ডিসেম্বর 23, 2024

কিছু বিপজ্জনক জুনোটিক রোগ যেগুলো আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিৎ

Rabid_dog

A dog with rabies. Image from Public domain

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন

“জুনোটিক ডিজিজ” শব্দটি শুনেছেন?
আচ্ছা, যারা জানেন না, বা জানলেও এর অর্থ সঠিকভাবে জানেন না তাদের জন্য জানিয়ে রাখি জুনোটিক ডিজিজ হল – একগুচ্ছ রোগ যা পশুর দেহ থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে।
এই ধরনের রোগগুলির মধ্যে এমন কিছু রোগ আছে যা পশুর দেহে তেমন কিছু গুরুতর প্রভাব না ফেললেও, মানুষের দেহে ভয়ানক রকম গুরুতর প্রভাব ফেলে। “জুনোটিক” রোগ “জুনোসিস” নামেও পরিচিত। এগুলো স্বল্পমেয়াদী সংক্রমণ ও হতে পারে, আবার প্রাণঘাতী ও হতে পারে। 2019 সালের মে মাসের শুরুতে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) আটটি জুনোটিক রোগের তালিকা প্রকাশ করেছে যার বিরুদ্ধে মানুষের অবশ‍্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। CDC; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিভাগের (USDA) সাথে একত্রে এই কাজ করছে, যার মূল লক্ষ্য সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা:-
জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা পূর্বে অনেক দেশেই মহামারীর সৃষ্টি করেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মধ্যে, ইনফ্লুয়েঞ্জা A হাঁস, মুরগি, শূকর, ঘোড়া, এবং বিড়াল মত প্রাণীদের দেহে প্রাণঘাতী প্রকোপ ফেলে। এবং খুব দ্রুত তাদের থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হয়ে সংক্রামন ঘটায়।কাশি, জ্বর, গলা, পেশী ব্যথা এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এই সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গ। যখনই জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন পশুদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। আপনি পশু মৃতদেহ নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে, গ্লাভস ও মাস্ক অবশ‍্যই ব‍্যবহার করুন। এবং অবশ্যই আপনার হাত ধোয়া খুব ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।

সালমোনেলোসিস:-
সালোমনেলোসিস আরেকটি সাধারণ সংক্রমণ টুনা,টার্কী জাতীয় পাখির মাংস অনুপযুক্তভাবে রান্না করা অর্থাৎ ঠিকঠাক ভাবে সিদ্ধ না করা খাবার থেকে মানুষের দেহে অনুপ্রবেশ করে। CDC এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর এই সংক্রমণ প্রায় 1.2 মিলিয়ন অসুস্থতা সৃষ্টি করে, যার মধ্যে 23000 রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ডায়রিয়া, জ্বর, এবং পেটে ব্যাথা এগগুলি এর সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ এবং সম্পূর্ণরূপে এই রোগ থেকে সেরে উঠতে চার থেকে সাত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস:-
ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস (WNV) হল একধরনের মশার কামড় থেকে সৃষ্ট মারাত্মক একটি রোগ। এই রোগটি মূলত পশ্চিম আমেরিকায় বেশি দেখা যায়। এই রোগের বাহক মশা। এই সংক্রমণ সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে। যদিও এই রোগের জন্য কোন টিকা নেই, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি প্রাণঘাতীও নয়। জ্বর হল এর সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হয়।
কোনো রেপেলেন্ট, ফুল হাতা জামা পরা, মশারি, টাঙিয়ে ঘুমানো – এই সব ছোট্ট পদক্ষেপগুলি আপনাকে এই রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

প্লেগ:-
প্লেগ প্রাথমিকভাবে মাছি সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে। এবং ইঁদুরের দেহে বসবাসকারী ইয়ার্সিনিয়া পেস্টিস (Yersinia pestis) এই রোগের জন্য দায়ী জীবাণু। এটি আফ্রিকা, এশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাম এবং শহরতলীর গুলিতে সাধারণত দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত তিন ধরনের প্লেগ আবিষ্কার করেছেন-বুবোনিক, সেপটিসেমিক এবং নিউমোনিক। এই রোগটির সাধারণ উপসর্গগুলি হল জ্বর, লিম্ফ নোডের বৃদ্ধি, রক্ত কফ্ সহ কাশি, এবং চরম দুর্বলতা। আপনার বাড়ি ইঁদুর মুক্ত রাখুন এবং আপনার পোষা প্রাণীগুলিকে মাছির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন তাহলেই এই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে পারবেন।

সিভিয়ার অ‍্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (SARS) :-
এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং মারাত্মক রোগ যা প্রথমবার নভেম্বর ২00২ সালে চীনে ধরা করা পড়েছিলো। করোনা ভাইরাসের একটি স্ট্রেন, যা সাধারণ ঠান্ডা লাগার সৃষ্টিকারী, তা এই রোগের রোগের কারণ। শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা হওয়ার কারণে, এটি হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
খুব জ্বর, শুষ্ক কাশি, এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলি এর সাধারণ উপসর্গ।

জলাতঙ্ক:-
র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক হ’ল যে কোনো র‍্যাবিড পশুর (যেমন- কুকুর, বাদুড়, শিয়াল ইত্যাদি) কামড়ের ফলে বা সৃষ্ট বা ক্ষতিকারক কুকুর, ব্যাট, শিয়াল এবং সহস্রাব্দ প্রাণীগুলির লালা সম্পর্কিত রক্তাক্ত মারাত্মক রোগ। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে জ্বর, মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, অত্যধিক স্যালভেশন, গিলতে অসুবিধা, বিভ্রান্তি, হাইপার্টিভিটি, হ্যালুসিনেশন এবং আংশিক পক্ষাঘাত দেখা যায়। পোষা প্রাণীদের টিকা দিয়ে এবং অজানা প্রাণীদের কামড়ের ক্ষেত্রে নিজেরা টিকাগুলি গ্রহণ করে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ব্রুসেলোসিস:-
এটি কনটামিনেটেড দুধ, এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবহার করে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ ছড়ায়। কৃষক ও দুগ্ধ শ্রমিকরা তাদের শরীরের মধ্যে ক্ষত নিয়ে কাজ করলে সংক্রামিত প্রাণীদের রক্ত, বীর্য বা প্ল্যাসেন্টা মাধ্যমে ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়া সরাসরি দেহে প্রবেশ করতে পারে। ব্রুসেলোসিসের সাধারণ লক্ষণগুলি হল জ্বর, শীত করা, দুর্বলতা এবং ক্ষুধা হ্রাস। পাস্তুরাইজড দুধ এবং রান্নার মাংস সঠিকভাবে সিদ্ধ করলে এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারেন। পশুর কোনো কাজ করতে হলে ডেয়ারি এবং কসাইখানার শ্রমিকদের গ্লাভস পরতে হবে।

লাইম ডিজিজ:-
সংক্রামিত কালো পাযুক্ত টিকসের কামড় দ্বারা মানুষের দেহে লাইম রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
জ্বর, ঠান্ডা লাগা, এবং শরীর দাগ হল এর সাধারণ উপসর্গ। কীটপতঙ্গ রোধক রেপিলেন্ট ব্যবহার করে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন।

নিউক্র্যাড স্বাস্থ্য কথা – সুস্থ পরিবার, সুস্থ সমাজ । নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে এলো বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংবাদ মাধ্যম আমাদের মাতৃভাষা বাংলা তে । নিউক্র্যাড হেলথ পড়ুন আর স্বাস্থ্য বিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ তে এগিয়ে থাকুন ! শেয়ার করে আমাদের সমাজের সচেনতা বাড়াতে সহযোগিতা করুন । আপনারা পেজ টি লাইক করুন ।

ধন্যবাদান্তে,
ড: বিশ্বরূপ ঘোষ, গবেষক, আমেরিকায় কর্মরত