এপ্রিল 24, 2024

ভগবানের আরাধনা করতে সকাল সন্ধ্যা ধূপ জ্বালান? অলক্ষ্যে পরিবারের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে না তো?

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

আপনার আমার মতো অনেকেই নিজের বাসভবনে বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ কামনা পাবার আশায় দিনে দুবার ধূপ জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। প্রাচীনকাল থেকেই, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দার্শনিকরা সুগন্ধি কাঠি বা ‘আগরব্বাতি’ জালিয়ে মন শান্ত করার এবং মনোসংযোগ স্তর বাড়ানোর পরামর্শ দিতেন। এই কারণেই বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ আজও সেই ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে। যাইহোক, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা এখন এই ব‍্যাপারটি কতটা যুক্তিসঙ্গত তার নিয়ে প্রশ্ন করছেন, কারণ তারা দেখেছেন ধূপের ধোঁয়ায় বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপস্থিত, যা সিগারেটের ধোঁয়ার মতোই ক্ষতিকর । মানুষের শরীরের উপর ধূপ লাঠি ধোঁয়া নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আরও জানতে পড়া চালিয়ে যান।

কিভাবে ধূপে ধোঁয়ার উপর গবেষণা গবেষণা শুরু?
2015 সালে দক্ষিণ চীন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষকরা এবং চীন তামাকের গুয়াংডং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানির কর্মীরা ধূপকাঠি এবং সিগারেটের ধোঁয়ার মধ তুলনা করার একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এটি স্প্রিংঙ্গার জার্নালের, এনভায়রনমেন্টাল কেমিস্ট্রি লেটার্সে প্রকাশিত হয়। তবে জনস্বার্থে গবেষণামূলক প্রতিবেদনটি যাতে যে কেউ অ্যাক্সেস করতে পারে এমনভাবে অনলাইনে এটি দেওয়া আছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেইল ​​অনলাইন এবং দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফও সমগ্র গবেষণাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছেন যাতে জনসাধারণের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।

গবেষণা সময় কি ঘটেছিল?
বিজ্ঞানীরা ধূপকাঠি পোড়ানোর সময় যে রাসায়নিক নির্গত হয় তা সনাক্ত এবং তাদের পরিমান পরিমাপ করতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ও প্রাণীর কোষগুলিতে ঐ রাসায়নিক পদার্থগুলো কী ধরনের প্রভাব ফেলে তার বুঝতে ইন-ভিট্রো পরীক্ষা পরিচালনা করেছিলেন। গবেষকরা চারটি ধূপ লাঠি এবং এক সিগারেট বিশেষভাবে পরিকল্পিত মেশিনে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন, মেশিনে সংযুক্ত ফিল্টার ধূপ ও সিগারেট থেকে ধোঁয়া থেকে নির্গত রাসায়নিকগুলি সংগ্রহ করতে পারে। ধূপ থেকে থেকে মুক্ত রাসায়নিক গুলি সংগ্রহের পর, বিজ্ঞানীরা গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি এবং মাস স্পেক্টোমেট্রি সঞ্চালন করেন। এখানেই শেষ নয় স্যালমোনেল্লা কোষগুলির উপর এই রাসায়নিকগুলি কী প্রভাব ফেলবে তার জানতে তাঁরা পরীক্ষা চালাষ, কোনো রকম মিউটেশনের হচ্ছে কিনা তা খুঁজে বের করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। এমনকি চীনা হ্যামস্টারের ডিম্বাশয় কোষের উপর, ফিল্টার পেপারে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থগুলো কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেন।

যাইহোক, আমাদেরও মনে রাখতে হবে যে এত কম নমুনা নিয়ে গবেষণা করে, সেই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব তাড়াতাড়ি। একটি গবেষণামূলক ফলাফল খুঁজে পেতে এই ক্ষেত্রে আরো গবেষণা প্রয়োজন আছে। অল ইন্ডিয়া আগরবাতি ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরৎ বাবু চীনা বিজ্ঞানীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেন, “এই প্রতিবেদনে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করার মতো কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই প্রতিবেদনটি শুধু একটি অনুমান এবং একটি বৈধ তত্ত্ব নয়।”

ধূপ কাঠির ধোঁয়া থেকে স্বাস্থ্যের উপর কী প্রতিকূল প্রভাব পড়ে?
গবেষণায় দেখা গেছে যে ধূপের ধোঁয়া থেকে ক্যান্সার, কার্ডিয়াক রোগ, হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং ত্বকেরও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। ধোঁয়াতে উপস্থিত কিছু রাসায়নিক মিউটাজেনিক, সাইটোটক্সিক এবং জেনোটক্সিক। তারা দূষণকারী পদার্থ ও নির্গমন করে, যা ফুসফুসের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
উত্তর ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ধূপের ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড এবং ফর্মালডিহাইড রয়েছে যা ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ্ (সিওপিডি) এবং হাঁপানির মতো বিপদজনক সমস্যা তৈরী করত পারে। এছাড়া, শিশু এবং বৃদ্ধ বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ধোঁয়া থেকে চোখ জ্বলার মতো সমস‍্যাও দেখা যায়।

আমাদেরকে এবার থেকে ধূপ ঘরের ভিতরে চালানোর বিষয়ে এবার থেকে সচেতন হতে হবে যদি কোনরকম চোখ জ্বালা বা অন্য কোন ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয় তখনই ধূপ নিভিয়ে দেওয়া উচিত। যদি কোনো ধূপের প‍্যাকেটের গায়ে স্পষ্ট করে কী কী রাসায়নিক পদার্থ ব‍্যবহৃত হয়েছে উল্লেখ করা থাকে, তবে সেগুলোই ব‍্যবহার করা যুক্তিযুক্ত।