাদাম, অঙ্কুরিত বীজ ইত্যাদি।”

গবেষণায় ‌যুক্ত অন্যান্য গবেষকরা হলেন, এম. শিবপ্রসাদ, টি. শলিনী, পি যাদাগিরি রেড্ডি, এম. সেশার‍্যচারালু, জি. মাধভী, বি. নবীন কুমার প্রমুখ।