নতুন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন গ্রামীণ এলাকায় হৃদরোগ মোকাবেলায় সাহায্য করবে
কলমে- মনিকা কুন্ডু শ্রীবাস্তব। অনুবাদে-ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
ভারতীয় ও অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপ একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক সিস্টেম তৈরি করেছেন। যার সাহায্যে এবার থেকে চিকিৎসকরা দূর থেকেই উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারবেন। এই অ্যাপ্লিকেশনটি গ্রামগুলিতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অ্যাপ্লিকেশনটি আসলে একটি ক্লিনিকাল ডিশিসন সার্পোট সিস্টেম (সিডিএসএস) আকারে ডিজাইন করা, যা অ্যান্ড্রয়েড ফোন লোড করা যাবে। সিস্টেমটিতে একটি মডিউলও আছে যা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য রোজকার চেকআপ করাবার প্রয়োজন সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্কতা পাঠাতেও পারবে। এ ছাড়া, এটি রোগীদের কখন ওষুধ নিতে হবে এবং কখন ফলোআপের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তা ইন্টারেক্টিভ ভয়েস প্রতিক্রিয়া সিস্টেমের মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেবে।
গবেষণায় অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরি জেলার 54 টি গ্রামের 40 বছর বয়সী মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের উপর ট্রায়াল দিয়ে দেখেছেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (PHCs) স্বাস্থ্য কর্মী, আশাকর্মীদের, অ্যাপ্লিকেশনটি ট্যাবলেট ফোনে লোড করে, তা কী ভাবে ব্যবহার করবেন ও হৃদরোগের ঝুঁকি মূল্যায়ন করবেন তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
18 টি পিএইচসি-তে ধাপে ধাপে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করা হয়। এবং তারপর তারা অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করার আগে ও পরে অবস্থায় কতটা পরিবর্তন আসছে তা তুলনা করে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে আশা কর্মীরা নির্বাচিত এলাকার প্রায় 86% জনসংখ্যার পরিদর্শন করেছেন এবং ডাক্তাররা 70% উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের অবস্থা অনুসরণ করেছেন। সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ব্যবহার করা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ উভয় ক্ষেত্রেই বেশ সন্তোষজনক ফলাফল দেখিয়েছে।
এটির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আশাকর্মীদের কাজ শুধুমাত্র মা ও শিশু স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার বাইরেও তাদের ভূমিকা আরো সম্প্রসারন করবে। এছাড়াও গ্রামের মানুষ যাতে চিকিৎসকের সাথে নিত্যদিন সংযোগ রক্ষা করতে পারেন, সে ক্ষেত্রেও এই অ্যাপ্লিকেশনটি সাহায্য করবে। সম্প্রতি হরিয়ানাতেও অ্যাপ্লিকেশনটি এই সমস্ত দিকে কতটা ফলপ্রসু তা নিরীক্ষণ করে।
PHC কেন্দ্রগুলিতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কম খরচে ওষুধ পাওয়া যায়; কিন্তু তা সত্ত্বেও, গ্রামগুলিতে এই ধরনের সমস্যাগুলির চিকিৎসা সীমিত। শুধুমাত্র হৃদরোগের বা হৃদরোগের ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিরাই রক্তচাপ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সচেতন। ভারতে 140 মিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আক্রান্ত।
“ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে; নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পদ্ধতির গুণমান উন্নত করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা এবং যত্ন প্রদানকারীদের বা চিকিৎসাকের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া আমাদের দেশের আরো একটি মূল সমস্যা। সাথে সাথেই ক্রমশ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেসরকারি হসপিটাল এবং ব্যক্তিগত সাহায্য প্রদানকারী সংখ্যা। আর এই কারনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হবার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লোকেদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যা যত্নের প্রয়োজন হয় তাহলে পৌঁছে দেওয়া যায় না।” – বিশিষ্ট অধ্যাপক ডেভিড পিরিস জানিয়েছেন। তিনি এই গবেষণা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
গবেষণা ফলাফল PLoS জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা হলেন- ডেভিড পিরিস, ডঃ পারভিন, কিশোর মোগুলুরু, মোহাম্মদ আব্দুল আমির, কিয়াং লি, পল্লব কে মৌলক, স্টিফেন ম্যাকমাহন, রোহিনা জোশি, স্টিফেন জন, আনুশকা প্যাটেল (গ্লোবাল হেল্থ জর্জ ইনস্টিটিউট); অরবিন্দ রাঘু, লিওনেল তারাসেনকো (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়); স্টিফেন হেরিটিয়ার (মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়); দোরাইরাজ প্রভাকর (ভারতের জনস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন); এবং গারি ডি. ক্লিফোর্ড (এমোরি ইউনিভার্সিটি)।