কিডনি প্রতিস্থাপন – HIV পজিটিভ মহিলার দেহ থেকে, মনে পরে গেলো কলকাতার ঘটনা
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন, কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত।
বেশ কিছুদিন আগে আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে ঘটে গেল এক অভূতপূর্ব এবং অবিস্মরনীয় ঘটনা – এক HIV পজিটিভ মহিলা আরেকজন HIV পজিটিভ মহিলাকে কিডনি দান করলেন। আড়ি অবিস্মরনীয় ঘটনার সাক্ষী থাকল বাল্টিমোরের জণ হপকিন্স মেডিসিন হসপিটাল এর সমস্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা। গ্রহীতা তার পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।অপারেশনের পর দাতা এবং গ্রহীতা দুজনই সুস্থ এবং সবল রয়েছেন জন হপকিন্স মেডিসিন সেন্টার প্রফেসর এবং চিকিৎসক ডাঃ ডোরি, জানিয়েছেন যে তিনি এই কিডনি ট্রান্সপ্লানন্টেশন এর ব্যাপারে অত্যন্ত চিন্তিত এবং উৎসাহী দুইই ছিলেন। কারণ HIV এর জগতে এই ধরনের ট্রান্সপ্লান্টেশন সত্যিই একটি ঝুঁকিপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা।
দাতা হলেন 36 বছর বয়সী একজন জনস্বাস্থ্য পরামর্শদাতা। যিনি 1983 সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে, HIV পজিটিভ রক্ত (সংক্রামিত) গ্রহণ করে এইচআইভি সংক্রমিত হয়েছিলেন। সেইসময় ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতে কোনো ভাইরাল বা ব্যক্টেরিয়াল সংক্রামন আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যাইহোক,এই সংক্রমণ তার জীবনকে থামিয়ে রাখতে পারেনি, এবং সে সবসময় একইরকম পরিস্থিতিতে অন্যদের সাহায্যকারী হাত বাড়িয়ে দেয়।
HIV আক্রান্ত ব্যক্তিরা অঙ্গ-দাতা হিসাবে কি কি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন?
HIV সংক্রমিত রোগীদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। এইচআইভি সংক্রমণ ও নির্ধারিত ওষুধের ব্যবহারের ফলে মূত্রে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে এই কারণে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির কিডনি দান একটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা বলে আগে মনে করা হতো। ইউরোলজিস্টরা মন করতেন যে এই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে সাথে একটি কিডনি থাকাটা শরীরের জন্য অত্যন্ত জটিল। যাইহোক, এই ভুল ধারণা এখন বাল্টিমোরের জন হপকিন্স মেডিসিনে পরিচালিত বৈপ্লবীক অস্ত্রোপচারের সাথে অবলুপ্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির কিডনি প্রদান করার পূর্বের ঘটনা কি একটু জেনে নেয়া যাক:-
জণ হপকিনস মেডিকেল হসপিটাল এন্ড ইউনিভার্সিটি তে 2017 সালে প্রায় 41 হাজার মানুষের ওপরে নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে HIV পজিটিভ ও HIV নেগেটিভ ব্যক্তিদের যে কোন আলাদা রকম প্রভাব আছে তা কিন্তু নয়। বরং তার চেয়ে অ্যাডভান্সড অ্যান্টি-ভাইরাল যে সমস্ত ওষুধ গুলি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার আগে ব্যবহার করা হয় সেগুলি বেল বেশ ফলপ্রসূ এবং অরগ্যান ডোনেশনের পর HIV পজিটিভ ব্যক্তিকে কোনো রকম কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
দাতা যখন জানতে পেরেছিলেন সমগ্র ইউনাইটেড স্টেট জুড়ে প্রায় 113000 জন ব্যক্তি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য ওয়েটিং লিস্টে আছেন যে কখন কেউ একজন কিডনি ডোনেট করবে এবং সেটি তারা পাবেন। আবার তাঁরই এক ফেসবুকের বন্ধবী, যে HIV পজিটিভ, তিনিও একটি কিডনির জন্য খোঁজ করছেন। তখন তিনি আর পিছপা হয়নি, তখনি তিনি মনঃস্থির করেছিলেন যে তার এই HIV পজিটিভ বান্ধবীটিকে তিনি তার একটি কীডনী দান করবেন।
পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের একটি অর্গান ডোনেশন হয়েছে সম্প্রতি চলুন সেটিও দেখে নেওয়া যাক:-
বালটিমরে কিডনি ডোনেশনের মতই 2018 সালে পশ্চিমবঙ্গে ও কিন্তু এই ধরনের একটি অর্গান ডোনেশন হয়েছিল সেটাও কিন্তু চিকিৎসা জগতের একটি অবিস্মরণীয় ঘটনায় প্রায় বলা যায় । কিছুদিন আগেই একটি দুর্ঘটনায় একটি মেয়ের মস্তিষ্ক অচল (brain death) হয়ে যায় । তখন মেয়েটির দেহ থেকে চোখের কর্নিয়া কিডনি এবং হার্ট তিনটি আলাদা ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় । কলকাতা এসএসকেএম হসপিটাল এর চিকিৎসকেরা দুর্গাপুর হসপিটালে (যেখানেই মেয়েটি ভর্তি ছিল সেখানে) এসে এই সমস্ত অর্গ্যান গুলো কালেক্ট করে আবার কলকাতা অব্ধি বয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। ট্রাফিক পুলিশ এবং চিকিৎসক সহযোগিতায় কিন্তু সম্পূর্ণ কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল। কলকাতা এবং দূর্গাপুরের দূরত্ব 170 কিলোমিটার এই ব্রতটি পুলিশের সহায়তায় গ্রিন করিডোর ক্রিয়েট করে সেই তারা ট্রাফিক কন্ট্রোল করে দুর্গাপুর থেকে দ্রুততার সাথে কলকাতায় বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মেয়েটির পরিবার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত সে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে সময় তারা বুঝতে পারেন যে তাদের মেয়ে আর কোন দিনে সেরে উঠবে না কিন্তু মেয়ের অর্গান দান করলে মেয়ের অর্গান বেঁচে থাকবে আর তিন জন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। ভারতীয় 1994 সালে এই অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া কে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই মধ্য ভারতে প্রায় 210000 ব্যক্তি অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্ট করানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাদের মত সাধারন জনের মধ্যে যদি এ অর্গ্যান ডোনেশন এর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায় তাহলে হয়ত আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারি।
সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য কী কী করনীয়?
চিকিৎসক দল দাতা এবং গ্রহীতার প্রয়োজনীয় তথ্য গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেন।
প্রাথমিকভাবে এটি করা হয় যাতে ট্রান্সপ্লান্টকরা অঙ্গটি প্রাপক প্রার্থীর রক্ত এবং টিস্যুর সাথে মানিয়ে নিতে পারে । কিডনি, কর্নিয়া, ফুসফুস, হৃদয় এবং লিভার ডাক্তারের মতো বেশিরভাগ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য রক্ত গ্রুপ, শরীরের আকার, প্রতিক্রিয়াশীল অ্যান্টিবডি শতকরা (পিআরএ) এবং সিরাম ক্রসম্যাচ ইত্যাদি নানান বিষয় বিবেচনা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, অঙ্গ সংস্থান এবং প্রতিস্থাপন নেটওয়ার্ক (OPTN) কম্পিউটার সিস্টেমটি দাতা এবং প্রাপকের জন্য এই মিলযুক্ত বিভিন্ন বিষয়গুলো স্ক্যান করে।