নভেম্বর 23, 2024

মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ যত্ন মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ও সংখ্যা হ্রাস করতে পারে

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন।

গত কয়েক মাসে আমরা কতোগুলো হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখলাম, যেখানে মানুষ শুধুমাত্র মানসিক সমস্যার কারণে, আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নিলেন।
এই জুনেই তো কলকাতায় জিডি বিড়লা সেন্টার অফ এডুকেশনের কৃতী ছাত্রী কৃতিকা পাল, মাত্র চৌদ্দ-বছর বয়সেই বিদ্যালয়ের ওয়াশরুমে হাতের শিরা কেটে নিঃসৃশ ভাবে শেষ করে দিলো নিজেকে।
এই হৃদয় বিদারক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, আইআইটি হায়দ্রাবাদে পাঠরত, মাস্টার্সের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। সে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অত‍্যধিক অ‍্যাকাডেমিক চাপ সামলাতে না পেরেই এই পর বেছে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই সমস্ত হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর মানসিক অবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ন। আজ 10 অক্টোবর সারা বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হচ্ছে, আসুন আমরা অঙ্গীকার করি যে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের তাৎপর্য সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দেব। আজ আমরা এমন কিছু মানসিক ব্যাধি নিয়ে আলোচনা করব যেগুলির সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা বা পদক্ষেপ না নিলে, একটি ব‍্যাক্তিকে আত্মহননের মতো জীবনে চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।

ডিপ্রেশন:-

ডিপ্রেশন বা হতাশা হল অন্যতম একটি মানসিক ব্যাধি যা আধুনিক সমাজে মহামারীর আকার ধারণ করেছে। শুধু মাত্র বড়োদেরই না স্কুল-পড়া শিশুরাও সমাজের নিয়ম মানিয়ে নিতে না পারায় ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছে। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (CDC) তথ‍্য অনুযায়ী, বারো বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৭.৬% আমেরিকান তাদের সমগ্র জীবনে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ হলেও হতাশা/ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছিলেন। এই সমস‍্যার সাধারণ লক্ষণগুলি হ’ল বিরক্তি, অস্থিরতা, কাজকর্মে আগ্রহ কমে যাওয়া, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, অনিদ্রা, অবসন্নতা, নিজেকে অযোগ্য মনে করা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন আঘাতজনিত শৈশব, পারিবারিক সমস্যার বা বংশগত কারণে, মাদকের প্রতি আসক্তি এবং বিবাহবিচ্ছেদ বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যার মতো নানান বিষয়গুলো থেকেই প্রাথমিকভাবে হতাশা/ডিপ্রেশনের শুরু হয়। তবে যাইহোক প্রাথমিকভাবে মনোবিদের পরামর্শনিলে এবং চিকিৎসা করালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মানসিক সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বাইপোলার ডিসঅর্ডার:-

বাইপোলার ডিসঅর্ডার হ’ল রোগীদের খুব দ্রুত মেজাজ বদলে যাওয়ার মতো আরেকটি জটিল মানসিক ব্যাধি। এরা মূলত ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়া, এবং তার পরপরই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই দুই অবস্থা পর্যাক্রমে চলতেই থাকে। এইক্ষেত্রে ব্যক্তিরা হাইপোম্যানিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং অত্যন্ত শক্তিশালী মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যায় এবং তারপরেই তা হঠাৎ হতাশায় বদলে যায়।এরফলে প্রতিদিনের কাজে আগ্রহ হারাতে পারে এবং এমনকি হতাশার পর্যায়ে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনার দেখা যায়। এই সমস্যা কিন্তু এক বছরের মধ্যে বারবার ঘুরে ঘুরে আসতে পারে।
এটি রোগীর ক্রিয়াকলাপ, বিচারশক্তি, আচরন এবং ঘুমকে প্রভাবিত করে। তবে, বেশিরভাগ মনোবিজ্ঞানীরাই পরামর্শ দিয়েছেন যে ওষুধ এবং সাইকোথেরাপির সাহায্যে কিন্তু এই বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিরাময় করা যেতে পারে।

পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)

এটি এমন মানসিক সমস্যা যা সাধারণত জীবনের কোনো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়ার কারণে দেখা দেয়। রোগীরা হয় ব্যক্তিগতভাবে আঘাতজনিত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে বা অনেকক্ষেত্রে তাদের চোখের সামনে ঘটলে কোনো ভয়াবহ দৃশ্য প্রত‍্যক্ষ করলেও এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
যুদ্ধ, অপরাধ, দুর্ঘটনা জনিত কোনো ঘটনা বা নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু PTSD সমস‍্যার শুরু করে।

ভুক্তভোগীদের ঐ সমস্ত ভয়াবহ ঘটনাগুলো বারবার মনে পড়তে থাকে, ঘুমের সময় দুঃস্বপ্ন দেখে, মারাত্মক মানসিক ঝামেলা, ট্রমা জনিত সমস্যায় ভুগতে থাকেন। তবে অনেক সময় ট্রমা সৃষ্টিকারী লোকজন বা স্থানগুলি এড়িয়ে যাওয়া বা নেতিবাচক চিন্তাভাবনা কম করার মাধ্যমেও PTSD এর হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বা দৈনন্দিন জীবনে সাময়িক সমস্যার সম্মুখীন হয়েও যথাযথ যত্ন নিলে এই ধরনের সমস্যা নির্মূল হতে পারে। তবে লক্ষণগুলি যদি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকে তবে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়াই ভাল।

স্কিজোফ্রেনীয়্যা

স্কিজোফ্রেনিয়‍্যা হ’ল আরেকটি মানসিক সমস্যা যা সাধারণত ষোল থেকে ত্রিশ বছর বয়সী ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। এই মানসিক অবস্থার কারণে রোগীরা বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন, মনোযোগের অভাব, সামাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। তারা অযথা কাউকে ভয় পেয়ে থাকতে পারে বা এমন অনুভূতি হতে পারে যেন কেউ তাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
জিনগত উত্তরাধিকার, মস্তিষ্কে ডোপামিনের ভারসাম্যহীনতা এবং মারিজুয়ানা এবং এলএসডির মতো মারাত্মক ড্রাগে আসক্তি সিজোফ্রেনিয়ার সৃষ্টিকারী প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে কয়েকটি।
ওষুধ, মনস্তত্ত্ববিদের পরামর্শ এই মানসিক ব্যাধিগুলির লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের সারা জীবনব‍্যাপী এই সমস‍্যায় ভুগতে হতে পারে।

আমাদের বর্তমান সমাজের প্রচলিত কিছু মানসিক ব্যাধি নিয়ে আলোচনা আজ এটুকুই। এই অবস্থাগুলি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন যাতে রোগীরা সময়মত চিকিৎসা ও যত্ন পায় এবং চাপ-মুক্ত সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।