32 বছর বয়সে এক মহিলা 3 জন আলাদা আলাদা ব্যক্তির DNA দ্বারা গঠিত এক শিশুর জন্ম দিলেন
কলমে শুভ্রা অধিকারী,অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
এপ্রিল 9, 2019 দিনটি, চিকিৎসা জগতে একটি অবিস্মরনীয় দিন হয়ে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
উন্নত চিকিৎসার পদ্ধতি আর যথাযথ বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহারে 32 বছর বয়সে এক মহিলা 3 জন আলাদা আলাদা ব্যক্তির DNA দ্বারা গঠিত এক শিশুর জন্ম দিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে দ্য ইনস্টিটিউট অফ লাইফ এথেন্সে। মহিলাটি বন্ধ্যা ছিলেন। এর আগেও চারবার IVF করানোর চেষ্টা করলেও, চারবার ই তিনি অসফল হয়েছিলেন।
তারপর তিনি দ্য ইন্সটিটিউট অফ লাইফ এথেন্সের দ্বারস্থ হলে তার শারীরিক সমস্যাগুলি নিরীক্ষণ করার পর, একদল গ্রীক এবং স্প্যানিশ ডাক্তার DNA-সুইচিং টেকনিক ব্যবহার করেন। ডাক্তাররা বাবার দেহ থেকে শুক্রাণু, মায়ের দেহ থেকে DNA, এবং দাতার দেহ থেকে প্রাপ্ত ডিম্বাণু ব্যবহার করেন। এই মুহূর্তে মহিলাটি এই তিনজনের DNA-বহনকারী একটি 2.9 কেজি ওজনের সুস্বাস্থ্য যুক্ত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
চিকিৎসকের দল এই মেডিকেল মির্যাকলটি ঘটানোর জন্য মায়ের দেহ থেকে জেনেটিক মেটেরিয়াল নিয়ে ডোনারের ডিম্বাণুতে ইনজেক্ট করে, ডোনারের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করে দেন। এর ফলে অল্প পরিমাণ হলেও ডোনারের জেনেটিক মেটেরিয়াল শিশুর মধ্যে রয়ে গেছে, কারন আমাদের দেহের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনঅঙ্গানু মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব DNA-উপস্থিত থাকে। অর্থাৎ শিশুর দেহর মাইটোকন্ড্রিয়ার DNAটি ডোনারের।
দ্য ইনস্টিটিউট অফ লাইফ, এথেন্সের গবেষকরা কী বলছেন একটু জেনে নেওয়া যাক:-
এই ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন যে তাঁরা তাদের জন্য খুবই গর্বিত এবং উচ্ছসিত।
তিনি বলেছেন যে তাদের এই কাজ করতে আন্তর্জাতিক স্তরে এক নূতন দ্বার উন্মোচন করে দেবে।
যে সমস্ত মহিলা বন্ধ্যা বা মাইটোকন্ড্রিয়ার কোনো বিরল রোগে আক্রান্ত, বারবার IVF করানো সত্বেও মা হতে পারছেন না, এরপর থেকে তারাও মা হতে পারবেন। একটি নারীর জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হল মাতৃত্বের স্বাদ। মহিলা মাত্রই তার অধিকার আছে, তার নিজ্বসব জেনেটিক মেটেরিয়াল বহনকারী শিশুর জন্ম দিবার। আর সেই কাজেই সাহায্য করবে তাদের দেখানো এই পথ। পর তারা আরো 24টি মহিলা উপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। এই সমস্ত মহিলারাই হয় বন্ধ্যা বা মাইটোকন্ড্রিয়ার কোনো বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে আছেন, তাই তারা নিজেদের ডিম্বাণু ব্যবহার করে মা হতে পারছেন না।
তো যাদের উপর সমীক্ষা চালানো হচ্ছে তাদের মধ্য এখনো পর্যন্ত 8 টি এমব্রায়ো (ভ্রূন) তারা জেনেটিক সুইচিং টেকনোলজির সাহায্য সফল ভাবে গঠন করে ফেলেছেন।
এর আগে DNA সুইচিং টেকনোলজির কবে ব্যবহার করা হয়েছিল?
এর আগেও 2016 সালে মেক্সিকোতে DNA সুইচিং টেকনোলজির ব্যবহার করে, এক পরিবারের হাতে তাদের নতুন সদস্যদের তুলে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে শিশুটির মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়া কোনো বিরল রোগ আক্রান্ত ছিল।
দ্বিতীয়বার উকরাইনে, আরেক বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত মায়ের হাতে সন্তানকে তুলে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। এখানেও এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল।
নিউক্যাসলের একদল গবেষক চিকিৎসক এই নতুন ধরনের অর্থাৎ তিন জনের DNA ব্যবহার করে আয় করার পদ্ধতির কথা প্রথমবারের মতো ভাবেন এবং তারাই এই পদ্ধতি বার করেন 2018 সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনাইটেড কিংডম সরকার 3 জনের ডিএনএ ব্যবহার করে বাচ্চা প্রসব করার অনুমতি প্রদান করেছেন। আসলে মায়ের দেহের মাইটোকন্ড্রিয়াই সর্বদা তার সন্তানের দেহে সঞ্চারিত হয়। তো যে সমস্ত মায়েদের মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA তে কোন ধরনের অসুস্থতা আছে, সেই কারণে সন্তান ধারণ করতে পারছেন না। বা সন্তান ধারণ করতে পারলেও, তারা চান না যে তাদের মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA তে যে ত্রুটি আছে তা তার সন্তানের দেহে সঞ্চারিত হোক তখন তারা এই মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA অন্য মহিলার থেকে নিতে পারেন।
কিন্তু যাই হোক এটা যতই ভালো হোক না কেন, এখানে কিন্তু একটা নীতিগত সমস্যা আছে। আর সেই নিয়ে এই বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন। সেহেতু, এখনো আমরা জানিনা যে আমরা এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার ছাড়পত্র পাওয়া যাবে কীনা।
কোষের গঠন:-
আচ্ছা এবার আমরা বরং একটু কোষের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করি তাতে আমাদের উপরে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো সেটি একটু বুঝতে সুবিধা হবে, তাই নয় কি? আমাদের দেহের প্রচুর কোশ আছে। আমাদের দেহের গঠনগত ও কার্যগত একক হল কোন। এর ভেতর অনেক ছোট ছোট কোশ অঙ্গাণু আছে। যেগুলি প্রত্যেকটি নিজের নিজের কাজের জন্য অপরিহার্য। এগুলো কি কি? নিউক্লিয়াস, মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বডি, লাইসোজোম, সেন্ট্রোজোম ইত্যাদি; এছাড়াও কোষের নিউক্লিয়াস এর ভেতর উপস্থিত থাকে একগুচ্ছ জেনেটিক মেটেরিয়াল; যা আমাদের বৈশিষ্ট্যগুলোকে বংশপরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত করতে সাহায্য করে। মূল জেনেটিক মেটেরিয়াল নিউক্লিয়াসে থাকলেও, এক টুকরো জেনেটিক মেটেরিয়াল কিন্তু মাইটোকনড্রিয়া ভেতরেও রয়ে গেছে।
জিনের একটি অংশ হল ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোম আবার দুই প্রকার অর্থাৎ অটোজম এবং সেক্স ক্রোমোজোম। একটি অপত্য তার বাবা মা দুই এর থেকে জিনের কিছুটা করে অংশ পান।