এপ্রিল 27, 2024

হৃদরোগের সাথে শিক্ষা অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত – বিশ্বব‍্যাপী তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানমহল

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন

একটি নতুন গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী গবেষকরা দাবি করেছেন হৃদরোগর মোকাবিলা করতে ধন-সম্পদের চেয়েও, শিক্ষার ভূমিকা অনেক বেশি। গবেষকরা একদিকে শিক্ষা ও সম্পদের মধ্যে সম্পর্ক; অন্যদিকে হৃদরোগ ও হৃদরোগর কারনে মৃত্যুর হার-এই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এই তথ্য বিশ্লেষনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্থ-সামাজিক বৈষম্য কী হৃদরোগর রিস্ক ফ্যাক্টরের উপর কোনো প্রভাব ফেলে কিনা এবং আগাম রোগ নির্ণয় করে, তা প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে শিক্ষা কোনটা বেশি জরুরি তা জানা।

কানাডার সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির, ডক্টর স্কট লিয়ার বলেন, “স্বাস্থ্য‌ সম্বন্ধিত নির্ভূল ভবিষ্যদ্বাণী জানতে আপনাকে কতটা অর্থ ব‍্যায় করতে হয়, কিন্তু সারা দেশে ব্যবহার করার জন্য অনেক শিক্ষা এদিক থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর পদক্ষেপ বলে মনে হয়।”

এই যৌথ গবেষণায় গবেষকরা 20 টি দেশের মোট 36 টি শহর এবং 302 টি গ্রামীণ সম্প্রদায়ের উপর সমীক্ষা চালান। 20 টি দেশ হল ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, কানাডা, সুইডেন, পোল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, চিলি, আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কলম্বিয়া, ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, তানজানিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং প‍্যালেস্তাইন। এই দেশগুলোর মধ্যে নিম্ন আয়, মধ্যম আয় এবং উচ্চ আয়যুক্ত সমস্ত রকম দেশেই আছে। গবেষকরা 35 থেকে 70 বছর বয়সের প্রাপ্তবয়স্কদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তারা পরিবার এবং পরিবারের উপর তথ্য সংগ্রহের জন্য দুই ধরনের প্রশ্নপত্র তৈরি করেছিলেন। বং হৃদ রোগ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য আরো এক ধরনের প্রশ্নগুচ্ছ তৈরি করেছিলেন।

সাড়ে সাত বছর ধরে তাঁদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হওয়ার পর দেখা যায় হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত রোগে প্রায় 7,744 জনের মৃত্যু এবং মেজর কার্ডিওভাসকুলার রোগের 6,936 টি মৃত্যু হয়েছে। এরপর তারা দেশের আর্থিক অবস্থা ও শিক্ষার হার এই দুটির সাথে তাদের সংগৃহীত তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেন যে, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শিক্ষার হার এই দুয়ের সাথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারের লেখচিত্রে ও অনেক উঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই গবেষক দলের বিশ্লেষিত তথ্য অনুযায়ী যে পরিবেশের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল তাদের মধ্যেই দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা সব থেকে নিচের দিকে ছিল এবং সাথে শিক্ষার হার খুব কম ছিল হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার সেই দেশেই সবথেকে বেশি আবার অন্যদিকে যেই দেশটি শিক্ষা এবং আর্থসামাজিক দুই দিক থেকেই সবথেকে বেশি এগিয়ে ছিল সেখানে মৃত্যুর হার অনেক কম। উন্নত দেশগুলির থেকে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে মৃত্যুর হার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি ছিল।

এই গবেষণায় মূলত শিক্ষা এবং হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাতে আলোকপাত করতে চেষ্টা করেছেন। কারণ একজন শিক্ষিত মানুষ এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক দিক থেকে কিন্তু তার সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন। ও সামাজিক বা অন্য কোন ক্ষেত্র থেকে যে সমস্ত বাধা গুলি আছে সেগুলো কিন্তু একজন শিক্ষিত মানুষ অতি সহজে পার করে যেতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে যদি বিচার করা যায় তাহলে দেখা গেছে যে নিম্ন শিক্ষিত মানুষদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

এই গবেষক দলেরই আরেকজন সদস্য, ডক্টর রিয়েল, জানিয়েছেন যে আমরা এখানে শিক্ষাকে একটা পরিবর্তন যোগ্য ফ‍্যাক্টর হিসাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছি, যেখানে সম্পদ কিন্তু পরিবর্তন যোগ্য নয়।
আমরা যদি কিছু মানুষকে হঠাৎ করে প্রচুর ধন সম্পত্তির অধিকারী করে দিন তাহলে কিন্তু তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে যাবে না কিন্তু তার বদলে আমরা যদি একটা দেশ যেটা পপুলেশন একটা জাতিকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করি তাহলেই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই অবস্থাটার পরিবর্তন করা সম্ভব হবে, এক্ষেত্রে আমাদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। মূল বিষয় হলো শিক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য দুটি কিন্তু একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।

তিনি আরো বলেছেন, যে এই গবেষণার শক্তি বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান থেকে প্রাপ্ত বৈচিত্র্যময় তথ্যের উপর নির্ভর করেছে। এর এক অনন্য দিক (অধ্যয়নের) হল এই সমীক্ষা বিশ্বের বিভিন্ন অংশের ভিন্ন ভিন্ন দেশগুলির তথ্য একত্রিত করছে। অর্থাৎ আমাদের তথ্যের প্রসার অনেক দূর বিস্তৃত; আমরা একচেটিয়াভাবে পশ্চিমের দেশগুলিকেই কেবলমাত্র দেখলে এটা হতে না।”

কানাডার সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছিল এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরসাথে জড়িত। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে দ্য ল্যানসেট: গ্লোবাল হেলথ নামক এক জার্নালে।

আজকের নিবন্ধটি এটুকুই। পড়তে থাকুন, পাশে থাকুন।