কৃত্তিম ভাবে প্রজনন ঘটে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে জন্ম নিল ক্রমশ অবলুপ্ত হতে চলা একটি শৃঙ্গ গন্ডার

নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
মিয়ামি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার 23 এপ্রিল 2019 রাত 12:30 টায়, বিরল এবং অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল, কৃত্রিমভাবে ডিম্বাণুকে নিষেকের উপযোগী করে তুলে ( ইনডিউস্ড ওভ্যালুয়েশন), তার সাথে কৃত্রিমভাবে শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে জন্ম দেওয়া হল একটি একশৃঙ্গ বিশিষ্ট গন্ডারের। গর্ভধারণের পনের মাস পর, সাত বছর বয়সী ছোট্ট আকুতি, তার শিশুর জন্মদান করল।
এই মুহূর্তে পৃথিবীর বুকে 3500 এরও কম একশৃঙ্গযুক্ত গন্ডার বেঁচে রয়েছে, তাই এই জন্মটি একটি বিরল এবং ঐতিহাসিক ঘটনাই বটে। এটি দ্বিতীয়বারের মতো, মিয়ামি চিড়িয়াখানার কর্মীরা বন্দিদশাতে ভারতীয় গন্ডারের জন্মদানের রেকর্ড করতে পারল। এটি কৃত্রিম গর্ভাবস্থার প্রথম সফল জন্ম, তাই চিড়িয়াখানাটি এই সহায়তাপ্রাপ্ত প্রজনন প্রক্রিয়ার সাথে ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে পা দিলো তারা ।
আকুতি জন্ম জানুয়ারী 2012 এবং সান দিয়েগো চিড়িয়াখানায় সাফারি পার্কে সে বড়ো হয়েছে।
শিশু গন্ডারটি জন্মের পরে কী করছিল? আসুন জেনে নিই সেই গল্পটা:-
জন্মের পর মা ও শিশুর উভয়েই ভাল ছিল, চিন্তার কোনো কারণ থাকেনি। যাইহোক, তারপর চিড়িয়াখানা কর্মীরা নবজাতকের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। চিড়িয়াখানার কর্মীরা বাচ্চাদের উপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালানোর জন্য, মা থেকে নবজাতককে পৃথক করাই নিরাপদ হবে বলে মনে করে। কারন, প্রাথমিক মুহুর্তে বিশেষত প্রথমবারের মত কোনো জন্তু মা হয়, তখন তারা তাদের শিশুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়; কিন্তু আকুতি প্রথম থেকেই তার নবজাতকে ভালোভাবে চিনে নিয়েছে।
এই প্রজনন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নজিরবিহীন:-
কৃত্রিমভাবে পশুদের জনন সচরাচর করানো হয় না। কৃত্রিমভাবে ডিম্বাণুকে নিষেকের উপযোগী করে তুলে ( ইনডিউস্ড ওভ্যালুয়েশন), তার সাথে কৃত্রিমভাবে শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে জন্ম দেওয়া একটি অভূতপূর্ব কৃতিত্ব কারণ ভারতীয় এক শৃঙ্গাকার গন্ডার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ মুক্ত হিসেবে খুবই কম । কারন একেই তো সংখ্যা কম, তাতে আবার প্রাকৃতিক বাসস্থান মধ্যে থাকলে শিকারীর সহজেই তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলে। তাই ক্রমশ একশৃঙ্গযুক্ত গন্ডাররা ক্রমশ বিপদগ্রস্ত ও বিরল প্রজাতির প্রাণীর দলে নাম লিখিয়েছে।
যাইহোক আসল কথায় আসাযাক, শিশুটির আঠারো বছর বয়সী বাবা সুরু, সান ডিয়েগো চি সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করেছিল। কৃত্রিম ভাবে গর্ভাবতী করার আগে, চিড়িয়াখানার কর্মীরা আকুতি ও সূুরুর মধ্যে মিলন ঘটিয়ে প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।তখন, প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য দক্ষিণ পূর্ব চিড়িয়াখানা জোটের বিশেষজ্ঞদের সাহায্যের জন্য ডাকা হয়েছিল।
সিনসিনাটি চিড়িয়াখানা থেকে ডাঃ মনিকা স্টুপসের নেতৃত্বে একটি দল 2018 সালের জানুয়ারী মাসে কৃত্রিম গর্ভধারণের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। গন্ডারদের দুই থেকে তিন বছরের দীর্ঘ সময়ের পর একটি শিশুর জন্ম দেয়, সুতরাং আমরা বলতে পারি যে সেজার্ক (SEZARC) টিমের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর পদক্ষেপ ছিল, যা এই জন্মের সাথে মিয়ামি চিড়িয়াখানায় ইতিহাস তৈরী করেছে। এটি বিশ্ববুকে যে সব প্রানী প্রজাতির সংখ্যা খুব কম, অবলুপ্ত হবার পথে, সে সব প্রানীদের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করবে। SEZARC কিন্তু এটি ছাড়াও অন্যান্য অনেক বিরল বন্য প্রাণী ও জলজ প্রাণীদের, এইভাবেই সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছে।
ভারতীয় এক শৃঙ্গাকার গন্ডারের প্রজননের বিশেষত্ব কি?
বৃহত্তর এক-শৃঙ্গাকার গন্ডার প্রজাতি বর্তমানে IUCN এর রেড লিস্টের ভলনারেবল হিসাবে তালিকাভুক্ত। এর মানে হল যে এই প্রজাতি ভবিষ্যতে বিপন্ন হয়ে পড়বে, যদি না তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা করা হয়। তারা রাইনো পরিবারের সবচেয়ে বড় প্রাণী যার বৈজ্ঞানিক নাম Rhinoceros unicornis। এরা প্রায় 5.75 ফুট থেকে 6.5 ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বেড়ে ওঠে এবং 4,000-6,000 পাউন্ড ওজন। এই প্রাণীদের বিশেষত্ব তাদের নাকের উপর একটি 8.25 ইঞ্চি লম্বা শৃঙ্গের উপস্থিতি। আপনি তাদের উত্তর-পূর্ব ঘাসভূমি এবং ভারতের বন্যাভূমি এবং নেপালের তিরাই ঘাসভূমিতে দেখতে পেতে পারেন।
কেন ভারতীয় এক শৃঙ্গাকার Rhinoceros সংরক্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে?
একসময় ভারতীয় গন্ডারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, কিন্তু 20 শতকের সময়, শিকারীদের দ্বারা হত্যার কারণে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। একটি সময় ছিল যখন এই প্রাণী সংখ্যা 200 এরও নিচে নেমে গেছিলো, তারা প্রায় বিলুপ্তির হতে চলেছিল। ভারতে এবং নেপালের বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষের কঠোর নীতি ও প্রচেষ্টায় বর্তমান দিনের এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় 3500 এ উন্নীত হয়েছে। যাইহোক সরকার কিন্তু এখনো শিকারিদের হাত থেকে নিরীহ প্রাণী গুলোকে বাঁচাতে তীব্র সর্তকতা জারি রেখেছে, দুই দেশের বনরক্ষীবাহিনীর প্রতিদিন তাদের বাসস্থান উপর সতর্ক নজর রেখে চলেছে।