এপ্রিল 25, 2024

যোগ বলে রোগ আরোগ্য; জেনে নিন যোগ ব্যায়াম এর খুঁটিনাটি

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ ডেস্ক-এর একটি প্রতিবেদন। অক্ষর দানে- মোনালিসা মহান্ত

আপনি কি সারাদিনে আধ ঘণ্টার জন্য হলেও আপনার সময় শরীরচর্চার পেছনে খরচা করেন? তো আপনার মহামূল্যবান সময়ের থেকে বেরিয়ে যাওয়া এই আধঘন্টা সময় কোন খাতে গেল তা জানতে নিশ্চয়ই আগ্রহী? যারা ব্যায়াম করেন না বা করব করব ভাবছেন তারাও নিশ্চয়ই যোগা, এরোবিক্স, কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ বা অন্যান্য শক্তি বর্ধক বিভিন্ন ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিতে আগ্রহী।
তাহলে এই লেখা টি আপনারই জন্য। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। এই লেখাটির নিয়মিত যোগ ব্যায়ামের কি কি উপকারিতা তার খুঁটিনাটি তুলে ধরেছে।

যোগা কি?

যোগ ব্যায়ামের শুরু সেই 5000 বছর আগে। 5 হাজার বছর আগেই মানুষ শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে, আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করতে, মনকে শান্ত রাখতে নিয়মিত যোগ ব্যায়ামের অনুশীলন করতেন। ‘যোগা’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘ইউগ’ (YUJ) থেকে। যার অর্থ ‘ঐক্যবদ্ধ করা বা একীভূত করা’। যদিও এর উৎপত্তি হিন্দু ঐতিহ্য থেকেই; কিন্তু বহু বছর ধরে জৈন,বৌদ্ধ, খ্রিস্টধর্মও গ্রহণ করেছে।তবে এই ধর্ম গুলির কাছে মূলত ধ্যান, শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রক ব্যায়াম, এবং যে সমস্ত ব্যায়ামগুলি মনকে শান্ত রেখে শরীরের বৃদ্ধি করে যে সমস্ত অভ্যাসগুলোর, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতাই বেশি ছিল।

কখন যোগব্যায়াম করা উচিত?

যোগবিজ্ঞানের মতে, একটি দিন চারটি সময়ের মধ্যে ভাগ করা হয়- ব্রহ্মমুহুর্ত, সূর্যোদয়, মধ‍্যাহ্ন এবং সূর্যাস্ত। আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের শ্রেষ্ঠ সময় হল ব্রহ্মমুহুর্ত। এটি প্রায় ভোর 3:40এর সময় শুরু হয়। যা বেশিরভাগের জন্যই যোগব্যায়াম অনুশীলন করার জন্য কোনও বাস্তব সময় নয়। সুস্বাস্থ্য পেতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় ই যোগ অনুশীলনের সেরা সময়। এই মুহূর্তে অনুশীলন করা ‘আসন’ বা যোগব্যায়াম মনকে শক্তি দান করে এবং শরীরকে নমনীয় করে তোলে। বেশিরভাগ যোগ প্রশিক্ষক দুপুরের সময় যোগব্যায়াম করতে বারন করেন। কারণ এটি খাবারের সময়। এবং মধ্যাহ্নভোজের পর খাবারের সঠিক পরিপাকের জন্য নূন্যতম চার থেকে ছয় ঘন্টা বিরতি প্রয়োজন।এই সময় যোগার মত শারীরিক কসরত না করাই উত্তম।

যোগাসনের উপকারিতা:

প্রতিদিন যোগাসনের অনেক উপকারিতা আছে। নিম্নে কয়েকটি সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।

1)মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম:- যোগ অভ্যাস মূলত মনের শান্তি বাড়িয়ে তুলে মনকে চাপ মুক্ত করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে ‘কর্টিসল’ নামক একটি হরমোন ক্ষরণ হয়, যেটি মনকে চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।মনকে চাপমুক্ত করার সাথে সাথে এটি মনকে শান্ত করে এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি বা কষ্ট এই ধরনের সমস্যার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) আক্রান্ত 64 মহিলাকে নিয়ে একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা হয়েছিল। এই 64 জন মহিলাকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত যোগাভ্যাস করানো হয়েছিল।10 সপ্তাহ পরে দেখা গিয়েছিল, ঐ মহিলাদের মধ্যে PTSD এর লক্ষণগুলো সন্তোষজনকভাবে অনেকটাই কম হয়েছে।
‌2)শরীরকে নমনীয়তা প্রদান:-  আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল শরীরের ভারসাম্য এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি, যা বেশি বয়সের জন্য অপরিহার্য। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বার্ধক্য বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন জোড় এবং পেশীগুলির নমনীয়তা হ্রাস পায়, বিশেষত যখন বয়স্ক ব্যক্তিরা বেপরোয়া কাজগুলির থেকে বিরত থাকে। এই সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে যোগ ব্যায়ামই একমাত্র ভরসা।এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম আছে যেমন; এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে দেহকে পিছনের দিকে হেলানোর চেষ্টা করা। এই ধরনের ব্যায়াম গুলোর প্রতিনিয়ত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনার অন্তর শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবেন এবং অনেক বয়সকাল অব্ধি দেহ ঋজুও রাখতে পারবেন। এছাড়াও যে সমস্ত ‘দেহ প্রসারকারী’ অর্থাৎ ‘স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ’ আছে সেগুলি রোজ অভ্যাস করলে দেহের বিভিন্ন অনমনীয় অংশ – যেমন হাঁটুর পিছনের অংশে অবস্থিত হ‍্যামর্স্টিং পেশী, শরীরের পিছনের দিকের অংশকে নমনীয়তা প্রদান করে।
‌3) হৃদযন্ত্রের সতেজতা রক্ষায় যোগব্যায়াম:- 
নিয়মিত যোগব্যায়াম ব্যবহার করে রক্তচাপের মান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে (120-80 mmHg) রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তের কলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও কম করে হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।যে সমস্ত ব‍্যাক্তির হৃদরোগের ইতিহাস আছে, বা যাদের কখনো স্ট্রোক হয়েছে তাদের জন্য যোগা অনুশীলন অত্যন্ত কার্যকরী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে – এক বছরের মধ্যে যোগব্যায়াম কোলেস্টেরল এবং লো-ডেন্সিটি লিপোপ্রোটিনের (LDL) মাত্রা কমাতে পারে। যোগব্যায়াম মানসিক চাপের মাত্রা হ্রাস করে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
4) অনিদ্রা দূর করতে যোগ ব্যায়াম:- 
শহুরে এলাকায় বাসকারী মানুষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির মধ্যে একটি অপর্যাপ্ত ঘুম।পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় যখন কোনো ব্যক্তির স্থূলতা,বিষণ্নতা, এবং উচ্চ রক্তচাপের মত বিভিন্ন সমস্যা এর সাথে যুক্ত হয়। যোগব্যায়াম এমত পরিস্থিতির হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এটি ঘুমের সমস্যার দূর করে, ঘুমকে গভীর ও দীর্ঘ করে। ঘুমের জন্য ঔষধের নির্ভরতা হ্রাস করতেও যোগব্যায়াম অপরিহার্য। আসলে নিয়মিত যোগব্যায়াম ব্যায়াম ‘ম্যালাতোনিন’ নামক এক প্রকার হরমোন নির্গত করে, যা মানুষের মধ্যে ঘুম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদ্বেগ বিহীন স্বাস্থ্যকর জীবন পাওয়ার জন্য গবেষকরা প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় বা সূর্যাস্তের সময় আধঘণ্টা করে যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছেন।