প্রদাহজনিত রক্তাল্পতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন পুনার বিজ্ঞানীরা
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
রক্তাল্পতা সাধারণত দেহে আয়রনের ঘাটতির কারণে হয়; তবে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার, অটোইমিউন ডিজিজ, কোনো সংক্রমণ এবং দীর্ঘসময় কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত থাকা ইত্যাদি নানান শারিরীক সমস্যাও কিন্তু রক্তাল্পতার কারণ হতে পারে। এই ধরনের রক্তাল্পতা “ইনডিউস্ড অ্যানিমিয়া” হিসাবে পরিচিত।
ইনডিউস্ড অ্যানিমিয়ার প্রধান কারণ হলো রক্তকণিকার স্বল্পায়ু এবং নতুন রক্তকণিকা গঠন অবদমিত হওয়া। এই ধরণের রক্তাল্পতা নিরাময়ের জন্য বর্তমানে যে সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি চালু আছে, সেগুলির বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই ইনডিউস্ড অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা করার জন্য নিরাপদ ওষুধের সন্ধান করছেন।
সম্প্রতি পুনের বিজ্ঞানীরা এমন একটি ঐতিহ্যবাহী ঔষধি গাছ খুঁজে পেয়েছেন, যা এই অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন। এই ঔষধিগুণ সম্পন্ন গাছটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল –
টিনোস্পোরা কার্ডিওফোলিয়া ; যা সাধারণত গুডুচি বা গিলয় নামেই পরিচিত। প্রাথমিকভাবে গবেষণাটি ইঁদুরে দেহে করা হয়েছে। ইন্ডায়ান সায়েন্স উ্যইয়ারে সাথে কথা বলার সময় পুনের আগরকর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক দলের প্রধান ডাঃ প্রসাদ পি. কুলকার্নি বলেলেন, “এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রচলিত ভেষজ ঔষধিগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ; তবে এখন পর্যন্ত রক্তাল্পতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর উপকারিতার দিকটা অজানাই রয়ে গেছে। তাই, আমরা এই দিকটি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। “
টিনোস্পোরা প্রাচীন কাল থেকেই প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি ঠিক কী ভাবে কাজ করে সেই পদ্ধতিটি জানা যায়নি; যার ফলে এর ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা ছিল। এই গবেষণার জন্য, বিজ্ঞানীরা প্রথমে ইঁদুরের দেহে প্রদাহ সৃষ্টিকারী অ্যান্টিজেন ইনজেক্ট করে দেন। এরফলে ইঁদুরগুলোর প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এরপর গবেষকদল টিনোস্পোরার এক্সট্রাক্টগুলি বিভিন্ন ডোজে ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এবং দেখা যায় টিনোস্পোরা এক্সট্রাক্ট প্রয়োগের ফলে, প্রদাহ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত ইদুরগুলির দেহে হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে থাকে।
এই ভেষজটি হেপিসিডিন জিনের মাত্রা হ্রাস করে রক্তাল্পতা নিরাময় খরে। হেপিসিডিন এমন একটি জিন, যা রক্তের লোহিত কণিকার বিকাশের জন্য উপলব্ধ লোহার স্তর নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত।
টিনোস্পোরা হেপিসিডিন জিনের মাত্রা হ্রাস করে, লোহিত রক্তকণিকা বিকাশের জন্য আয়রন সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, এবং হেপিসিডিন জিন ঘটিত কারণে সৃষ্ট রক্তাল্পতা নিরাময় করে।
এর পাশাপাশিই এই ঔষধিটি দেহে সাইটোকাইনের মতো প্রদাহ নিরাময়কারী প্রোটিনের মাত্রা হ্রাস করে, দেহের প্রদাহ হ্রাস করে।
“গুডুচ্চিকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ‘অমৃত’ বলে অভিহিত করা হয় কারন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। ডাঃ কুলকার্নি বললেন, “আমরা অন্যান্য যে সমস্ত প্রানীতে প্রদাহ জনিত সমস্যা দেখা যায়, তা নিরাময়েও গুডুচ্চিকে ব্যবহার করা যায়, তাও খুঁজে বের করতে চাই। যাতে গুডুচ্চির ব্যবহার আরো প্রসারিত হয়।”
গবেষক দলে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যরা হলেন নিরজ এস. ঘটপান্ডে, অশ্বিনী ভি. মিসার, রবীন্দ্র জে. ওয়াঘোলে এবং সচিন এইচ. যাদব। সমীক্ষার ফলাফল ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।