এপ্রিল 20, 2024

ভারতে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কম্বাইন্ড রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি ফেজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যে অনুমোদনের অপেক্ষায়

Reading Time: 4 minutes

ডঃ শুভময় ব্যানার্জী, পি.এইচ.ডি নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা জুলাই ১৪, ২০২০

ভারতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নবতম সংযোজন হতে চলেছে কম্বাইন্ড রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি (Combined Repurpose Antiviral Therapy)। কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (CSIR) এর সাথে যৌথ উদ্যোগে হায়েদ্রাবাদের ল্যাক্সাই লাইফ সায়েন্সেস বায়োফার্মা কোম্পানি ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের কাছে এই বিশেষ অ্যান্টিভাইরাল থেরাপির ফেজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যে প্রয়োজনীয় অনুমোদন চেয়েছে। এই গবেষণার আর একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক হোল- পোষক কোষ নির্দেশিত চিকিৎসা ব্যাবস্থা বা হোস্ট ডাইরেক্টেড থেরাপি (Host Directed Therapy)। কম্বাইন্ড রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি এর সাথে হোস্ট ডাইরেক্টেড থেরাপির প্রয়োগ কোভিড-১৯ চিকিৎসা গবেষণায় নিঃসন্দেহে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা। 

এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার আগে, অ্যান্টিভাইরাল থেরাপির বিষয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কথা জেনে নেওয়া যাক। 

অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগ তার ব্যাবহারঃ 

ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধক চিকিৎসা হিসাবে অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি করা হয়। সাধারনতঃ এই অ্যান্টিভাইরালগুলি সংক্রমণকারী ভাইরাসকে পোষককোষে ঢুকতে বাধা দেয়। যদি পোষককোষ সংক্রমিত হয় তবে অ্যান্টিভাইরাল ভাইরাসের প্রতিলিপিকরনে বাধা দেয়। ফলে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত হয়। ১৯৬৩ সালের শেষের দিকে প্রথম অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ আয়োডক্সিইউরিডিন (Iodoxiuridine) চিকিৎসার জন্যে অনুমোদিত হয়। এর পরেও বেশ কিছু অ্যান্টিভাইরাল আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু দেখা গেছে প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কৃত অ্যান্টিভাইরালগুলি ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করার সাথে সাথে, শরীরের সাধারন কোষেরও ক্ষতি করতে শুরু করে। বিপুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সেই কারনে, অ্যান্টি বায়োটিকের মতো অ্যান্টিভাইরালের প্রয়োগ বহুদিন কার্যকরী হতে পারেনি। অনেক গবেষণার পর, ১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি, অ্যাজিডোথাইমিডিন অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ এইচআইভি (HIV) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে  ব্যাবহার করা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণার অভাবনীয় উন্নতির কারনে, বর্তমানে আবিষ্কৃত বহু অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগ পৃথক বা সম্মিলিত ভাবে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এদের মধ্যে অ্যামানটাডাইন (ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস), অ্যাসাইক্লোভির (হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস), গ্যানসাইক্লোভির (সাইটোমেগালো ভাইরাস), রাইবাভিরিন (হেপাটাইটিস সি ভাইরাস) ইত্যাদির নাম উল্লেখ্য। 

http://www.neucrad.com

রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ:

The most fruitful basis for the discovery of a new drug is to start with an old drug”             Sir James Black

১৯৯৮ সালে ফিজিওলোজি ও মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বৈজ্ঞানিক স্যার জেমস ব্ল্যাকের এই বিখ্যাত উক্তিটি থেকে রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বহু অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ একাধিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, তাদের স্বাভাবিক দেহকোষের উপর পার্শপ্রতিক্রিয়া কম হতে পারে। নতুন কোন ভাইরাসের সংক্রমণের যদি উপস্থিত কোন অ্যান্টিভাইরাল না জানা থাকে, সেক্ষেত্রে পূর্বে আবিষ্কৃত অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগগুলিকে পুনরায় বিভিন্ন কম্বিনেশনে ব্যবহার করা যায়। এই ধরণের ড্রাগ ব্যবহারের সুবিধা হলো এতে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হয় না। সহজেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষণা করা যায় এমনকি, এই রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে  “কোম্প্যাশনেট ব্যবহার” করা যায়। তাই সাম্প্রতিক কালে অপরিহার্য হয়েছে উঠেছে রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের ব্যবহার। 

হোস্ট ডাইরেক্টেড থেরাপি:

অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার দুটি প্রধান আঙ্গিক আছে। একটি হলো অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের মাধ্যমে রোগসংক্রমণকারী ভাইরাসকে সরাসরি আক্রমণ করে তার পোষক কোষে ঢোকা বন্ধ করা, সংক্রমিত কোষে ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণ বন্ধ করা, ভাইরাসের প্রোটিন তৈরীতে বাধা দেওয়া ইত্যাদি। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক হলো দেহকোষের যে প্রোটিনগুলি ভাইরাস সংক্রমণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, সেই প্রোটিনগুলির উপর গবেষণা করে, ড্রাগের সাহায্যে তাদের কোষীয় সংকেত পথের (Cell Signaling Pathways) বিভিন্ন স্থান বন্ধ করে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই পদ্ধতিকে হোস্ট ডাইরেক্টেড থেরাপি বলা হয়। 

ল্যাক্সাই লাইফ সায়েন্সেস এবং CSIR তিন ধরণের কম্বিনেশনে রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। সেগুলি হলো ফ্যাবিপিরেভির ও কোলচিসিন, ইউমিফেনোভির ও কোলচিসিন, নাফামোস্ট্যাট ও 5-অ্যামিনো লিভিউলিনিক অ্যাসিড (5-ALA)। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও প্যাথোলজির উপর ড্রাগগুলির প্রভাব পরীক্ষা করা হবে। বিজ্ঞানীদের পরিকল্পিত এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নাম হলো- ‘মিউকোভিন (MUCOVIN)’। কম্বাইনড রিপারপাস অ্যান্টিভাইরালের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সহযোগী হয়েছে মেদান্তা মেডসিটি হাসপাতাল। সেখানে প্রায় ৩০০ রোগীর উপর এই ট্রায়াল করা হবে। 

CSIR এর ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ শেখর সি. মান্ডে জানিয়েছেন এই রিপারপাস অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগগুলি একে অপরের মধ্যে পরিপূরক (Complementary), সংযোজিত (Additive) এবং অতিক্রিয়ার (Synergistic) বৈশিষ্ট দেখায়। ফলে এই বিশিষ্ট কম্বিনেটোরিয়াল থেরাপি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারবে ও রোগীরাও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। CSIR এর তরফে এই প্রজেক্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলি হলো হায়দ্রাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি এবং জম্মুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন। 

ল্যাক্সাই লাইফ সায়েন্সেস কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার রাম এস. উপাধ্যায়ের মতে এই ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণে সাহায্যকারী প্রোটিনগুলিকে গবেষণার লক্ষ্য হিসাবে স্থির করা হবে। তার সাথেই পোষককোষের কিছু প্রোটিনের উপরেও নজর রাখা হবে যারা ভাইরাসের জীবনচক্র চালানো ও শরীরে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ সৃষ্টির জন্যে দায়ী। কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিস্টার ভামসি মাড্ডিপাটলা এই কোস্পন্সরশিপ গবেষণার গুরুত্ব উল্লেখ করে জানিয়েছেন মানুষের সেবায়, জীবনদায়ী ওষুধ আবিষ্কারের জন্যে কোম্পানি দায়বদ্ধ। 

নিঃসন্দেহে এই গবেষণা সফল হলে কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের সময়ে চিকিৎসা পদ্ধতিতে এক নতুন ধারা সংযোজিত হবে। 

তথ্যসূত্রঃ

  1. https://pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=1637016
  2. Yang CW, Peng TT, Hsu HY, et al. Repurposing old drugs as antiviral agents for coronaviruses [published online ahead of print, 2020 May 23]. Biomed J. 2020;S2319-4170(20)30066-4. doi:10.1016/j.bj.2020.05.003
  3. https://www.cell.com/trends/microbiology/pdf/S0966-842X(18)30087-8.pdf
  4. Harrison C. Coronavirus puts drug repurposing on the fast track. Nat Biotechnol. 2020;38(4):379-381. doi:10.1038/d41587-020-00003-1
  5. Zumla A, Azhar EI, Arabi Y, et al. Host-directed therapies for improving poor treatment outcomes associated with the middle east respiratory syndrome coronavirus infections. Int J Infect Dis. 2015;40:71-74. doi:10.1016/j.ijid.2015.09.005
  6. Zumla A, Hui DS, Azhar EI, Memish ZA, Maeurer M. Reducing mortality from 2019-nCoV: host-directed therapies should be an option. Lancet (London, England). 2020 Feb;395(10224):e35-e36. DOI: 10.1016/s0140-6736(20)30305-6.
  7. Zumla A, Rao M, Wallis RS, et al. Host-directed therapies for infectious diseases: current status, recent progress, and future prospects. Lancet Infect Dis. 2016;16(4):e47-e63. doi:10.1016/S1473-3099(16)00078-5
  8. Khamaikawin W, Saoin S, Nangola S, et al. Combined Antiviral Therapy Using Designed Molecular Scaffolds Targeting Two Distinct Viral Functions, HIV-1 Genome Integration and Capsid Assembly. Mol Ther Nucleic Acids. 2015;4(8):e249. Published 2015 Aug 25. doi:10.1038/mtna.2015.22
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন [email protected]