ব্যস্ততার জন্য প্রাতরাশ করার সময় হয় না; আবার রাতে ক্লান্তিতে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমাতে চলে যান। কি বিপদ ডেকে আনছেন জীবনে ?

নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
আপনি কী ঠিক ঘুমানোর আগে ডিনার করার অভ্যাস আছে, মানে রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে যান কী? বা খুব বেশি ব্যস্ততার জন্য সকালের খাবার না খেয়েই কাটিয়ে দিন কাটাচ্ছেন? এইগুলি যদি সত্যিই আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে অবিলম্বে আপনি এই ধরনের খাওয়ার অভ্যাসগুলি পরিবর্তন করুন, কারণ ধরনের খদ্যাভ্যাস হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেকগুনে বাড়িয়ে তোলে। সাম্প্রতিক, ইউরোপীয় জার্নাল অফ প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি করা একটি সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, আপনার যদি ইতিমধ্যেই কোনো হার্টের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে করোনারি অ্যাটাক, এনজিনা বা এমনকি মৃত্যুর ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা 3-4 গুন বেড়ে যায়।
ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের একটি দল ST এ্যালিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্যার্কশন (STEMI) নামে পরিচিত কারনারি ডিজিজের আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের উপর খাদ্যাভাস বা অন্যান্য কূ-অভ্যাস কীরূপ প্রভাব ফেলে তার উপর একটি গবেষণায় পরিচালনা করেছেন।
অ্যাককিউট করোনারি ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে যে সব ব্যক্তি ইনটেনসিভ ইউনিট ভর্তি হয়েছিলেন সেই সমস্ত রোগীদের কাছ থেকে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস দেখা যায়:-
গবেষকরা করোনারি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি প্রায় 58 শতাংশ রোগী ব্যস্ততার তাদের সকালের খাবার খান না , 51 শতাংশ রোগী দেরিতে রাতের খাবার খান এবং প্রায় 41 শতাংশ রোগী দুই ধরনেরই অভ্যাস আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তারা সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন দেরি করে জেগে উঠার কারণে, বা খাওয়ার জন্য কিছু খুঁজে না পাওয়ার কারণে তাদের সকালের খাবার না খেয়ে কাটিয়ে দিতেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সকালেই চা বা কফি মতো পানীয় পান করেই সারাটা সকাল থেকে যেতেন। সপ্তাহে প্রায় তিনদিন জন্য ঘুমানোর আগে দুই ঘন্টার মধ্যে খাবার খেতে শুয়ে পড়তেন।
সুস্থ, সঠিক খাওয়ার অভ্যাস বলতে কী বোঝায়?
গবেষণা দলের সদস্য এবং ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডাঃ মারকোস মিন্নিকুকি, দিনের শেষ খাবারের ও শোবার সময়ের মধ্যে অন্তত দুই ঘণ্টার ব্যবধান রাখার পরামর্শ দেন; তিনি জানিয়েছেন এটি মেনে চললে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে STEMI নামের হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত দশজন রোগীর মধ্যে একজন ভুল খাদ্যাভাসের ও অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে এক বছরের মধ্যে মারা যায়; যা কিন্তু সহজে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ডাঃ মারকোস মিনিকুচক্কি রোগীদের রোগ প্রতিরোধে সুস্থ ব্রেকফাস্টের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছিলেন। তিনি জানান, গমের রুটি, ব্রাউন ব্রেড স্যান্ডউইচ এবং ওটস, কম-চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন দই, পনির, এবং দই, স্যাফেলের মতো তাজা ফল, আপেল, আম, কলা, এবং বেরি ইত্যাদি প্রাতঃরাশ করার জন্য উপযোগী। আদর্শভাবে, আমাদের সকালের খাবার এমন হওয়া উচিত কী পুরো দিনে মোট যত ক্যালোরি আমারা গ্রহন করি তার যেন প্রায় 15 থেকে 35 শতাংশই পূরন হয়ে যায়।
জীবনযাত্রায় অন্য কোন পরিবর্তন কী আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো করতে পারে?
খাওয়া অভ্যাস পরিবর্তনগুলির সাথে সাথে সাথে একটি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ন্যূনতম করার চেষ্টা করতে হবে, সক্রিয় জীবনযাপন করতে হবে , ধূমপানের বা তরল নেশা কররার পানীয় কম করতে হবে, এই ছোট ছোট ব্যাপার গুলি কিন্তু আমাদের হৃদযন্ত্র সচল রাখতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে।
যদি মাত্র 30 মিনিট করে আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাহলে আপনি আপনার দেহের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
জীবন পরিবর্তনশীল, আয়রা অভ্যাসের দাস, নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন, আপনি নিজেইনিজের ব্যপক পরিবর্তন বুঝতে পারবেন। এতে আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকবে, আপনার স্ট্রেস লেভেল কম করবে, দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং মানোযোগ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এমনকি শরীরের অবাঞ্ছিত এলাকায় থেকে লিপিড স্তরগুলো গলিয়ে দিয়ে, আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আপনি যেকোনো জিমের সদস্যপদ গ্রহন করতে পারেন বা আপনার ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক নিয়োগ করতে পারেন। অন্যথায়, দ্রুত, হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং বা সাঁতারের মতো নিরাপদ কার্ডিও এক্সারসাইজ গুলিও করতে পারেন। এই জন্য আপনার কোন পারসোনাল প্রশিক্ষক বা কোন জিমের সদস্য হতে হবে না নিজেই বাড়িতে ধীরে ধীরে অভ্যাস করতে থাকুন এবং একবার অভ্যাস হয়ে গেলে সব সময় বাড়িয়ে দিন।
কার্ডিয়াক ডিসর্ডারের আরেকটি প্রাথমিক অপরাধী মাত্রারিক্ত স্ট্রেস, আধুনিক সমাজে খুব কমই কোন ব্যক্তি আছেন যিনি উদ্বেগের শিকার হয় নি। তবে, যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের মত শ্বাস নিয়ন্ত্রণক ব্যায়াম চাপ কম করতে চাপের । ধূমপানও মানবদেহে খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। এতে যে নিকোটিন, আর্সেনিক, বেঞ্জেন, নিকেল, সীসা এবং ক্যাডমিয়ামের মতো বিপদজনক যৌগগুলি মিশে সেগুলি মূলত কার্সিনোজেনিক। গবেষণায় দেখা গেছে ফুসফুস, পেট এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ক্যান্সারদের সাথে মূলত এই যৌগগুলি যুক্ত। সক্রিয় এবং প্যাসিভ দুই ধূমপান থেকে তাই বিরত থাকাই শ্বাসযন্ত্রের জন্য শ্রেয়।
সুতরাং, ব্রেকফাস্ট না খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া ও দেরীতে ডিনার সেরে ঘুমাতে যাওয়া হৃদযন্ত্রের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আজকের আলোচনা এইটুকুই। সুস্থ থাকুন ও ভাল থাকুন।