“বায়ো-ওয়াইটেল” – কম খরচে, বিপদ-মুক্ত পরিধানযোগ্য স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষন যন্ত্র
কলমে- আশ্লেশা গোর আরতি হলবে্; অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত,
নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক, মার্চ 11, 2019
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, ডাক্তার ও নার্স সহ চিকিৎসার সাথে যুক্ত অন্যান্য পেশাদারদের গুরুতর অভাব, যার মাশুল গুনছে কার্ডিওভাসকুলার বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতায় আক্রান্ত রোগীরা ; কারণ এই ধরনের রোগীর নিরবচ্ছিন্নভাবে যত্ন ও নজরদারির দরকার।
এই ধরনের রোগীদের অত্যাবশ্যক ও নিয়মিত নিরীক্ষণের জন্য পরিধান যোগ্য যন্ত্র ব্যবহার করেন পারেন, যা তাদের জীবনহানিকর বিভিন্ন জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
সম্প্রতি, প্রফেসর মেরিয়াম শজেগী বাগিনি ও তার দল (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বোম্বে) হৃদরোগের আক্রান্ত রোগীদের অত্যাবশ্যক নিরীক্ষণ গুলির জন্য অর্থাৎ অক্সিজেনের মাত্রা এবং হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেত ঠিক আছে কিনা খেয়াল রাখতে একটি বেতার,শক্তসমর্থ, কম খরচে এবং নিম্ন শক্তিতে চলে এমন নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। যার নাম বায়ো-ওয়াইটেল।
বায়ো-ওয়াইটেল নামক সিস্টেমটি টেলিম্যাট্রি-ধারণার ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় তথ্য ‘দূরত্ব থেকে গণনা’ করে। স্বাস্থ্যের নিরীক্ষণের জন্য টেলিমেট্রিক সিস্টেমগুলির একটি পরিধানযোগ্য সেন্সর রয়েছে যা চিকিৎসাগত ডিভাইসের জন্য সংরক্ষিত একটি ফ্রিকোয়েন্সিতে, কাছাকাছি বেস স্টেশনটিতে তথ্য প্রেরণ করে। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি মন্ত্রকের (MeitY) অর্থায়নে তৈরী বায়ো-ওয়াইটেল প্রথম সম্পূর্ণ জৈব-টেলিমেট্রি প্রযুক্তি যার সাথে ভারতে উপলব্ধ কাস্টম-বিল্ট ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট চিপ যুক্ত আছে। এই গবেষণাটি IEEE জার্নাল অফ বায়োমেডিকাল অ্যান্ড হেলথ ইনফরম্যাটিক্সে প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও আজকের বাজারে অনেক পরিধানযোগ্য যন্ত্র এসে গেছে যারা তথ্য প্রেরণ করার জন্য ব্লুটুথ ব্যবহার করে। তবে এই ডিভাইসগুলির বিকিরণগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে মানব টিস্যুগুলির ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে বায়ো-ওয়াইটেল 25 মাইক্রো-ওয়াটের ও কম বিদ্যুৎ বিকিরণ করে, যা শরীরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
বায়ো-ওয়াইটেল সিস্টেম 401-406 মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে কাজ করে। এটি প্রায় তিন মিটার পরিসীমা অবধি কাজ করে এবং মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত ডঙ্গলে তথ্য প্রেরণ করতে পারে। এইভাবে সংগৃহীত তথ্যটি আবার ইন্টারনেটে অ্যাক্সেসও করা যেতে পারে।যার কারণে বায়ো-ওয়াইটেল সিস্টেমের মাধ্যমে দূর থেকেই অনেক রোগীর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ সম্ভব।
গবেষকেরা নিজেরা ট্রান্সমিটার, রিসিভার, যোগাযোগ রক্ষাকারী সফটওয়্যারটিকে এমনভাবে সংযুক্ত করেছেন যাতে বায়ো-ওয়াইটেল প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটের মধ্যে জিনিস গুলি বেছে নিয়েছেন, যেমন নির্দিষ্ট তথ্য প্রেরণ হার যা কম শক্তি ব্যয় করে ও সঠিক বাজেটেও ফিট করে। উচ্চতর তথ্য প্রেরণের হারের জন্য বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। তাদের একটি শক্তিশালী বেতার মডুলেশন প্রকল্প প্রয়োজন ছিল যেটা শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য। এই ক্ষেত্রে, তারা এমন ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন এবং একটি ডেটা রেট ব্যবহার করেন যা একসাথে 1২ টি জৈব-সংকেত একসঙ্গে বহন করতে পারে। সিস্টেমটি যাতে কম খরচে এবং কম শক্তির যোগানেই কাজ করে তাই তাঁরা ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারকে কাস্টম ফ্যাব্রিকেড ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট হিসাবে ডিজাইন করেছেন।
গবেষকরা তাদের যন্ত্রটি পরীক্ষা করতে ইলেক্ট্রোকার্ডিওোগ্রাম (ইসিজি) এবং ফটোপ্লেথোসমোগ্রাম (পিপিজি) থেকে তিন মিটার পরিসীমার মধ্যে তথ্য প্রেরণ করেন। ইসিজি হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেতগুলি পরিমাপ করে এবং পিপিজি শরীরের কিছু অংশে নাড়ির স্পন্দন এবং হৃদযন্ত্রের দ্বারা প্রেরিত রক্তের পরিমাণ নির্দেশ করে। তারা ট্রান্সমিটার ও তার সংবেদনশীলতা, রিসিভারের দ্বারা কী পরিমাণ শক্তি খরচ হচ্ছে; বা সিস্টেমের দ্বারা সর্বাধিক তথ্য প্রেরণের হার; ও কী পরিমান ত্রুটি হচ্ছে তার পরিমাপ করেন। এই ফলাফল বেশ সন্তোষজনক ছিল বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা দলটি বায়ো-ওয়াইটেলর সাথে একই রকম পরিধানযোগ্য পর্যবেক্ষক যন্ত্র ব্যবস্থার তুলনা করেছেন। তারা দেখেছেন যে বায়ো-ওয়াইটেল অন্যগুলোর তুলনায় অনেক কম ভোল্টেজে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের থেকে তিন থেকে চার গুণ কম শক্তি খাচ্ছে, যদিও এর তথ্য প্রেরণ ক্ষমতা একই। বরং এর সংবেদনশীলতা আরও বেশি ছিল, এবং তার ত্রুটির হারও গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যেই ছিল।
পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি, গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে বায়ো-ওয়াইটেলের মতো একটি সিস্টেম অনেক প্রাণঘাতী রোগের প্রাথমিক নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে। আর রোগীদের পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিও কম খরচে আরও বেশি আরামদায়ক ও সহজ ব্যবহার যোগ্য হয়ে উঠবে।
বায়ো-ওয়াইটেল সম্পর্কিত কাজের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণাপত্র ২019 সালের VLSI ডিজাইনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সেরা বলে ঘোষিত হয়েছে। গবেষকরা বায়ো-ওয়াইটেলের জন্য তিনটি পেটেন্ট দায়ের করেছেন এবং আশা করছেন খুব শীঘ্রই এই যন্ত্রের বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব হবে।