এপ্রিল 26, 2024

ইউরেটর ফিসচুলা – বিরলতম অস্ত্রোপচারে ইতিহাস গড়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র্যাড হেলথ এর নিজস্ব প্রতিবেদন

সম্প্রতি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও শল্যচিকিৎসকদের একটি দল এক অভাবনীয় সাফল্যের নজির রাখলেন রাজ্যে। বিরলতম অস্ত্রোপচারের দ্বারা তাঁরা নতুন জীবনের সন্ধান দিলেন রফিকুল ইসলাম নামের ২৩ বছরের এক যুবককে। রফিকুল গত ১৫ বছর ধরে একটি বিরল রোগের শিকার, যার ফলে তাঁর গ্রহণ করা প্রতিদিনের ভাত-তরকারি ও অন্যান্য খাবারের কণা প্রস্রাবের সাথে নির্গত হতে থাকে। রফিকুলের বয়স যখন ৮ বছর তখন থেকেই এই উপসর্গ দেখা দেয়। প্রসাবের সময়ও অসম্ভব যন্ত্রণার অনুভূতি হত ও প্রসাবের সাথে খাবারের কণা বেরিয়ে আসত। এই ঘটনায় অত্যন্ত ভয় পেয়ে রফিকুলের বাড়ির লোকেরা স্থানীয় বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন কিন্তু তারা কেউই এই বিরলতম রোগের হদিশ করতে না পেরে রফিকুলকে মানসিকভাবে অসুস্থ ধরে নিয়েছিলেন এবং তাদের দাবী ছিল রফিকুল এইসব আজগুবি গল্প তৈরী করছে। অবশেষে উপায় না দেখে তার পরিবারের লোকজন ও বন্ধুবান্ধব তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসে এবং সেখানেই তাঁর ওই বিরলতমরোগের সফল অস্ত্রোপচার হয়।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে রফিকুল ইসলাম ২০১৯ এর ১৯শে অক্টোবর সেখানে ভর্ত্তি হয় এক অদ্ভুদ রোগের উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসকেরা তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর এই সিদ্ধান্তে আসেন যে রফিকুল ডিওডানো-ইউরেটেরাল ফিসচুলা নামে এক জটিল রোগের শিকার। যে রোগে মূত্রথলি কোনভাবে মানুষের পরিপাকতন্ত্রের ডিউডেনামের সাথে যুক্ত হয়ে ফিসচুলা তৈরী করে ফলে গ্রহণ করা খাবারের কিছু কণা রোগীর প্রস্রাবের সাথে নির্গত হতে থাকে। রফিকুলের ঘটনাটিকে নিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে এই বিরলতম ডিউডেনো-ইউরেটাল ফিসচুলা রোগের মাত্র ১১টি নিদর্শন পাওয়া গেছে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক ডাঃ নরেন্দ্রনাথ মুখার্জীর তত্বাবধানে ১০ জন চিকিৎসকের একটি দল নানা পরীক্ষা ও গবেষণার পর রোগের বিরলতা ও জটিলতার কথা মাথায় রেখে রফিকুলের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। ডাঃ নরেন্দ্রনাথ মুখার্জী, ডাঃ মধুসূদন চ্যাটার্জী ও ডাঃ জ্যোর্তিময় ভট্টাচার্য একত্রে দীর্ঘ ২ ঘন্টা অপারেশনের পর রোগীর ডিওডেনো-ইউরেষ্টের ফিসচুলাটি খুঁজে পান ও সেটিকে সঠিকভাবে সারিয়ে তোলেন। চিকিৎসকদের দাবি অস্ত্রোপচার সফল এবং রফিকুল খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে।

কি কারণে রফিকুলের এই বিরলতম রোগ?

ছোটোবেলা থেকেই রফিকুলের প্রস্রাব ও পায়খানার সাথে প্রায়ই বড় বড় কেঁচো বেরোতো। চিকিৎসকদের ধারণা ওর শরীরে থাকা এই পরজীবী কেঁচোগুলিই পাকস্থলীর ঠিক নীচে ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশটি ফুটো করে ইউরেটর বা মূত্রথলিতে বার বার ঢুকে মূত্রথলির সাথে পরিপাকতন্ত্রের একটি সংযোগ স্থাপন করে ফেলে ছিদ্রের দ্বারা যা পরবর্তী কালে ফিসচুলায় পরিণত হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা রফিকুলকে CT Urography পরীক্ষা করানোয় তখন তার খাদ্যনালীর নীচের ও মূত্রনালীর মধ্যবর্তী অংশে ফিসচুলাটি লক্ষ্য করেন এবং সে যে তার মূত্র ও পয়ঃ নিঃসরণের সাথে খাদ্যকণা বেরিয়ে আসা নিয়ে গালগল্পো রচনা করছে না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হন। সমগ্র ভারতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এই সাফল্য এক নবতম অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ইউরেটর ফিসচুলা আসলে কি?

সাধারণতঃ এই ফিসচুলাটি তৈরী হয় যখন আমাদের মূত্রনালী, মূত্রথলি ও রেচনতন্ত্রের অন্যান্য অংশের কোনো জায়গায় অস্বাভাবিক ছিদ্র তৈরী হয়। বেশীরভাগ সময় দেখা যায় এই ফিসচুলাটি Urinal tract এর কাছে থাকা অঙ্গগুলির সাথে জুড়ে যায়। যেমন Vesico vaginal fistula এর ক্ষেত্রে vagina ও bladder এর মধ্যে সংযোগ তৈরী হয়ে যায়। ঠিক তেমনভাবেই Uretoro vaginal fistula – র ক্ষেত্রে যোনী ও মূত্রনালীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয়ে যায়। রফিকুলের রোগটি বিরলতম কারণ সেখানে পরিপাকতন্ত্রের সাথে রেচনতন্ত্রের সংযোগ তৈরী হয়েছিল।

রফিকুলের বিরলতম রোগের অস্ত্রোপ্রচার ও চিকিৎসাটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের এক উজ্জ্বল কৃতিত্ব।