ডিসেম্বর 24, 2024

গঙ্গার জলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসটেন্স ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা

pexels-photo-1485894
Reading Time: 2 minutes

কলমে-অদিতি জৈন, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত,
নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রয়াস মার্চ 29, 2019

ক্রমবর্ধমান অ‍্যান্টিবায়োটিক রেসিসটেন্স ব‍্যাকটেরিয়ার সংখ্যা পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বর্তমানে গঙ্গা নদীর জলেও এই ধরনের ব‍্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির খোঁজ পাওয়া গেল; যারা বাজারে প্রচলিত বহু চেনাজানা অ‍্যান্টিবায়োটিকেই রেসিসটেন্ট।

অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ বাড়ির বর্জ্য, ঔষুধ কারখানা, হাসপাতাল, হাঁস-মুরগি প্রতিপালন স্থান, শিল্পে-কারখানার উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে নদীর জলে পৌঁছায়। এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলিই জলে উপস্থিত জীবাণুগুলিকে বিবর্তিত করে, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধী করে তোলে। এগুলিই আবার সংখ্যাগুলিতে বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। এই ধরণের প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া যদি ‌কোনো‌ ব‍্যক্তিকে সংক্রমন করে, তাহলে তার চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে; কারন‌ কোনো ওষুধই তার কাজ করে না।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি নতুন গবেষণায়, গঙ্গা নদীতে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ধাতুর প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতির খোঁজ পেয়েছেন। গবেষকরা পাঁচটি নদীর তীরবর্তী এলাকার থেকে জল ও পলির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন; এগুলো হল – অ্সি, ভদ্রাইন, হরিশচন্দ্র, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ও রাজঘাট। এই এলাকাগুলি থেকে তাঁরা যে ব‍্যক্টেরিয়া সংগ্রহ করেছিলেন, সেই ব‍্যক্টেরিয়ার DNA সংগ্রহ করে, সিকোয়েন্সিং করেন।

অ্যান্টিবায়োটিক এবং মেটাল প্রতিরোধী ব‍্যক্টেরিয়ার জিনের বিদ্যমান সিকোয়েন্সের সাথে, আগে ব‍্যক্টেরিয়ার দেহে যে জিন উপস্থিত ছিল তা তুলনা করেন ও তথ্য বিশ্লেষণ করেন।
এখান থেকে পাওয়া যায় যে স‍্যাম্পেলে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলি বিটা-ল্যাক্টাম, এফ্লামাইসিন ও অন্যান্য নানা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। আর নদীর জলে এদের সংখ্যাও প্রচুর। ব্যাকটেরিয়াগু সাধারণভাবে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক গুলিতেও রেসিস্টেন্ট।

যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ধাতুতে রেজিস্টেন্ট, তাদের জিন সাধারণত রূপা, তামা, লোহা,ক্রোমিয়াম,আর্সেনিক ধাতুতে রেজিস্টেন্ট। গবেষকরা, জানিয়েছেন জলে উপস্থিত অ‍্যান্টিবায়োটিক এবং ধাতুগুলিই, ব‍্যক্টেরিয়ার দেহে ঔষধ প্রতিরোধী জিনের উত্থানের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের, মলিকিউলার ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সুরেশ কুমার দূবে বলেছেন, “বারাণসী অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গঙ্গার যে অংশটি প্রবাহিত হয়েছে সেখান বিভিন্ন উৎস থেকে দৈনিক প্রায় 309.8 মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পদার্থ গিয়ে মেশে। যা গঙ্গার জলে অ‍্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট ব‍্যাক্টেরিয়ারর সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।”

তিনি আরো বলেন, এই গবেষণার ফলাফল, রাজ‍্য এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও গার্হস্থ্য, হাসপাতাল ও শিল্প নির্গত বর্জ্য পদার্থগুলির মাধ্যমে নদীতে অ্যান্টিবায়োটিক এবং বিষাক্ত ধাতুর অনুপ্রবেশ বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রীয় এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এই ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত মানের পরিকল্পনা নিতে পারবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ (DST) এবং সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বোর্ডের (SERB) আর্থিক সহায়তায়, ডাঃ ভাস্কর রেড্ডি এবং ডঃ সুরেশ কুমার দূবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণাটির ফলাফল ‘এনভায়রমেন্টাল পলিউশন’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।