মার্চ 29, 2024

ইউনিসেফের উপস্থাপিত তথ্যানুযায়ী ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব -৫ শিশু মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে ভারতবর্ষ

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

ইউনিসেফের উপস্থাপিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ভারতে ৮.৮ লক্ষেরও বেশি মৃত্যুর খবর নথিভুক্ত্ করা হয়েছে,যার মধ্যে ৫ বছরেরো কম বয়সী শিশুর সংখ্যা সবথেকে বেশী।
এর পরেই তালিকায় স্থান পেয়েছে নাইজেরিয়া ও পকিস্তানে, এখানে মৃতু্যর সংখ্যা যথাক্রমে ৮.৬৬ লক্ষ ৪.০৯ লক্ষ নিহত হয়েছে। ভারত সরকার যখন ২০২২ সালের মধ্যে অপুষ্টির অবসান ঘটাতে উদ্যোগী হয়ে ‘পোষণ অভিযান’ বলে একটি কর্মসূচী চালু করেছে , তখন এই পরিসংখ্যান হতাশাব্যঞ্জক ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, বাহরাইন, নিউজিল্যান্ডের মতো বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছে। এই সব প্রগতিশীল রাজ্যগুলিতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার এক হাজারেরও কম।

ইউনিসেফের ‘স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডের চিলড্রেন (SWC)’ প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য গুলি কী?
২০১৮ সালে, ইউনিসেফ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশগুলিতে অনূর্ধ্ব -৫ শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছিল। ‘দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডের চিলড্রেন (এসডব্লিউসি)’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, সেই তথ্যানুযায়ী ভারতে ১০০০ জন‌প্রতি প্রায় ৩৭ জন ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মারা গেছে।
এই পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী নাইজেরিয়া এবং পাকিস্তানের অবস্থাও সমানভাবে হতাশাজনক, যেখানে উভয় দেশেই প্রতি হাজার জনে শিশুমৃত্যুরর হার যথাক্রমে ১২০ এবং ৬৯ জন। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে ভারতে এক- পাঁচ বছরের বয়সী ১০০০ টি শিশুর মধ্য ৩৮ জন‌ বাচ্চাই স্টান্টিংয়ের শিকার হয়। অপুষ্টি, রক্তাল্পতা এবং সংক্রামক রোগগুলির প্রকোপ উচ্চ হারে শিশুমৃত্যুর একটি প্রধান কারণ।

বাচ্চাদের অত্যধিক হারে মৃত্যুর জন্য দায়ী একটা নয় বেশ অনেকগুলি কারন। ভারতে শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ নিম্নে আলোচনা করা হল:-

দারিদ্র্য ও মাতৃস্বাস্থ্য :
ভারত একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে ববাসকারী জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী এই সমস্ত পরিবারের শিশু পর্যায়ে গর্ভকালীন সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিকর খাবার, প্রসবপূর্ব চেক-আপ, প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিনের থেকে বঞ্চিত হয়, জন্মপরবর্তী শিশুবেলাতে ও এই চিত্র একই থাকে। শহর অঞ্চলের চেয়ে গ্রামীন এলাকাগুলিতে এই পরিস্থিতি আরও গুরুতর। এমত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রাজস্থানের ঝুনঝুনুতে একটি “পোষান অভিযান” প্রকল্প চালু করেছেন। এর মূল উদ্দ্যেশ্য হল ২০২২ সালের মধ্যে দেশে অপুষ্টি দূরীকরণের। এটি পরিষেবাগুলি প্রদানকারী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মানের উন্নতিতেও জোর দিয়েছে কেন্দ্র। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক প্রথম বছরের মধ্যেই ৩১৫ টি জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা শুরু করেছে।

শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ও স্থূলত্ব:
ভারত একটি উচ্চতর বৈপরীত্যের দেশ, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক একদল শিশু অপুষ্টির শিকার ও অপর একদল স্থূলত্বের শিকার। গ্রাম অঞ্চলগুলির দিকে বেশিরভাগ শিশুই অপুষ্টির শিকার; যেখানে মেট্রো এবং টায়ার -২ শহরগুলিতে শিশুদের মধ্য স্থূলতার লক্ষণ ক্রমবর্ধমান। এই উভয় অবস্থাই সমানভাবে ভয়াবহ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক জটিলতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। শিশুদের অপুষ্টি রক্তস্বল্পতা, স্কার্ভি, রিকেটস এবং পেলাগ্রা জাতীয় অপুষ্টিজনিত রোগের জন্ম দিতে পারে। একইভাবে, ক্যালোরি সমৃদ্ধ জাঙ্ক ফুড অতিরিক্ত খেলে অল্প বয়সে ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল, হার্টের অসুস্থতা এবং হাড়ের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করার জন্য, পিতামাতার এবং সরকারী সংস্থাগুলির উচিত স্বাস্থ্যকর, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার শিশুদের মুখে তুলে দেওয়া।
আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের পিতামাতাদের উচিত ফ্যাট জাতীয় ফ্রাইড খাবার, চকোলেট, বার্গার এবং অন্যান্য ভাজা খাবার বা ফ্যাটযুক্ত জাঙ্ক খাবার সীমাবদ্ধ করা উচিত।

টিকার অভাব:-
ভারতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক ১৯৮৫ সালে সর্বজনীন টিকাদান কর্মসূচি (ইউআইপি) চালু করে; যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সন্তানসম্ভবা অবস্থায় যক্ষ্মা, পোলিও, ডিপথেরিয়া, পের্টুসিস, টিটেনাস ও হামের মতো ছয়টি মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা। ২০০৬-এ, ইউআইপি কর্মসূচির আওতায় সরকার হেপাটাইটিস বি এবং জাপানি এনসেফালাইটিস ভ্যাকসিনও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তবে, এই সমস্ত উদ্যোগ সত্ত্বেও, হাজার হাজার শিশু তাদের শৈশবকালে সম্পূর্ণ পরিসর ভ্যাকসিন পায় না। শিক্ষার সীমাবদ্ধতা, পিতামাতার অজ্ঞতা এবং অনুন্নত স্বাস্থ্যপরিসেবা কাঠামো – এই সমস্ত কারনই ভারতে অনুর্দ্ধ-৫ এর মৃত্যুর হার বেশী।