ডিসেম্বর 23, 2024

মুম্বাই ডাক্তাররা কিভাবে স্টেমসেল চিকিৎসা করে প্রিম‍্যাচিয়র রূদ্রেংশের ফুসফুসের রোগ নিরাময়ে সমর্থ হয়েছিলেন ?

Lung_structure_normal

Cross-sectional detail of the lung. Source: public domain

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

অগ্রগতিশীল চিকিৎসাবিদ‍্যার আর্শীবাদে, সান্তাক্রুজের সান-মাদার এবং চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের ডাক্তাররা একটি ব্রঙ্কো-পালমোনারি ডিসপ্লাসিয়াতে (বিপিডি) আক্রান্ত একটি প্রিম‍্যাচিয়র শিশুর এই সমস‍্যার নিরাময় করেন।
রূদ্রাংশ দুবে 27 শে জুন 2018 সালে মাত্র 26 সপ্তাহের মাথায় জন্মগ্রহণ করেছিল। চাঁদিভালি এলাকার দম্পতি প্রমোদ ও মিনাক্ষী দুবের পুত্র সন্তান এই রূদ্রাংশ। যেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গর্ভাবস্থার সময়কাল হল 39 সপ্তাহ, সেখানে মাত্র ২৬ সপ্তাহে জন্মগ্রহণ করেছিল এই শিশুটি। জন্মের সময় বয়স ছিল মাত্র 600 গ্রাম। সাধারণত, 1 কিলোগ্রাম নীচের জন্মগ্রহণকারী শিশুগুলির বিভিন্ন অঙ্গগুলি অনেক সময় সঠিকভাবে তৈরি হয় না; এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

জন্মের পরই কি রূদ্রাংশের কি ঘটেছিল?
রূদ্রেংশের বিপিডি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অ্যানিমিয়া, কম প্লেটলেট সংখ্যা সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তার বায়ুথলিগুলি ছোটো ছিল এবং ফুসফুসের গঠন অপরিনত ছিল। গবেষণা অনুযায়ী, 1 থেকে 1.5 কিলোগ্রামের মধ্যে বাচ্চাদের জন্মগত ফুসফুসের সমস্যা থাকার সম্ভাবনা 15 শতাংশ। আর সদ‍্যজাত শিশুর ওজন যদি 1 কিলোগ্রাম নিচে হয় তখন এই ফুসফুসের রোগ 50 শতাংশ বৃদ্ধি পায়। হাইপক্সিয়া-এর কারণে রূদ্রাংশ নীল হতে শুরু করলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তার অবস্থার কোনো রকম উন্নতি না হওয়ায় তার বাবা-মা তাকে 2018 সালের সেপ্টেম্বরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সান মাদার অ‍্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে।

প্রথমের দিকে এই হসপিটালের চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, স্টেরয়েড, সারফেকট্যান্ট ওষুধ হিসাবে দিতে থাকেন এবং তাকে ভেন্টিলেশন এর বাইরে রাখা হয় যাতে স্বাভাবিকভাবেই তার ফুসফুসের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয়। কিন্তু যতই দিন গড়াতে থাকে তার অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে। এমনকি তাকে যখন হাই প্রেশার ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাতেও তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এই সময় সুরিয়া হসপিটালের সদ্যজাতদের জন্য যে ICU আছে সেখানের হেড ডঃ নন্দকিশোর অবেলা, ঠিক করেন যে শিশুটির দেহে তিনি স্টেম সেল ইঞ্জেক্ট করবেন যাতে স্বাভাবিক ভাবেই তার গঠন সম্পন্ন হতে পারে।
এইজন্য তারা প্রথমেই শিশুটির বাবা প্রমোদবাবুর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নেন, কারণ এই সমস্ত ক্ষেত্রে খুব একটা সফলতা আসে না। বিশেষত ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে স্টেম সেল ট্রিটমেন্ট খুব কমই সফল‌ হয়। যাই হোক প্রমোদবাবু যখন অনুমতি দিয়ে দেন তখন ওই শিশুটির ফুসফুসে চিকিৎসকেরা প্রায় ৪০ মিলিয়ন স্টেম সেল ইঞ্জেক্ট করেন। ডাক্তাররা দাতার অ‍্যাম্বিলিকাল কর্ড থেকে এই স্টেম সেল সংগ্রহ করেছেন।

চিকিৎসা শুরু করার 10 দিনের মধ্যেই ছোট্ট শিশুটির ফুসফুসের গঠন হতে শুরু করে চিকিৎসকেরা তার ফুসফুসের গঠন কতটা সম্পূর্ণ হলো তা সব সময় মনিটর করতেন। ভেন্টিলেশন এর বাইরে আনা যাবে কীনা, এই সমস্ত দিকে সবসময় খেয়াল রাখতেন।
অবশেষে 11ই মার্চ তারা ঠিক করেন যে রূদ্রাংশ আর হসপিটালে রাখার দরকার নেই তাই তারা তাকে ছেড়ে দেয়। হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় শিশুটির ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল 4.6 কেজি।
রূদ্রাংশের চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়েছিল।

সুরিয়া বেবি এন্ড মাদার কেয়ার হসপিটাল এর চিকিৎসকেরা একটি নতুন দিক খুলে দিয়েছেন। এর আগেও আরো অনেক বার অনেক চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেছিলেন এবং অনেকে সফল হয়েছেন, অনেকেই সফল হতে পারেনি। যাই হোক ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ; কিন্তু এখনো কোনো শিশুর দেহে স্টেম সেল ব্যবহার করার অনুমতি দেন না। কারণ এতে শিশুর দেহে ইনফেকশনস, ক্যান্সারের সম্ভাবনা, এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তবে সুরিয়া হসপিটালের চিকিৎসকরা কিন্তু সমস্ত ধরনের গাইডলাইন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলে তবেই চিকিৎসা করেছিল। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ, সুরিয়া হসপিটালের চিকিৎসকের এই ক্ষেত্রটির ওপর আরো গবেষণা করার অনুমতি দিয়েছেন।