এপ্রিল 29, 2024

প্রথমবার !! আমেরিকার এক মৃত মহিলার জরায়ু আরেকজন বন্ধ্যা মহিলার মধ্যে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এক শিশু কন্যার জন্ম হল৷

This image is for illustration purpose only. Source: Public domain

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

  ২০১৯ এর জুন মাসে,ওহায়িও-র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ও ওখানকার সমস্ত চিকিৎসক বৃন্দ এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী রইল৷একজন মাঝামাঝি বয়সের এক বন্ধ্যা মহিলা আরেকজন মৃত মহিলার জরায়ু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমের শিশুকন্যার জন্ম দেন৷শিশু কন্যাটিকে চিকিৎসকেরা সার্জারির মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ করেন৷বর্তমান খবরের ভিত্তিতে জানা গেছে মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ-স্বাভাবিক আছেন৷এমন কি সেই মহিলাকে সার্জারির তিন দিনের মধ্যেই ডিসচার্জ করা হয়েছে৷এই প্রথমবার আমেরিকার এক মৃত মহিলার থেকে চিকিৎসকদের দ্বারা সংগৃহীত জরায়ু একজন বন্ধ্যা মহিলার মধ্যে প্রতিস্থাপনের দ্বারা এক সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর জন্ম হয়৷২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ঠিক কিছুদিন আগে, বিশ্বের মধ্যে প্রথম ব্রাজিলে এই ধরনের জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল,এক মৃত মহিলার থেকে নিয়েই৷ ইতিমধ্যেই যেখানে স্ট্রোকের কারণে ৪৫ বছরের একজন মৃত মহিলার জরায়ু প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল ৩২ বছরের এক  বন্ধ্যা মহিলার মধ্যে৷ 

                       
এক আশার কিরণের আবির্ভাব ঘটল সেই সব বন্ধ্যা মহিলাদের জন্য:- 

                       
এই শিশুর জন্মটা ছিল ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি অংশ মাত্র,যেখানে সেই সব মহিলাদের জরায়ু প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে যাঁরা বন্ধ্যাত্বের কারণে ভুগছেন৷এটি এমন মহিলাদের জন্য যাঁরা জন্মেছে জরায়ু ছাড়া অথবা দেখা গেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে যাঁদের জরায়ু কেটে বাদ দিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে৷প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায় চিকিৎসেকরা বেছে নিয়েছিলেন ২১ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে থাকা ১০ জন মহিলাদের৷তাঁদের মধ্যে এই শিশুকন্যার মা হল তৃতীয় মহিলা,যার প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া কার্যকরী হয়েছে৷ ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সার্জারির পর থেকে বাচ্চার জন্ম দিতে মায়ের ১৫ মাস সময় লেগেছে৷ চিকিৎসকবৃন্দ খুঁজে পেয়েছে এক অভূতপূর্ব উন্নতি যা একটা আশার আলো নিয়ে এসেছে বন্ধ্যা মহিলাদের জন্য,যার ফলে সহজেই তাঁরা গর্ভধারণ করতে পারছেন৷

      
কী ভাবে এক মৃত মহিলার জরায়ু প্রতিস্থাপিত করার প্রক্রিয়া যোগ দিল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যে ??                                                                                    

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল টি ছিল এক জটিল প্রক্রিয়া এবং এখানে বিভিন্ন বিভাগের চিকিত্সকরা সক্রিয় ভাবে যোগদান করেছিলেন যার মধ্যে রয়েছেন গাইনোকোলজি,ফার্টিলিটি,নিওনেটোলজি,অ্যানাস্থেসিওলজি, সংক্রামক রোগ এবং বায়োএথিক্স এই সমস্ত বিভাগীয় চিকিৎসকদের সহায়তায় প্রতিস্থাপন করণ প্রক্রিয়ার প্রকল্পকে বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয়েছে৷এই প্রক্রিয়াটি খুবই সময় সাপেক্ষ৷যেখানে প্রতিস্থাপন যোগ্য প্রার্থীদের প্রথমে সাতটি ধাপের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷প্রথমে চিকিৎসকেরা বন্ধ্যা মহিলার সমস্ত চিকিৎসাজনিত ইতিহাস জানার পর তাকে তাদেরকে দুবার করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পাঠিয়েছিলেন৷মেডিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের পর মহিলাটিকে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷যেখানে ল্যাবরেটরিতে ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের করে বাবার শুক্রাণুর মধ্যে পাঠিয়ে ইমপ্ল্যান্টেশেনের জন্য পর্যাপ্ত ভ্রুণ সৃষ্টি করে,তার পর চিকিৎসকেরা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াটি শুরু করেছিলেন৷                                                                                                                             

ঠিক কী ঘটেছিল ঐ মহিলার জরায়ু প্রতিস্থাপনের সময় ?       

শিশুকন্যাটিকে জন্ম দেওয়ার জন্য ওই মহিলার ক্ষেত্রে সেই সময় কোনও জীবিত দাতা না পাওয়ায় চিকিৎসকেরা মৃত এক মহিলার জরায়ু পুনরুদ্ধার করেছিলেন৷ট্রান্স প্ল্যানটেশেনের বিশেষজ্ঞরা রোগীকে কিছু ইমিউনোসাপ্রেসি ড্রাগস দিয়েছিলেন সার্জারির পরেই,সেই কারণেই তাঁর দেহ বাইরের থেকে আসা জরায়ু প্রত্যাখ্যান করতে পারেনি৷প্রতিস্থাপিত জরায়ুর সংক্রমণের কারণে থ্রমবোসিস হওয়ার আশঙ্কাও ছিল হওয়ার আশঙ্কাও ছিল৷যাই হোক,এই মহিলার ক্ষেত্রে এ রকম কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রকাশিত হয়নি এবং তাঁর দেহ সেই মৃত মহিলার জরায়ু প্রতিস্থাপনে কার্যকরী হয়েছিল৷এই সমস্ত প্রক্রিয়ার পরে,প্রতিস্থাপন সার্জারির ১৫ মাসের মধ্যে সিজারের দ্বারা এক সুস্থ সবল শিশুর জন্ম দিলেন ওই মহিলা৷

মৃত মহিলার থেকে জরায়ু নিয়ে, তা প্রতিস্থাপন করা – একটি সূক্ষ্ম কাজ

ওই মহিলার ক্ষেত্রে ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সার্জারি টি ছিল খুব সূক্ষ্ম,যদিও মৃত মহিলার থেকে জরায়ু পুনরুদ্ধার করে তা গৃহীতার মধ্যে সঞ্চালিত করতে অনেকটাই সময় লেগেছিল৷জীবিত দাতার ক্ষেত্রে,দাতা এবং গ্রহীতা একই চিকিৎসালয়ে উপস্থিত থাকে,এবং সমগ্র অপারেশন খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হয়৷চিকিৎসকেরা কিছু জীবনদায়ী অঙ্গ যেমন কিডনি,হার্ট এবং লিভারের পাশাপাশি কিছু জীবন বৃদ্ধি করার মতো অঙ্গ যেমন জরায়ু কে মৃত দাত্রীর থেকে বের করতে আগে উদ্যত হয়েছিলেন৷যাই হোক সমস্ত খারাপ জিনিসের পাশাপাশিও রোগীর দেহ জরায়ুকে গ্রহণ করেছিল এবং তিনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের পরেও এক  সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ এই অভূতপূর্ব সার্জারি এক নতুন দিগন্ত এনে দিয়েছে এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছে বন্ধ্যা মহিলাদেরও বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য৷ 

নিউক্র্যাড স্বাস্থ্য কথা – সুস্থ পরিবার, সুস্থ সমাজ । নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে এলো বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংবাদ মাধ্যম আমাদের মাতৃভাষা বাংলা তে । নিউক্র্যাড হেলথ পড়ুন আর স্বাস্থ্য বিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ তে এগিয়ে থাকুন ! শেয়ার করে আমাদের সমাজের সচেনতা বাড়াতে সহযোগিতা করুন । আপনারা পেজ টি লাইক করুন আর ভালো লাগলে রিভিউ দিতে কার্পণ্য করবেন না ।

ধন্যবাদান্তে,
ড: বিশ্বরূপ ঘোষ, গবেষক, আমেরিকায় কর্মরত