এপ্রিল 24, 2024

পানীয় জলে আর্সেনিকের উপস্থিতি; বদলে দিচ্ছে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক গঠন – এখনই সতর্ক হন

Arsenic trioxide, Illustration purpose only, source: Public domain

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে আর্সেনিকের দ্বারা দূষিত পানীয় পানি হার্টের আকৃতি ও গঠনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়, এমনকি ভবিষ্যতে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই গবেষণাটি আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের জার্নাল, “সার্কুলেশন: কার্ডিওভাসকুলার ইমেজিং” এ প্রকাশিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে আর্সেনিকে দীর্ঘস্থায়ী এক্সপোজার কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদযন্ত্রের প্রধান পাম্পিং চেম্বারকে পুরু করে তোলে। গেরনোট পিচলার, এম.ডি., পিএইচডি, এমএসসি এবং অনিয়ন্ত্রিত নলকূপ বা কূয়ো গুলির উপর হওয়া গবেষকদের দলের প্রধান নির্দেশক।

আর্সেনিক কি?
আর্সেনিক হল পৃথিবীর ভূগর্ভে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক ধাতুকল্প। এই ধাতুকল্পের কনা জল,মাটি, শিলা এবং বায়ুর মধ্যেই উপস্থিত থাকে; ও পরিবেশের অন্যান্য উপাদানগুলির সাথে যুক্ত হয়ে জৈব ও অজৈব যৌগ গঠনকরে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে আর্সেনিকে অজৈব যৌগগুলি, জৈব যৌগগুলির চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। অজৈব যৌগগুলি মানবদেহে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে; যেমন হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি খুব বেশি করে দেয়। আর্সেনিক কোষের ভিতরে বিভিন্ন উপাদান এর সাথে বিক্রিয়া করে সেগুলির পরিবর্তন করে দেয়, অনেক ক্ষেত্রে কোষের ভিতর থেকে নির্দিষ্ট উপাদানগুলি স্থানান্তর করে এবং এমনকি কাজ পরিবর্তন করে দেয়। বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভূগর্ভস্থ জলের মধ্যে আর্সেনিকের মাত্রা সর্বোচ্চ 10 μg/L বেঁধে দিয়েছে। যদিও আমরা সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে 50 টি দেশের 140 মিলিয়ন মানুষ প্রতিনিয়ত WHO-এর বেঁধে দেওয়া মানের চেয়ে অনেক বেশি আর্সেনিক যুক্ত জল পান করছেন।

আর্সেনিক কিভাবে মানুষের দেহে প্রবেশ করে?
মানুষের জন্য আর্সেনিক এক্সপোজার সবচেয়ে সাধারণ উৎস ভূগর্ভস্থ জল। আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, চীন, চিলি, ভারত, মেক্সিকো এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অনেক দেশে ভূগর্ভস্থ জলে অনুমতিপ্রাপ্ত মানের চেয়ে অনেক বেশি আর্সেনিক উপস্থিত রয়েছে। আমেরিকায়, অ্যারিজোনা, ওকলাহোমা, এবং উত্তর ও দক্ষিণ ডাকোটা অঞ্চলের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে মান স্তর থেকে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকে ঘনত্ব স্ট‍্যান্ডার্ডের চেয়ে অনেক বেশি।

কিভাবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই সমীক্ষাটি কীভাবে পরিচালনা করেন?
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের, গবেষক দল “স্ট্রং হার্ট ফ্যামিলি স্টাডি” দ্বারা সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে যেখানে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি মূল্যায়ন করেন। 1337 জন প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে মূত্রে নমুনা (যাদের গড় বয়স 30.7 বছর এবং 61 শতাংশ মহিলা ছিল) গবেষণার জন্য নেওয়া হয়েছিল। এর সাথে সাথেই তাদের হার্টের আকার এবং ফাংশনকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি ব্যবহার করেও মূল্যায়ন করা হয়েছিল। এই গবেষণার জন্য তথ্য দীর্ঘ 5 বছরের ধরে রেকর্ড করা হয়েছে এবং এই পর্যায়ে, রোগীদের কোনও ডায়াবেটিস বা হার্ট-সম্পর্কিত রোগের ইতিহাস ছিল না।

আর্সেনিক গবেষণা ফলাফল কি?
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের গবেষণা দলটি গবেষণার শেষে কিছু চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছিল। প্রস্রাবের নমুনায় সর্বোপরি আর্সেনিক ঘনত্ব দেশের অন‍্যান‍্য সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় বেশি ছিল। যাইহোক, মেক্সিকো এবং বাংলাদেশের গড় জনসংখ্যার চেয়ে এই মেটালয়েডের স্তর কম ছিল। প্রস্রাবে আর্সেনিকে মাত্রা দুই গুণ বৃদ্ধি পেলে, হার্টের বাম-ভেন্ট্রিকলের দেওয়ালের পুরুত্ব বাড়ার সম্ভাবনা 47% বাড়িয়ে দেয়। গ্রুপে উচ্চ রক্তচাপ ছিল যে ব্যক্তিদের 58 শতাংশের বাম অলিন্দের অন্তগাত্র পুরু হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি ছিল। তাই এই গবেষণায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জলে উপস্থিত মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক হার্টের রোগ ও গঠনগত পরিবর্তন ঘটায়।
গবেষকরা উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ এলাকায় উপজাতীয় সম্প্রদায়ের থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলটিকেই সারা বিশ্বের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখতে পারেন; যেখানে জলের স্তরগুলিতে আর্সেনিকে ঘনত্ব পরিমিত।

সুতরাং, আর্সেনিকের বিষাক্ত ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে অালোচনা আজ এই পর্যন্তই। অবশেষে, আমরা বলতে পারি যে আর্সেনিক একটি বিষাক্ত ধাতুকল্প যা মানুষের দেহে প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। সরকারের উচিত, তাদের নাগরিকদের কাছে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দেবার জন্য যা করনীয়; দ্রুত সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা।