এপ্রিল 19, 2024

বিহার ও উওর-প্রদেশে নিউমোনিয়া আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুর কোন চিকিৎসা হচ্ছে না, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা – সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন, কলমে-পরমানন্দ বর্মন। অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত।

নিউমোনিয়া হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারনে সৃষ্ট ফুসফুসের একধরনের মারাত্মক সংক্রমণ। যেখানে ফুসফুসে অ‍্যালভিওলাইগুলি (অর্থাৎ ছোট থলির ন‍্যায় প্রবর্ধক) পুঁজ জাতীয় তরলে ভরাট হয়ে পড়ে; এর ফলে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।

একজন সুস্থ সবল ব‍্যক্তি দুই ভাবে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে –

  • (1) সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে।
  • ‌ (2) স্ব‍্যাস্থ সুরক্ষা ব‍্যবস্থার কোনো ত্রুটি থেকে।

প্রথমটিকে বলা কম‍্যিউনিটি অ‍্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া; যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। বিশ্বব্যাপী, প্রতিবছর প্রায় 151.8 মিলিয়ন নতুন আক্রান্তের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। ভারত সর্বাধিক প্রভাবিত পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি।

কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিত এবং সঞ্জয় গান্ধী পোস্টগ্র‍্যাজুয়েশন ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, (লখনৌ, উত্তরপ্রদেশে) উত্তর ভারতের চারটি জেলায়, 2-9 মাস বয়সী শিশুদের মধ্য নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার হার কতটা তার উপর গবেষণায় চালান। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের এই সমীক্ষার সমস্ত ব‍্যায়ভার বহন করেছে। সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল ও গবেষণার সকল তথ্য PLoS ONE নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এই গবেষণাটি উত্তর প্রদেশের ইত্তাহা ও লখনৌ জেলায় এবং বিহারের পাটনা ও দরভাঙ্গা জেলার উপর চালানো হয়েছিল। গবেষকরা লক্ষ্ণৌের ২40 টি গ্রামের ২400 টি পরিবার থেকে মোট 3351 টি শিশুর উপর সমীক্ষা করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছিশ যে বিগত 12 মাসে এই শিশুদের 24.58% কম‍্যিউনিটি অ‍্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত করেছে এবং তাদের মধ্যে মাত্র 4% এই অসুস্থতার চিকিৎসায় জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

গবেষকরাও হাসপাতাল-ভিত্তিক একটি জরিপ পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে তারা 117 টি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এমন 5172 আক্রান্ত শিশুর উপর সমীক্ষা চালান। সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাঁরা চারটি জেলার কম‍্যিউনিটি অ‍্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার হার বিশ্লেষণ করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে 2-11 বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কম‍্যিউনিটি অ‍্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার হার; 1২-59 বছরের তুলনায় পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি ছিল।
বিহারের দারভাঙ্গা অঞ্চলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ সবচাইতে ভয়াবহ।

তারা জানিয়েছেন তাদের দ্বারা যে তথ্যগুলি পেয়েছিলেন সেই তথ্যগুলো যখন কম্পিউটারে অ্যানালিসিস করেছেন সেখান থেকে দেখা গেছে লক্ষৌ, ইথাওয়া, পাটনা এবং দ্বারভাঙ্গাতে প্রতি 1000 জনে আক্রান্তের হার যথাক্রমে 86.50, 177.01, 207.78 এবং 221.18। বিহার সরকারের অবিলম্বে এই সমস্যার দিকে নজর দেওয়া দরকার।

গবেষকরা বলেছিলেন যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের নিয়ে যে পরিসংখ্যান করা হয়েছিল, সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যতগুলি গুরুতর নিউমোনিয়ার কেস ছিল তার মাত্র 8.7% -11.5% চিকিৎসা করাচ্ছে। “
এর অর্থ হচ্ছে আমাদের ভারতবর্ষের অধিকাংশ জেলায় স্বাস্থ্যসেবা মান খুবই নিম্নমানের, আর নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় আধা বা তারও বেশি জন এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত যত্ন পান না।
উত্তর প্রদেশ ও বিহারের এই চারটি জেলায়; তথা ভারতের এই রাজ্যগুলিতে কম‍্যুউনিটি অ‍্যাকুয়ার্ড নিউমোনিয়া কারণে মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ।” এছাড়া হাসপাতালের মাত্র ২8.7% শিশু মেয়ে ছিল, যা স্বাস্থ্যসেবাতে লিঙ্গ বৈষম্যের পরিচায়ক।

এই গবেষণার ফলাফল এটাই বলে যে ভারত সরকারের এখনি স্বাস্থ‍্য ব‍্যবস্থার দিকে নজর দেওয়ার দরকার। স্বাস্থ্যসেবা ব‍্যবস্থার ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে, যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসে গেছে।