ডিসেম্বর 24, 2024

মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের চুল পড়ার সমস্যা ও সমাধানের কিছু উপায়

pexels-photo-2043868
Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন। কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত মার্চ 30, 2019

মেনোপজের পর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মহিলাই অকালে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুল পড়া বংশগত সমস্যা । এছাড়াও হরমোনের সমস্যা এবং দূষণের ফলেও চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝড়ে পড়ে। প্রতিদিন 50-100 টি চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যখন প্রতিদিন তার থেকে অনেক বেশি চুল ঝরে পড়তে থাকে তখনই সমস্যার শুরু হয়। পুরুষ এবং মহিলা চুলের ক্ষতির মধ্যে প্রাথমিক পার্থক্য হল পুরুষের পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথমে সামনের দিকে চুল গুলো ঝরে যায় তারপরে তা ক্রমশ পিছনের দিকে এগিয়ে যায়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে কি হয় মেয়েদের মাথার সিঁথির আশেপাশের চুল পড়ে গিয়ে ফাঁক হয়ে তারপর সেটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তবে হ্যাঁ মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরো মাথা ফাক হয়ে গিয়ে টাক পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে তবুও বেশিরভাগ মহিলাই কম চুল নিয়েই সারাটা জীবন কাটাতে হয়।

বিভিন্ন ধরনের চুল পড়ার সমস্যা:-
মেয়েদের ক্ষেত্রে 5 ধরনের চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়। এগুলি নিয়ে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

1) অ‍্যান্ড্রোজেনিক অ‍্যালোপেশিয়া:-

অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া তে বেশিরভাগ পুরুষ ও মহিলা আক্রান্ত। চুল পড়ার অন্যান্য সমস্যা গুলোর মধ্যে এই সমস্যাই সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে। এই ক্ষেত্রে গোটা মাথা থেকে চুল ঝরে গিয়ে, চুল খুব পাতলা হয়ে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হয় কারণ অ‍্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অ‍্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনটি পুরুষ হরমোন, যা মেয়েদের দেহও খুব কম পরিমাণে উপস্থিত থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময় যেমন মেনোপজের পর, প্রেগনেন্সি সময়, বা জন্মনিরোধক ওষুধ খেতে থাকলে, বা ওভারিয়ান সিস্ট হলে মেয়েদের দেহে অ‍্যান্ড্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। আর এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে টেস্টোস্টেরন হরমোন পরিবর্তিত হয়ে ডাইহাইড্রেট টেস্টোস্টেরণে পরিণত হয়। যা অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়ার মূল কালপ্রিট। এক্ষেত্রে চুলের গোড়া আলগা হয়ে গিয়ে চুল ঝরে পড়ে।

2) টেলোজেন এফ্লুভিয়াম:-

যখনই মহিলার কোনো তীব্র সংক্রমণ, সার্জারি, অপুষ্টি, প্রসব, বা চরম চাপের সম্মুখীন হয়, তখন তাদের চুলের ব‍্যাপক ক্ষতি হয়, আর এই ধরনের সমস্যাই টেলোজেন এফ্লুভিয়াম হিসাবে পরিচিত। এই‌ পরিস্থিতিতে প্রায় 30 শতাংশ চুলই টেলোজেন পর্যায়ে উপস্থিত থাকে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, শুধুমাত্র 5-10 শতাংশ চুল এই ফেজে থাকে। টেলোজেন এফ্লুভিয়ামে আক্রান্ত ব্যক্তির চুল এই অবস্থায় ছয় সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত রয়ে যায়।

3) অ‍্যানাগেন এফ্লুভিয়াম:-

এই ধরনের চুলের সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়। কেমোথেরাপি তে যে সমস্ত ওষুধ গুলো ব্যবহার করা হয় সেই ওষুধগুলি আসলে কে কোষগুলি দ্রুত বিভাজিত হয় সেই কোষগুলিকে লক্ষ্য করে পরে। হেয়ার ফলিকল এবং ম্যালিগন্যান্ট কোষ দুইই খুব দ্রুত বিভাজিত হয়, এর ফলে হেয়ার ফলিকলেও এই ড্রাগের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ফলস্বরূপ চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায় এবং চুল ভেঙে পড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে অনেক মহিলার 90% চুল পড়ে যায়।

4) অ‍্যালোপেসিয়া অ‍্যারেটা:-

এই ক্ষেত্রে, ব্যক্তিদের নিজ নিজের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই নিজের চুলের ক্ষতি করে। ফলে হঠাৎ করেই প্রচুর পরিমাণে চুল হ্রাস পায়। এই ক্ষেত্রে একটি সুখবর আছে যে প্রায় 70 শতাংশ ক্ষেত্রেই আবার নিজের থেকেই নূতন চুল গজাতে শুরু হয়। সাধারণত এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।

5)ট্রাকশন অ‍্যালোপেসিয়া:-

এই ক্ষেত্রে চুল পড়ার সমস্যা মূলত খুব টাইট করে চুল বেঁধে রাখার ফলে, হয় যেমন পনিটেল করে চুল বাঁধা বা কোন ভারী জিনিস চুলে আটকানো। চুল সোজা করা বা খুব দীর্ঘ সময় ধরে চুল খুব টাইট করে বেঁধে রাখার ফলে এই চুলের ক্ষতি হয় চুলের গোড়ার ক্ষতি হয় এবং চুল উঠে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।

মহিলাদের চুলের সমস্যা সমাধানের কিছু টিপস অনুসরণ করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। নীচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:-

পুষ্টিকর খাদ্য:-
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় মহিলারা পুষ্টির অভাবের ফলে চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। তবে হ‍্যাঁ আপনি কত পরিমাণ খাবার খেলেন তা‌ নয়, আপনি যে খাবারটা খেলেন সেটা গুণগত মান দিক দিকে কতটা পর্যাপ্ত তার উপরেও নির্ভর করে। চুল ভালো রাখতে আপনাকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তাজা ফলমূল, সবজি, গোটা শস্য, ডিম খেতে হবে। তবে এই ধরনের খাবার খাওয়া ও প্রয়োজনীয় সকল যত্ন নেওয়ার পরেও যদি প্রচুর পরিমাণে চুল ঝরে যায়, তবে অবিলম্বে রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

আয়রন এবং জিংক সাপ্লেমেন্ট ব্যবহার করুন:-
রক্তে প্রতি মিলিমিটারে 70 ন্যানোগ্রাম এর থেকে কম আয়রন থাকে তাহলে কিন্তু চুলের সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি গবেষণায়ও পাওয়া গেছে যদি মহিলাদের দেহের জিংকের পরিমান কমে যায় তাহলেও চুল পড়ার সমস্যা খুব বেশি বেড়ে যায়। আমাদের দেহে আয়রন এবং জিংক এর সাম্যতা বজায় রাখা খুবই দরকার। তাই জন্য চুলের সমস্যা বা চুল ঝরে পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিঙ্ক ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। যা আপনার দেহে লোহা এবং জিংকের ঘাটতি পূরণ করবে। তবে হ্যাঁ, নিজে নিজে নয় ! আপনার জন্য কতটা পরিমাণ সাপ্লিমেন্ট খাওয়া প্রয়োজন তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যবহার করুন।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ কম করুন:-
খুব বেশি এর মাত্রারিক্ত মানসিক চাপ কিন্তু চুল ঝরে পরা একটি বড় কারণ। নিয়মিত যোগব্যায়াম বা ধ্যান করার চেষ্টা করুন আপনার চাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ব্যায়াম করলে সারা শরীরের রক্তের সঞ্চালন সঠিক ভাবে হয়। ও রক্তে সুগার ও হরমোন মাত্রা বজায় থাকে।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত ব্যায়াম ও যোগাভ‍্যাসের চুলের বৃদ্ধিতে উপকারী ভূমিকা আছে।

আপনার যদি এই ধরনের চুলের সমস্যা দেখা দেয় তবে অবহেলা করবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ভালো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।