ডিসেম্বর 24, 2024

বিকাশিত, উন্নত শহুরে জেলায় উচ্চ এইচআইভি প্রাদুর্ভাব আছে: গবেষণা তথ্য

Developed-urbanized-districts-1
Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন

সমগ্র বিশ্বজুড়ে যে দুই মিলিয়ন HIV সংক্রামিত ব্যক্তি আছে, ভারতেই তার এক তৃতীয়াংশ HIV সংক্রামিত ব্যক্তি উপস্থিত। যদিও জাতীয় স্তরের তথ্য অনুযায়ী এই হার ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে; তবে এই লেখচিত্র বিভিন্ন রাজ্যের ও জেলার ক্ষেত্রে এক নয়।

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই মহামারীর অন্তর্নিহিত কারণগুলি অঞ্চল থেকে অঞ্চলেও পরিবর্তিত হতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য অঞ্চলের নির্দিষ্ট কৌশলগুলি প্রয়োজন হতে পারে।

দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের 63 টি জেলায় HIV উচ্চ-প্রাদুর্ভাব রয়েছে বলে গবেষণায় জানা গেছে। তাদের মধ্যে আবার উন্নততর, শহুরে জেলাগুলি যেখানে জনসংখ্যার চাপ বেশি, আর্থ-সামাজিক অবস্থান বেশ উপরের দিকে; সেই শহরগুলিতেই HIV প্রাদুর্ভাবের মাত্রা বেশি। যে জেলগুলিতে দ্রুত শহুরীকরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দ্রুত হারে হচ্ছে; HIV নিয়ন্ত্রণ কৌশল পরিকল্পনা করার সময় সেই সব জেলাগুলিকেই ফোকাস করা উচিৎ বলে গবেষকগণ পরামর্শ দিয়েছেন।

মহামারী জন্য দায়ী কারণ জটিল এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য বৈষম্যমূলক হতে পারে, জাতীয়ভাবে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণের জন্য একক পদ্ধতির ব্যবহার সীমিত। অতএব, নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী আরো কার্যকর করার জন্য জেলা পর্যায়ে প্রাদুর্ভাব এবং রোগের কারণগুলির জন্য ক্রমাগত নজরদারি প্রয়োজন।

মহামারী জন্য দায়ী কারণগুলি বেশ জটিল এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য কারনগুলো ভিন্ন ভিন্ন। আর এই জন্যই সবজায়গায় জন্য HIV নিয়ন্ত্রণের জন্য একক পদ্ধতির ব্যবহার অত‍্যন্ত সীমিত। অতএব, নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী আরো কার্যকর করার জন্য জেলা পর্যায়ে HIV এর প্রাদুর্ভাব এবং রোগের কারণগুলির জন্য ক্রমাগত নজরদারি প্রয়োজন।

গবেষকরা ২011 সালের আদমশুমারি, এইচআইভি সেন্টিনেল সার্ভিলেন্স প্রোগ্রাম এবং ডিস্ট্রিক্ট লেভেল হাউস হোল্ড সার্ভে – III এর তথ্য ব্যবহার করেছেন এবং 2007 থেকে 2012 সাল পর্যন্ত 640 টি জেলার বিশ্লেষণের প্রবণতা বিশ্লেষণ করেছেন। তারা HIV সাথে সম্পর্কযুক্ত চৌদ্দটি কারণকে বৈজ্ঞানিকরা খুঁজে পেয়েছেন। এগুলি হল – জনসংখ্যা ; সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণ; HIV এবং যৌন সংক্রমণ, সচেতনতার অভাব এবং কন্ডম ব্যবহার না করা।

বিশ্লেষণ সবচেয়ে অবাক করা যে তথ্য উঠে এসেছে সেটা হল :-
দেখা গেছে যে সব জায়গায় শিক্ষার হার বেশি, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত, এবং প্রজননে‌ সক্ষম অবিবাহিত জনসংখ্যার চাপ বেশি সেই সব জেলাগুলিতে HIV বিস্তারের হার বেশি ছিল।

এই প্রবণতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে গবেষকরা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছেন; যে সব শিক্ষিত ব্যক্তিরা আরও ভাল সুযোগের জন্য শহুরে এলাকায় যান এবং পরিবার থেকে আলাদা থাকেন। আর্থিক ভাবে যারা স্বনির্ভর, তাদের বিয়ের আগে একাধিক যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার প্রবনতা ও দেখা যায়, এদের ক্ষেত্রে HIVতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে হ্যাঁ; গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে দক্ষিণ ভারতে ই যেহেতু সর্ব-প্রথম HIV আক্রান্ত হয়েছিল, তাই সময়ের সাথে এখানে এই মহামারী ক্রমশ বৃদ্ধি হয়েছে।
তাই অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানে সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচক তেমনভাবে কার্যকরী নয়।

“আমাদের গবেষণা HIV প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী কারণগুলির মধ্যে আন্তঃঞ্চলীয় বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছে। তবে হ্যাঁ; জাতীয় পর্যায়ে HIV / এইডস নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সাধারণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল বাস্তবায়নের সাথে সাথেই; অন‍্যান‍্য অনেক আঞ্চলের ক্ষেত্রে অন্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে” – জানিয়েছেন ডা: রজনীশ জোশী। ডাঃ জোশী ভারতীয় সেনাবাহিনীতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করছেন। তিনি এই পুনার -ICMR এর জাতীয় এইডস গবেষণা ইনস্টিটিউটে হয়ে যাওয়া এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে যে কনডমের ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞান ও ব্যবহার এইচআইভি সংক্রমণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যাইহোক, শিক্ষার প্রসার যেসব জায়গায় বেশী এবং HIV / এইডস নিয়ন্ত্রণে কন্ডোম ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বেশ বেশী, সেসব জায়গায় HIV ছড়িয়ে পড়ার হার অনেক কম।

তবে হ্যাঁ শুধুমাত্র HIV নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করা যায় সেই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা মুলক এবং উচ্চ শিক্ষার হার বেশি থাকলে কিন্তু HIV নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এই সমস্ত সচেতনতামূলক শিক্ষার সাথে HIV নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিগুলি যখন একসাথে মিলেমিশে দৈনিক জীবনে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে, তখনই এই মহামারীর প্রকোপ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ডাঃ জোশী বলেছেন “এই গবেষণা ফলাফল নিয়ে জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (NACO) থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। যাতে এর সঠিক ও কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি খুঁজে বের করতে পারা যায়।”

এই গবেষণাটির সহকারী পরিচালক ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ্ মেডিক্যাল রিসার্চের এক সদস্য ডাঃ সঞ্জয় এম মেহেদালে। গবেষণাপত্রটি Plos One শীর্ষক এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।