অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন আপনার খারাপ অভ্যাসগুলির কারনে, শিশু জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ বা অন্যান্য সমস্যা নিয়ে জন্ম নিতে পারে!
মোনালিসা মোহান্ত , নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ৩রা মার্চকে ‘বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেছে?
প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৮ মিলিয়ন শিশু যে জন্মগত বিকৃতি নিয়ে জন্মায়, যা এই বাচ্চাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করতে পারে। অ্যানেসেফাইলি, স্পিনা বিফিডা, জন্মগত হার্টের ত্রুটি এবং ডাউনস সিনড্রোম এমন কিছু মারাত্মক সমস্যা রয়েছে যাতে হাজার হাজার সদ্যজাত আক্রান্ত।
WHO এই ত্রুটিগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পক্ষে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আরও কয়েকটি সংস্থার সাথে জোট করেছে। যদিও এই জন্মগত অক্ষমতাগুলির সঠিক কারণগুলি এখনও চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা, তবুও তারা জানিয়েছেন কয়েকটি ট্রিগার রয়েছে যা এই ধরনের রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনাটিকে যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কোজেনিটাল অ্যানোমেলিস বা জন্মগত বিকৃতি কী?
এটি হল এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন গর্ভস্থ সন্তানের গঠনমূলক এবং ক্রিয়ামূলক ত্রুটি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা এবং অ্যামনিওসেন্টেসিস রিপোর্ট থেকে প্রাথমিক পর্যায়েই বিষয়টিকে সনাক্ত করতে পারেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসাও কিছু কেমন করা সম্ভব, তবে তা নির্ভর করে রোগটির তীব্রতার উপর নির্ভর, পাশাপাশি ওষুধের পর্যাপ্ততা, অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে কতটা হোম কেয়ার পাওয়া সম্ভব তার উপর।
বাচ্চাদের মধ্যে জন্মগত ত্রুটির সম্ভবনা বাড়ানোর ট্রিগারগুলি কী কী?
যদিও চিকিত্সকরা এখন বেশিরভাগ জন্মগত অক্ষমতার সঠিক কারণ সনাক্ত করতে পারেননি, তারা এমন কিছু সম্ভাবনা বা কারন খুঁজে পেয়েছেন যা এই পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি অনেকগুনে বাড়িয়ে তোলে।
এই কারন বা ঝুঁকিগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল:-
মদ্যপান:-
বেশিরভাগ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা গর্ভাবস্থার সমস্ত ত্রৈমাসিকের সময় মায়েদের অ্যালকোহল পান না করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। কারণ অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়তে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান গুলো নাভীর মাধ্যমে ভ্রূণের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
মাতৃত্বকালীন অবস্থায় অ্যালকোহল পান করলে গর্ভপাত হয়ে যাওয়া, মৃত সন্তান জন্ম বা আচরণগত এবং বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত শিশুর ঘটনা বেশী দেখা যায়। গর্ভকালীন পর্যায়ে অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে জন্মগত অসঙ্গতিগুলি ফেটাল অ্যালকোহল স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (FASD) হিসাবে পরিচিত।
এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের শরীরের কম ওজন, মুখের গঠন অস্বাভাবিক ,মাথার আকার খুব ছোটো, মানসিক ভাবে বিকলাঙ্গতা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
ধূমপান:-
গর্ভাবস্থায় ধূমপান সমানভাবে খারাপ কারণ সিগারেটে টার, নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইড সহ আরো অনেক বিপজ্জনক রাসায়নিক রয়েছে। চিকিৎসকরা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করা মহিলাদের ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দেন। এটি গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে ফলে জন্মগত হার্টের ত্রুটিযুক্ত, বা দুর্বল দৃষ্টি এবং শ্রবণশক্তি যুক্ত শিশুর জন্ম হয়। এমনকি এক্টো রেপিক গর্ভাবস্থা, প্লাসেন্টাল অ্যাবরিপশন, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্রিটার্ম ডেলিভারি, এমনকি ফাটা ঠোঁট এবং ফাটা তালু যুক্ত শিশুর জন্মের মতো অসংখ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
তবে পিতা ও মাতা দুজনকেই গর্ভকালীন পর্যায়ে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্যাসিভ ধূমপানও কিন্তু সন্তানসম্ভবা মায়ের জন্য সমান বিপজ্জনক এবং ভ্রূণের বিকাশে উপরিউক্ত সমস্যাগুলির বিকাশে সমান ভাবে সক্ষম।
ড্রাগের অপব্যবহার:-
গর্ভাবস্থায় সব ধরণের নেশার জন্য ব্যবহৃত দ্রব্য গাঁজা, কোকেন, হেরোইন, এলএসডি এবং মেথামফেটামিনের মতো এই যৌগগুলি মা এবং ভ্রূণের বিকাশে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে।
এমনকি যে সমস্ত রাজ্যে এগুলো সেবন করা বৈধ, সেখানেও এই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা ভাল।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বহুবার উল্লেখ করা হয় যে গর্ভাবস্থায় ড্রাগ সেবনকারী মহিলাদের মধ্যে অকালে, কম ওজন এবং মৃত শিশুর সম্ভাবনা অতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়। এছাড়াও মানসিক সমস্যা, বিকৃত রেচন এবং প্রজননতন্ত্রে যুক্ত শিশু, খিঁচুনির সমস্যা, অতিরিক্ত কম ওজন এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা সহ ভ্রূণের বিকাশ সমস্যা করে। যে মহিলারা পূর্বে ড্রাগ ব্যবহার করেছেন তারা সুস্থ থাকার জন্য গর্ভাবস্থায় থেরাপি নিতে পারেন।
ক্যাফিন:-
গর্ভাবস্থায় ক্যাফিনের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা ভাল। যদিও এটি এনার্জি বুস্টার হিসাবে কাজ করে, কিন্তু দেহ থেকে ক্যাফিন অপসারণ করতে এটি 1.5 থেকে 3.5 গুণ বেশি সময় নেয়। ক্যাফিনের ট্রেসগুলি প্লাসেন্টাল রক্তে প্রবেশ করতে পারে এবং ভ্রূণের দেহে পৌঁছতে পারে।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান গাইনোকোলজিস্টস (ACOG) গর্ভধারণের সময় দিনে 200 মিলিগ্রামের চেয়ে কম ক্যাফিন ইনটেক করার পরামর্শ দেয়।
এখনও, ক্যাফিনের বিরুদ্ধে জন্মগত ত্রুটি সম্পর্কে কোনও চূড়ান্ত প্রতিবেদন নেই; তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে গর্ভপাত বা অকাল প্রবের সম্ভাবনা রয়েছে।
তাহলে জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আপনারা জানলেন। সুস্থ সুন্দর জীবনযাত্রা কাটান। সুস্থ থাকুন,ভালো থাকুন।