ডিসেম্বর 24, 2024

অ্যাজমা COVID-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে সবসময় ঝুঁকি বা তীব্রতা বাড়ায় না – বলছে গবেষণা

DSC_2Mega_Pix

DSC_2Mega_Pix

Reading Time: 4 minutes

মোনালিসা মোহন্ত, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা, জুলাই ১২, ২০২০

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাটজার উনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন অ্যাজমা (হাঁপানি) COVID-19 রোগীদের ক্ষেত্রে সবসময় জীবনের ঝুঁকি বা রোগের তীব্রতা বাড়ায় না। এই COVID-19 মহামারী চলাকালীন হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক তথ্য।এই গবেষণার ফলাফল Journal of Allergy and Clinical Immunology জার্নাল এ প্রকাশিত হয়েছে।

COVID-19 প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই ডাক্তাররা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে হৃদরোগ, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, কিডনি বা লিভারের রোগ আছে এমন রোগীদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তবে বিগত কয়েক মাসের তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য মানুষদের মতোই। মৃদু শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে এমন কমবয়সী COVID-19 রোগীদের ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি (risk) বা রোগের তীব্রতা (severity) বাড়ায় না তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে এমন বয়স্ক বা বয়স্কা COVID-19 রোগীদের ক্ষেত্রে কিন্তু জীবনের ঝুঁকি (risk) বা রোগের তীব্রতা (severity) বাড়াতে পারে। রোগীর বয়সের সঙ্গে অনেকসময় নির্ভর করে। হাঁপানি রোগীরা এমনিতেই শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার সমস্যা কষ্ট পান, তারপরে তারা জানতেন করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হলে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায় । ফলে হাঁপানি রোগীদের মধ্যে অতিমাত্রায় ভীতি সঞ্চারিত হয়েছিল। যাদের হাঁপানি রোগ নেই এবং যারা হাঁপানিতে আক্রান্ত সঙ্গে নিয়মিত হাঁপানিজনিত প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, উভয়ের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হলে সমমাত্রার ঝুঁকি থাকে তবে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি বা লিভারের রোগ আছে এমন রোগীদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এমনকি অনেকক্ষেত্রে হাঁপানি রোগীদের থেকেও অসুস্ততার তীব্রতাও বেশি হতে পারে। তবে আরো গবেষনার প্রয়োজন আছে।

হাঁপানি রোগীদের কি সমস্যা দেখা দেয়?

যখন কোন ব্যক্তির শ্বাসকষ্টজনিত শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন দেখা যায় অতিরিক্ত মিউকাস নিঃসরণ এর ফলে, তাদের শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন নালীগুলি ফুলে ওঠে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আজ অবধি বের হয়নি যে রোগী একদম সেরে উঠবে। নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বুকে চাপ ধরা, কাশি হওয়া, নিশ্বাস নেওয়ার সময় অন্যরকম আওয়াজ ওঠা ইত্যাদি নানান উপসর্গ দেখা যায়।

ফুলের পরাগ, ধূলিকণা, উগ্র পারফিউমের গন্ধ, ধূপের ধোঁয়া অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম, সাইনাইটিস, ধূমপান, স্ট্রেস, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস শ্বাসকষ্ট কে বাড়িয়ে তুলতে পারে।এমনিতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে কিছু যায় না, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যখন ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়।

হাঁপানির চিকিৎসা কি?
আগেই বলা হয়েছে যে এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা, যা সম্পূর্ণ নির্মূল হবার কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। চিকিৎসকেরা ওষুধের মাধ্যমে এবং ইনহেলার ব্যবহার করে হাঁপানি রোগীর সমস্যাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

নিচে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল :-

কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার (Corticosteroid Inhalers):-
এই কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। একটি দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা। যে সমস্ত রোগীদের প্রায়শই হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এই ইনহেলার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। নিয়মিত এই কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার গ্রহণ করার ফলে রোগীর শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন নালীতে যে ইনফ্লামেশন দেখা যায় তা অনেক কম হয় এবং মিউকাস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। বেকলমেথেসোন, বুডসোনাইড এবং ফ্লুটিকাসোন ইত্যাদি ইত্যাদি কর্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলারগুলির কয়েকটি উপাদান।
এটি যেহেতু একটি দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসাব্যবস্থা তাই অনেকেই ভয় পান। তবে গবেষকদের মতে এই ইনহেলার ব্যবহারের বিশেষ কোনো দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

লিউকোটেরাইন মডিফায়ার্স (Leukotriene Modifiers):-
লিউকোট্রিয়েনে মডিফায়ার সাধারণত মুখ দিয়ে খাবার, অর্থাৎ ওরাল মেডিকেশন।
এগুলিতে মন্টেলুকাস্ট, জ্যাফিরলুকাস্ট এবং জেলিউটন ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ওষুধ গুলি ব্যবহারের 24 ঘন্টার মধ্যে হাঁপানির উপসর্গগুলি কমে যেতে পারে। তবে, এই ওষুধগুলির দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের হলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে; যেমন- আগ্রাসন, হ্যালুসিনেশন, এবং আত্মঘাতী প্রবণতা ইত্যাদি।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে দ্রুত উপশম প্রদানকারী ঔষুধ:-

অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে খুব শ্বাসকষ্ট দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা দ্রুত উপশম প্রদানকারী ঔষুধ দেন। শর্ট অ্যাক্টিং বিটা-অ্যাগোনিস্ট দ্রুত শ্বাসকষ্টের উপশম ঘটাতে পারে। এই ধরনের ওষুধ গুলিতে আলবিউট্যারল এবং ইভালবিউট্যিরল জাতীয় ব্রঙ্কোডাইলেটর উপস্থিত থাকে যা অতি দ্রুত ফুসফুসের ওপরে কাজ করে। এই ধরনের ওষুধ গুলো নর্মাল ইনহেলার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করে রোগীর দেহে প্রবেশ করানো হয়।

অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা নেয়া প্রয়োজন

সেন্টার ফর ডিজিজ্ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের তরফ থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাঁপানির চিকিৎসা করতে কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সময় কর্টিকোস্টেরয়েড পরিচালনা করা উচিত নয়। কর্টিকোস্টেরয়েডগুলি আক্রান্তদের মধ্যে ভেন্টিলেশনর প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু চিকিৎসকের মতে এতে রোগীর সেরে ওঠার সময়কাল বাড়িয়ে তোলে।তবে ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যালার্জি এবং ইমিউনোলজির পরিচালক মিচেল এইচ গ্রেসন জানিয়েছেন, এই সতর্কতা যারা আগে থেকেই কর্টিকোস্টেরয়েড থেরাপির আওতাধীন রয়েছেন সেইসব অ্যাজমা রোগীদের জন্য নয়। তাদের এই‌ থেরাপি বন্ধ করে দিলে, হিতে বিপরীত হতে পারে, হাঁপানি আরও বেড়ে যায়। এমনিতেই এই মরসুমে, বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে পরাগ মিলে রয়েছে, যা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বাড়িতে তোলে।

অ্যাজমা রোগীরা কীভাবে COVID-19 সংক্রমণ রোধ করতে পারেন?

হাঁপানি রোগীদের COVID-19 সংক্রমণ রোধ করার জন্য অন্যান্যদের মতো একই নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করতে হবে। তাদেরও প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সাবান বা অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটাইজারগুলি দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব অনুশীলন করতে হবে। আর হাঁপানির সমস্যা এড়াতে দূষণ, আতর, পরাগ, স্ট্রেস এবং কঠোর শারীরিক ক্রিয়াকলাপের ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।

বি: ড্র: – এই লেখা সাধারণ মানুষের জ্ঞান ও সচেতনার জন্য। এটি কোনো মেডিকেল কন্সালটেশন নয়। প্রয়োজনে আপনার ফিজিশিয়ান এর সাথে যোগযোগ করুন।

ডেঙ্গু আবার দেখা দিচ্ছে – কিভাবে সাবধান হবেন?
করোনা মহামারী ও কিডনি রোগ : সচেতনতা ও চিকিৎসা – ডাঃ উপল সেনগুপ্ত, কিডনি বিশেষজ্ঞ, কলকাতা
বিষন্নতার উপসর্গগুলো জেনে রাখা ভালো
http://www.neucrad.com