এপ্রিল 19, 2024

রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ব্যাবহারঃ একটি প্রাসঙ্গিক আলোচনা

Reading Time: 6 minutes

শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা ডেস্ক, জুলাই ১৭, ২০২০

Prevention is better than cure”- এই প্রবাদটির কথা মাথায় রেখে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা রোগপ্রতিরোধক ব্যাবস্থা হিসাবে ভ্যাকসিন বা টীকার সাহায্য নেন। এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকেই সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষকে বহু ভয়াবহ সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে। বর্তমানে, সংক্রামক রোগ ছাড়াও ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায় ভ্যাকসিনের ব্যাবহার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, কি এই ভ্যাকসিন? কবে এর উৎপত্তি? কিভাবে এটি শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে- সেই সম্পর্কে সাধারন মানুষের কৌতূহল অপরিসীম। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমাদের এই আলোচনা। 

ভ্যাকসিন কি?

কোন রোগের জন্যে দায়ী জীবন্ত অণুজীব (Microorganism) বা তার থেকে পাওয়া জৈবিক পদার্থকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিষ্ক্রিয় করে, শরীরে প্রবেশ করালে সেই নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ  ক্ষমতা গড়ে ওঠে- একে ভ্যাকসিন বলা হয়। ভ্যাকসিন দেবার পদ্ধতিকে ভ্যাসিনেশান বা টীকাকরন বলে। ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে, নাসারন্ধ্রে স্প্রে করে বা ওরাল সলিউশান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। 

ভ্যাকসিনের উৎপত্তি প্রয়োগঃ

শুনতে অবাক লাগলেও প্রথম ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা ভারতে শুরু হয়েছিলো আনুমানিক সপ্তম শতাব্দীতে। ভারতের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সাপের বিষ খুব সামান্য মাত্রায় গ্রহন করতেন শরীরে সর্পাঘাতের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা গড়ে তোলার জন্যে। প্রাচীন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে “ভেরিওলেশান” বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়। প্রায় দুই হাজার বছর আগে, মধ্য এশিয়ায় যাদের স্মলপক্স বা বসন্ত রোগ হতো, তাদের শরীরে তৈরি হওয়া বসন্তগুটি থেকে প্রাপ্ত পুঁজ (Pustules) শুকিয়ে, পাউডারের মতো গুঁড়ো করে রাখা হতো। পরে ওই পাউডার সুস্থ মানুষের উপর প্রয়োগ করা হতো। তাদের আর স্মলপক্স হতো না। বসন্ত রোগের জীবাণু ভ্যারিওলা ভাইরাসের ল্যাটিন নাম থেকে এই পদ্ধতিটির নাম “ভেরিওলেশান” দেওয়া হয়। এই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি চীন, পশ্চিম টার্কি, আফ্রিকা এবং ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে। 

১৭৯৮ সাল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়েছে থাকবে। ইংল্যান্ডের চিকিৎসা বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে স্মলপক্স ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন এবং প্রথম ভ্যাকসিনেশান বা টীকাকরণ সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি স্মলপক্সের কাছাকাছি কাউপক্সের জীবাণু সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করেন। দেখা গেলো ওই ব্যক্তির শরীরে স্মলপক্সের বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলো। 

১৯ শতকে ফরাসী বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ভ্যাকসিনেশান পদ্ধতিকে অন্যান্য অসুখ প্রতিরোধের কাজে ব্যবহারের জন্যে গবেষণা শুরু করলেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে গবেষণাগারে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা কমিয়ে তাকে দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া সম্ভব। এইভাবে নিষ্ক্রিয় জীবাণু ব্যবহার করে তিনি চিকেন কলেরা,  অ্যানথ্রাক্স এবং রেবিসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। 

বিভিন্ন প্রকার ভ্যাকসিন:

এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধে যে সমস্ত ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয় সেগুলি হলো-

. লাইভ অ্যাটিন্যুয়েটেড ভ্যাকসিন (Live Attenuated Vaccine)

রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুকে গবেষণাগারে বৈজ্ঞানিক উপায়ে দুর্বল করে তার রোগসৃষ্টির ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়। এই জীবাণুকে শরীরে প্রবেশ করালে সেই নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরী হয়। হাম, মাম্পস, চিকেনপক্স রোগপ্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। তবে এই ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত জীবাণু শরীরে কখনো কখনো তার ক্ষমতা ফিরে পেয়ে পুনরায় রোগের সৃষ্টি করে। 

. নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন (Inactivated Vaccine)

বিজ্ঞানীরা তাপপ্রয়োগে, রেডিয়েশন দিয়ে অথবা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করেন। এই প্রকার ভ্যাকসিনের সাহায্যে পোলিও, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস-এ, রেবিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। 

. সাব ইউনিট ভ্যাকসিন (Sub unit Vaccine)

সম্পূর্ণ জীবাণু না নিয়ে, তার দেহের কোনো অ্যান্টিজেনকে ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সাব ইউনিট ভ্যাকসিন দিয়ে প্লেগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিলো। 

. টক্সয়েড ভ্যাকসিন (Toxoid Vaccine)

অনেক ব্যাকটেরিয়া বিষাক্ত রাসায়নিক বার করে, যা শরীরের ক্ষতি করে। একে টক্সিন বলে। ফর্মালিনের সাহায্যে টক্সিনকে নিষ্ক্রিয় করে ‘ডিটক্সিফাই’ করা হয়। এর পর তাঁকে ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। টিটেনাস রোগের টক্সয়েড ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয়। 

. ডিএনএ ভ্যাকসিন (DNA Vaccine)

সারা বিশ্বে ডিএনএ ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে। জীবাণুর জেনেটিক মেটিরিয়াল বা ডিএনএকে ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে ডিএনএ ভ্যাকসিনের ব্যবহার আছে।

. রিকম্বিনেন্ট ভ্যাকসিন (Recombinant Vaccine)

কিছুটা ডিএনএ ভ্যাকসিনের মতোই। তবে এক্ষেত্রে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএর সাথে প্রয়োজনীয় জীবাণুর অ্যান্টিজেনের ডিএনএ সিকোয়েন্স যোগ করে ক্লোনিং এর সাহায্যে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরী করা হয়। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ ভেক্টর বা বাহক হিসাবে কাজ করে। ডিপথেরিয়া-পার্টুসিস-টিটেনাস বা ডিপিটি ভ্যাকসিন হলো রিকম্বিনেন্ট ভ্যাকসিন। 

. পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন (Polysaccharide Vaccine)

ব্যাকটেরিয়ার ক্যাপসুলে অবস্থিত দীর্ঘ পলিস্যাকারাইড চেন থেকে তৈরী হয় এই ভ্যাকসিন। এটি বিশেষ প্রকার নিষ্ক্রিয় সাব ইউনিট ভ্যাকসিন। নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিনের ব্যবহার আছে। 

. প্রোটিন ভ্যাকসিন (Protein Vaccine)

ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিনকে পরিশুদ্ধ করে বা রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন তৈরী করে তাকে ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। হেপাটাইটিস বি রোগ প্রোটিন ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধ করা হয়। 

. কনজুগেট ভ্যাকসিন (Conjugate Vaccine)

ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরে থাকা পলিস্যাকারাইড ও প্রোটিন উভয়ের সাহায্যে তৈরী ভ্যাকসিন। যেমন-হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি টাইপ-বি ভ্যাকসিন। 

কিভাবে কাজ করে এই ভ্যাকসিন

সাধারণভাবে, রোগজীবাণু সংক্রমনে আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা বা ইমিউনিটি সিস্টেম সক্রিয় হয়েছে ওঠে। আমাদের রক্তে অবস্থিত ইমিউন কোষগুলি (যেমন- নিউট্রোফিল, ইয়োসিনোফিল, ম্যাক্রোফাজ, ন্যাচারাল কিলার কোষ, বি-লিম্ফোসাইট, টি-লিম্ফোসাইট) জীবাণুর বিরুদ্ধে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে থাকে। মাক্রোফাজ জীবাণুকে গ্রাস করে ফেলে, বি-লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরীতে সাহায্য করে, টি-লিম্ফোসাইট জীবাণুকে আক্রমণ করে বিনষ্ট করে। সংক্রমণ আয়ত্তের মধ্যে থাকলে ইমিউনিটির প্রভাবে অধিকাংশ জীবাণু মারা যায়। শরীর সুস্থ হয় এবং কিছু ‘মেমোরি কোষ’ তৈরী হয়ে পরবর্তী পুনঃ সংক্রমণকে প্রতিহত করে। কিন্তু সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে বা অন্যান্য শারীরিক প্রতিকূলতায় রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই ক্ষেত্রে ইমিউনিটি পরাজিত হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 

ঠিক এই সমস্যাকে সমাধানের পথে নিয়ে যায় ভ্যাকসিন। সংক্রমণ ক্ষমতাকে বিনষ্ট করে জীবাণু বা তার অ্যান্টিজেনকে শরীরে প্রবেশ করালে সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়, ইমিউনিটি সক্রিয় হয়ে ওঠে, ‘মেমোরি কোষ’ পর্যন্ত তৈরী হয় অথচ কোনো রোগলক্ষণ প্রকাশ পায় না। শরীর সুস্থ থাকে এবং ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে সক্রিয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। 

ভ্যাকসিনের ডোজ: সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ 

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিন একবার দেওয়া হলেই যে তাঁর প্রভাব সারাজীবন থাকবে তা নাও হতে পারে। বিশেষ করে নিষ্ক্রিয় ও লাইভ লাইভ অ্যাটিন্যুয়েটেড ভ্যাকসিন সময়ের সাথে সাথে প্রভাব হারাতে থাকে। কখনো দেখা যায় মাত্র একবারে ভ্যাকসিন যথেষ্ট ইমিউনিটি তৈরী করতে পারে না। কিছুবছর পর পর ভ্যাকসিন ডোজ দিতে হয়। একে বলে ‘বুস্টার ডোজ’। আবার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন প্রতি বছরেই নিতে হয়। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চরিত্রের দ্রুত পরিবর্তন হয়, ফলে পুরোনো ভ্যাকসিন কার্যকরী হয় না। 

মহামারী অতিমারী প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ:

বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় রোগসংক্রমণের বিস্তার দুই প্রকার হতে পারে। যখন একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে কোনো সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে, তাকে এপিডেমিক বা মহামারী বলে। আর প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে যদি ওই রোগ ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তাকে অতিমারী বা প্যান্ডেমিক বলে অভিহিত করা হয়। এই দুইপ্রকার রোগসংক্রমণ ঠেকাতে ভ্যাকসিনেশান ভীষণ কার্যকরী। ভ্যাকসিনেশান জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। প্যান্ডেমিক প্রতিরোধে সংক্রমণের উপর নিয়মিত মনিটরিং, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, কোয়ারেন্টাইন এবং সুচিকিৎসার সাথে ভীষণভাবে দরকার যথোপযুক্ত ভ্যাকসিন। ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিকে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর পরেও ১৯৫৭, ১৯৬৮ এবং ২০০৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিক হয় কিন্তু দেখা যায় মৃত্যুর হার অনেক কম। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন সেই সময়ে ভ্যাকসিনের আবিষ্কার ও ব্যবহার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। আবার ২০০৩ সালে এশিয়া থেকে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা SARS প্যান্ডেমিক শুরু হয় এবং তা ইউরোপ ও আমেরিকায় বিস্তার লাভ করে। ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগসের ব্যবহারে তা অনেক কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে আবার কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর হার বাড়িয়ে চলেছে। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি, সফল, কার্যকরী ও নিরাপদ ভ্যাকসিনের জন্যে। 

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিদিন চলছে নতুন ভ্যাকসিন গবেষণা। বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছেন আরো কার্যকরী, আরো ক্ষমতাসম্পন্ন ভ্যাকসিন বার করার জন্যে। চলেছে বিভিন্ন পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সেই প্রসঙ্গে আলোচনায় আসা যাক। 

http://www.neucrad.com

ভ্যাকসিন প্রস্তুতি পদ্ধতি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল:

যথোপযুক্ত ভ্যাকসিন তৈরী একটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি। কোন নির্দিষ্ট রোগের ভ্যাকসিন তৈরীর কিছু ধাপ আছে, সেগুলি হলো-

. এক্সপ্লোরেটোরী স্টেজ 

সরকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বিজ্ঞানীরা রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ক্যান্সার কোষকে শনাক্ত করে তার থেকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিজেন বার করে ভ্যাকসিন তৈরীর কাজে লাগান। 

. প্রিক্লিনিক্যাল স্টেজ 

নির্দিষ্ট রোগের জীবাণুর অ্যান্টিজেন চিহ্নিত করে প্রথমে (ইন-ভিট্রো টিসু কালচারের মাধ্যমে) কোষের উপরে প্রয়োগ করে ইমিউনিটির সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ভালো ফল পেলে, পরবর্তী ধাপে ইন-ভিভো বা অ্যানিম্যাল মডেলে কাজ করা হয়। প্রধানত: ইঁদুর ও বানরের উপর পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। 

*কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ বা ICMR এর প্রয়োজনীয় অনুমোদন। 

. ফেজ I ভ্যাকসিন ট্রায়াল

এই পর্যায়ে ভ্যাকসিন দিয়ে ২০-৮০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়। অনুমতিসাপেক্ষে, রোগাক্রান্ত মানুষের উপর ভ্যাকসিনটির প্রভাব দেখা হয়। যদি দেখা যায় ভ্যাকসিন কার্যকরী ও নিরাপদ, তবেই তা পরের ট্রায়ালে পৌঁছয়।

. ফেজ II ভ্যাকসিন ট্রায়াল 

প্রায় কয়েকশো মানুষের উপর ভ্যাকসিনের প্রভাব দেখা হয়। সাথে আনুষঙ্গিক তথ্য যেমন- রোগীর বয়স, অন্যান্য অসুস্থতা, ট্রায়াল চলাকালীন অন্য ড্রাগের প্রভাব, ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ইত্যাদি পর্যালোচনা করা হয়।

. ফেজ III ভ্যাকসিন ট্রায়াল 

ভ্যাকসিনের প্রভাব দেখা হয় এক থেকে দশ হাজার মানুষের মধ্যে। এই পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হয় ভ্যাকসিনটির ইমিউনিটি বর্ধিত করার হার, রোগসংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অ্যান্টিবডি তৈরীর ক্ষমতা ইত্যাদি। 

*আর এক দফা সরকারী অনুমোদন প্রক্রিয়া

. ফেজ IV ভ্যাকসিন ট্রায়াল

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি অনুমোদন পাবার পর ইচ্ছা করলে আরো একবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে পারে। 

. কোয়ালিটি কন্ট্রোল 

এই ধাপে ভ্যাকসিনটির চুড়ান্ত পর্যায়ের গুণমান যাচাই করা হয়। 

. মার্কেটিং 

ভ্যাকসিনটিকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বাজারে ছাড়া হয়। 


তথ্যসূত্রঃ 

  1. Poland GA, Murray D, Bonilla-Guerrero R. New vaccine development [published correction appears in BMJ 2002 Jul 27;325(7357):195]. BMJ. 2002;324(7349):1315-1319. doi:10.1136/bmj.324.7349.1315
  2. Garmory HS, Perkins SD, Phillpotts RJ, Titball RW. DNA vaccines for biodefence. Adv Drug Deliv Rev. 2005;57(9):1343-1361. doi:10.1016/j.addr.2005.01.013
  3. Lee JS, Hadjipanayis AG, Parker MD. Adv Drug Deliv Rev. 2005 Jun 17; 57(9):1293-314. Epub 2005 Apr 15.
  4. Oyston P, Robinson K. The current challenges for vaccine development. J Med Microbiol. 2012;61(Pt 7):889-894. doi:10.1099/jmm.0.039180-0
  5. Kaufmann SH, McElrath MJ, Lewis DJ, Del Giudice G. Challenges and responses in human vaccine development. Curr Opin Immunol. 2014;28:18-26. doi:10.1016/j.coi.2014.01.009
  6. https://www.cdc.gov/vaccines/basics/test-approve.html
Please contact [email protected] for relevant advertisements