“সুপার ৩০” -এর রিয়েল-লাইফ হিরো আনন্দ কুমার লড়ছেন “অ্যাকোয়াস্টিক নিউরোমা” নামক বিরল ব্রেইন টিউমারের সাথে
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
আপনারা অনেকেই জানেন যে, ঋতিক রোশন- বলিউডের সুপারস্টার পটনার এক গণিতজ্ঞের জীবন ভিত্তিক সিনেমা ‘সুপার ৩০’ তে অভিনয় করেছেন; যিনি আইআইটি-জেইই প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের দেন বলে বিখ্যাত।
যাইহোক, আপনি হয়ত এই ছবিটির যে ব্যাক্তির জীবনী, সেই বিখ্যাত শিক্ষাবিদ আনন্দ কুমারের বিষয়ে অবগত। সম্প্রতি তিনি তার স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে অত্যন্ত দুঃখজনক এক খবর প্রকাশ করেছেন। হ্যাঁ, তিনি কয়েক বছর ধরে তিনি বিরল প্রকৃতির একপ্রকার নন-ক্যান্সারস মস্তিষ্কের টিউমার-“অ্যাকোয়াস্টিক নিউরোমা”-তে আক্রান্ত।
আর তার স্বাস্থ্যের অবস্থার অনিশ্চয়তার কারণে, তিনি চেয়েছিলেন যততাড়াতাড়ি তার বায়োপিক সম্পূর্ন হোক এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থিয়েটারগুলিতে চলে আসুক। গণিতের যাদুকর সম্পর্কে এখবর হৃদয়স্পর্শীই বটে। তারই মধ্যে একটি ভালো খবর হলো যে দুবাইয়ের মালবার গোল্ড ও ডায়মন্ড তাকে গ্লোবাল এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ প্রদান করেছিল, সেই সূদূর দুবাইয়ের হলগুলিতেও তার বায়োপিক ১২-ই জুলাই ২০১৯ এ মুক্তি পেয়েছে এবং বেশ ভালোই ব্যবসা করছে বলে জানা গেছে।
কীভাবে ধরা পড়ল আনন্দ কুমারের এই রোগ?
২০১৪ সালে আনন্দ কুমারের হঠাৎ অসহ্য মাথার যন্ত্রণা ও সাথে শ্রবনশক্তি জনিত সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এইসময়েই রিপোর্টে ধরা পড়ে, তিনি তাঁর ৮০-৯০ শতাংশ শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তিনি ঠিক করেন যে দিল্লির রামমোনহর লোহিয়া হসপিটালে চিকিৎসা করাবেন। রাজধানীর বুকে অবস্থিত এই প্রখ্যাত হসপিটালের তার প্রথম চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসাকেরা। তাঁরা কি সমস্যা হয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে গিয়ে দেখেন যে কানের সমস্ত ঠিক থাকলেও, কিন্তু মূল সমস্যার মূল কারণ হলো আনন্দ বাবুর অন্তঃকর্ণের ভিতরের অংশ দিয়েয়ে যে নার্ভটি সরাসরি মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত হয়েছে, সেই নার্ভের উপর একটি বিনাইন টিউমার জন্ম নিয়েছে।
রাম মনোহর লোহিয়া হসপিটাল এর বিখ্যাত ক্যান্সার চিকিৎসা আমাকে কোনরকম সার্জারি না করানোর পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ তিনি জানিয়েছেন সার্জারি করতে গেলে জটিলতা অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। যেমন ,তার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা যেতে পারে।
এমত অবস্থায় বর্তমানে আমাদের এই গণিতের জাদু কর মুম্বাইয়ের একজন গণ্যমান্য নিউরোসার্জেন্ট বি.কে. রয়ের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সমগ্র দেশের অসংখ্য মানুষ ও তার ছাত্ররা অনবরত তার সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করে চলেছে।
কী এই ‘অ্যাকোয়াস্টিক নিউরোমা’? আসুন জেনে নিই :-
অ্যাকোস্টিক নিউরোমা এর কিন্তু আরও অনেক গুলির নাম রয়েছে যেমন ভেস্টিবুলার স্বোয়ানোমাস বা নিউরিলেমোম্মা ইত্যাদি। এটি একটি জটিল অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কের সাথে অভ্যন্তরীণ কানের সংযোগ রক্ষাকারী অষ্টম শ্রেণীর নার্ভের উপরে বিনাইন টিউমার দেখা যায়। এই বিনাইন টিউমার নন ক্যান্সারাস হলেও এর সবথেকে বড় সমস্যা হল এটা ধীরে ধীরে ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং মস্তষ্কির বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করতে থাকে অনেক সময় হাইপোথ্যালামাস এবং অন্যান্য ক্রেনিয়াল নার্ভগুলির ক্ষতি করে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।।
অ্যাকোয়াস্টিক নিউরোমা-এর উপসর্গগুলি কী কী?
এতে সব থেকে বড় অসুবিধা হল এটি খুব ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, প্রাথমিক পর্যায়ে এর উপসর্গগুলি সাধারণত এতটাই সূক্ষ্ম হয়, যে এটি ক্যানসার বিশেষজ্ঞর কাছেও প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে। প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু উপসর্গ হল – রোগীদের প্রায়ই কানে সমস্যা দেখা দেয়, শ্রবণে অসুবিধা সম্মুখীন হতে হয়। কিছু বিরল ক্ষেত্রে, এটি হঠাৎ শ্রবণ হ্রাস হতে পারে। টিউমারের অগ্রগতির সাথে রোগীদের মাথা ঘোরা, স্বাদে পরিবর্তন, বিভ্রান্তি ইত্যাদি নানান সমস্যা দেখা দেয়। রোগীদের টিউমার ধরা পড়লেই অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো কি কি?
অ্যাকোয়াস্টিক নিউরোমা জন্য তিনটি ধাপে চিকিৎসা করার হয়:-
১) টিউমার যদি ছোট হয় এবং ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান হয়, রোগীদের টিউমার বৃদ্ধির নিরীক্ষণের জন্য প্রতি ছয় মাসে নিয়মিত ইমেজিং পরীক্ষাগুলি চালিয়ে যেতে হবে। সাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা
২) টিউমার যদি বড় হয়, টিউমার বিশেষজ্ঞরা রোগ নিরাময়ের জন্য অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে এটি অপসারণের পরামর্শ দেন। তবে এক্ষেত্রে শ্রবণ হ্রাস, ভারসাম্য বজায় রাখার অক্ষমতা, স্ট্রোক, বা মস্তিষ্কের রক্তপাতের মতো বিভিন্ন জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩)চিকিত্সা তৃতীয় লাইন হল রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা। বর্তমানে, অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র ব্যবহার করে অত্যন্ত দক্ষ টিউমার বিশেষজ্ঞরা অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্ববর্তী টিস্যুগুলির কোনো ক্ষতি না করেই, উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করে টিউমার কোষগুলিকে নির্মূল করেন।
আসুন আমরা সকলে মিলে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি ।
পড়তে থাকুন, পাশে থাকুন। ফেইসবুক এর পেজ টি লাইক করুন ।